তাহিরপুর প্রতিনিধি

০৯ মার্চ, ২০২১ ১৫:১৭

তাহিরপুরে সংযোগ সড়ক ছাড়াই ৩২ লাখ টাকার সেতু

দুর্ভোগে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে শান্তিপুর নদীর উপর পাকা সেতু আছে। কিন্তু সেতুতে ওঠার জন্য নেই কোনো সংযোগ সড়ক। সেতুর দুই পাশে মাটি ভরাট করে সড়ক তৈরি না করায় সড়ক দিয়েই হেঁটেই চলাচল করতে হয় গ্রামবাসীকে। এ জন্য চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে আশপাশের তিনটি গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক বাসিন্দা।

তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বাদাঘাট-চানপুর সড়কে শান্তিপুর নদীর উপর ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণের পর সেতুর দুই পাশে মাটি ভরাট করা হয়নি। নির্মিত হয়নি সংযোগ সড়কও। তাই নদীর উপর ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে সেতুটি।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই পথে হেমন্তে নদীটি শুকিয়ে গেলে চলাচল করতে পারলেও বর্ষায় নদীটি ডুবে থাকার কারণে এ পথে যাতায়াত করতে গিয়ে পরতে হয় নানা মুখি সমস্যায়। তাদের অভিযোগ সেতু নির্মাণ হলেও ব্রিজ নির্মাণের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সামান্য মাটির কাজ করেনি সেতুর দুই পাশের এপ্রোচের। এছাড়াও অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পে ইউপি সদস্য আবু তাহের মিয়াও শতভাগ মাটির কাজ না করায় ও সংযোগ সড়ক না থাকায় নির্মাণের পর থেকে একদিনের জন্যও ব্যবহার করতে পারে নি।

তাহিরপুর উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭অর্থবছরে এলজিইডি (সুনামগঞ্জ) হিলিপ প্রকল্প ৩২ লক্ষাধিক টাকা নির্মাণ ব্যায়ে ব্রিজের দরপত্র আহবান করে। আহবানের পর নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি পায় সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার পারভেজ এন্টারপ্রাইজ।

জানা যায়, উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বাদাঘাট-চানপুর সড়কটি দিয়ে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের ৩০ গ্রামের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ চলাচল করে। কিন্তু এই সড়কের শান্তিপুর নদীতে সেতুতে উঠার জন্য দু-পাশে এপ্রোচে মাটি নেই। সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে কর্মসংস্থান কর্মসূচী প্রকল্প থেকে উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। শান্তিপুর বাজারের উত্তর পাশ হতে ব্রিজ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক প্রকল্পে ইউপি সদস্য আবু তাহের মিয়াকে প্রকল্প প্রধান করা হয়। প্রকল্প চেয়ারম্যান আবু তাহের প্রকল্পে শান্তিপুর বাজার হতে কাজ শুরু করে ব্রিজের উত্তর পাশে দু’শতাধিক ফিট দুর পর্যন্ত মাটির কাজ করান। অবশিষ্ট সংযোগ সড়কটি অসম্পূর্ণ রেখে দেয়। ফলে ২০১৮সালে বর্ষায় সেই মাটিও সড়ে যায়।

এই ব্যাপারে স্থানীয় মাসুক মিয়া জানান, নির্মাণের পর ব্রিজটি ব্যবহার উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় কোন পদক্ষেপ নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সর্ব সাধারণের জন্য সেতুটি চলাচলের উপযোগী করতে হলে প্রোটেকশন ওয়াল দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে। আর সেতুর সাথে সংযোগ সড়ক হলে এলাকার অনেক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হত।

চানপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাশিদ বলেন, সংযোগ সড়কটি স্থাপন করে ব্রিজটি চলাচলের উপযোগী করা হলে আমরা সহজেই চানপুর-বাদাঘাট সড়ক ব্যবহার করে তাহিরপুর সদরে যাতায়াত করতে পারতাম, জনদূর্ভোগ কমে আসত বর্ষার সময়ও।

তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ইকবাল করিব জানান, আমি একবারেই নতুন তাই এই সেতুটির বিষয়ে আমি অবগত নই, খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, এই ব্রীজের সাথে সড়কের সংযোগ না থাকায় ব্রিজটি কোন কাজেই আসছে না। ফলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে এই পথে চলাচলকারী সবাই।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, জনদুর্ভোগ লাগবে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত