তাহিরপুর প্রতিনিধি

১৩ জুন, ২০২১ ২২:১৫

দেড় বছর পর যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলন শুরু

প্রায় দেড় বছর পর সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলনের কাজ শুরু হয়েছে। তাই কর্মহীন শ্রমিকদের মুখে হাসি ফুটেছে।

রোববার (১৩ জুন) সকাল থেকে শ্রমিকদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল দেখা যায়। এইদিন শ্রমিকরা সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী বালু উত্তোলন করেন।

এর পূর্বে যাদুকাটা নদীতে বালি মহালের ইজারা বৈধ ঘোষণার পর শনিবার (১২ জুন)দুপুরে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর এমএম রেজউল করিম ও তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবিরসহ দায়িত্বশীলরা সরেজমিনে গিয়ে যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলনের জন্য সীমানা নির্ধারণ করে দেন।

নদীতে সীমানা নির্ধারণ শেষে শনিবার বেলা ২টায় যাদুকাটা নদীর তীরে তাৎক্ষণিকভাবে শ্রমিক সমাবেশ করেন ইজারাদারগণ। এ সময় শ্রমিকদের অবগতির জন্য সার্বিক বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ী জিয়াউল হক, বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন, বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আজাদ হোসাইন, সুনামগঞ্জ জেলা শ্রমিকলীগ সভাপতি সেলিম আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা সাত্তার আজাদ, উত্তর বড়দল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম প্রমুখ।

শ্রমিক নেতা হাকিকুল জানান, নদী ইজারা হওয়ায় শ্রমিকদের মাঝে আনন্দের শেষ নাই। কারণ এতদিন ওইসব শ্রমিকরা নদীতে কাজ করতে না পারায় খেয়ে না খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেছেন। এখন আর কাউকে না খেয়ে থাকতে হবে না। শ্রমিকরা অনেক খুশি কাজের সুযোগ পেয়ে। এই নদী সংশ্লিষ্ট দুটি উপজেলার(তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা)প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিকের জীবন জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম ছিল বালু উত্তোলন।

যাদুকাটা নদী ইজারাদারদের পক্ষে সুনামগঞ্জ জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি মো. সেলিম আহমদ জানান, সীমান্ত এলাকার মানুষের একমাত্র জীবন জীবিকার কর্মস্থল হলো যাদুকাটা নদী। সারা বছর কর্মহীন লাখো নারী পুরুষের আয় রোজগারের পথ বন্ধ ছিল। দেশের সর্বোচ্চ আদালত দরিদ্র ও অসহায় মানুষের কথা বিবেচনা করেই আমাদের পক্ষে রায় প্রদান করেছেন।

তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন (ভ‚মি) উপসহকারী কর্মকর্তা রাজর্ষি রায় বলেন, ১৪২৮ বাংলা সনে যাদুকাটা নদী বালু পাথর মহাল খাজনা,ভ্যাট ও ট্যাক্স সহ ১১কোটি টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যাদুকাটা নদীর ইজারা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে লাখো কর্মহীন শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

ইজারাদার সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৩মার্চ সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন কিছু প্রতিষ্ঠান। তম্মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মেসার্স নিলম এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স আজাদ হোসেন এন্টারপ্রাইজ ভ্যাট ট্যাক্সসহ প্রায় ১১কোটি টাকায় ইজারা প্রাপ্ত হন। ইজারাপ্রাপ্ত হওয়ার পর ইজারামূল্য টাকা সরকারী কোষাগারে পরিশোধ করলেও অপর একটি পক্ষ হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন।

রিটের আবেদন শুনানি শেষে জেলা প্রশাসনের দেয়া ইজারাবন্দোবস্ত এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়। ফলে ইজারাদারগণ স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগে আবেদন করেন এবং এলাকার লাখো শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার দাবি জানান। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে ৫ সদস্যের পূনাঙ্গ বেঞ্চ আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেন ৮ই জুন। ওইদিন উভয় পক্ষের কৌসূলীদের উপস্থিতিতে যুক্তি তর্ক উপস্থাপনের পর শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি জেলা প্রশাসনের দেয়া ইজারাবন্দোবস্ত বৈধ বলে ঘোষণা দেন।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত