নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ জুন, ২০২১ ১৩:৫৮

শ্যালিকার বিয়েতে যাওয়া নিয়ে ঝগড়া হয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে

গোয়ানইঘাটে ট্রিপল মার্ডার

পারিবারিক কলহের জের ধরে সিলেটের গোয়াইনঘাটে দুই শিশুসহ তাদের মাকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে ইসলাম নামে এক প্রতিবেশী জানান, গতকালের ঘটনায় আহত হিফজুরের শ্যালিকার বিয়েতে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে নিহত আলেয়া বেগমের সঙ্গে তিন-চারদিন আগেও ঝগড়া হয় হিফজুরের। এছাড়া হিফজুর পরিবারে কলহ প্রায়ই লেগে থাকতো। এমনকি গত দুই মাসে দুইবার সালিশি বৈঠক হয়েছে নিহতদের বাড়িতে।

তিনি জানিয়েছেন, হিফজুর পরিবারে কলহ ছিল। গত দুই মাসে দুবার সালিশ করেছেন তিনি। শুক্রবার হিফজুরের শ্যালিকার বিয়ে হওয়ার কথা। সেই বিয়েতে যাওয়া না যাওয়া নিয়েও তাদের মধ্যে সোমবার ঝগড়া হয়।

এর আগে গতকাল বুধবার (১৬ জুন) ভোরে সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলায় একই পরিবারের তিনজনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন- ফতেহপুরের বিন্নাকান্দি ফুলেরতল গ্রামের হিজবুর রহমানের স্ত্রী আলেমা বেগম (৩৫), ছেলে মিজান (৮) ও মেয়ে তানিশা (৫)।

ঘটনাস্থল ঘরের ভেতর বিছানা থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় গৃহকর্তা হিফজুর রহমানকে উদ্ধার করা হয়। পরে হিফজুর রহমানকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশি প্রহরায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এদিকে লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিদিন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ তিনটি একই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। গৃহবধূসহ তিনজনের ময়না তদন্ত চলছে। বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের ময়নাতদন্তের কার্যক্রম শুরু হয়।

গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আহাদ জানান, বুধবার ভোরে আত্মীয় ফয়েজ মিয়াকে মোবাইলে কল দিয়ে হিফজুর বলেন, আমি অসুস্থ হাসপাতালে নিতে হবে, টাকা-পয়সা নিয়ে দ্রুত চলে আসেন।

এ খবর পেয়ে তিনি (ফয়েজ) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ওই বাড়িতে পৌঁছান। সেখানে পৌঁছে ডাকাডাকির পরও দরজা না খোলায় প্রতিবেশীদের ডেকে আনেন তিনি (ফয়েজ)। পরে কাঁচাঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে একই বিছানায় চারজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় চারজনকেই মৃত মনে হয়।

স্থানীয়রা ছবি তুলতে গেলে ক্যামেরার ফ্লাশে চোখ খুলে আবারও চোখ বন্ধ করে ফেলেন হিফজুর। স্থানীয়রা তখন তার কাছে গিয়ে দেখেন শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক। তার শরীরে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন আছে। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে পুলিশি প্রহরায় তার চিকিৎসা চলছে। হিফজুর শরীরে গুরুতর কোনো আঘাত নেই। কিন্তু তার জ্ঞান ফেরেনি।

হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে সিলেটের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন, সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন, গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানান, প্রাথমিকভাবে পুলিশ দুটি বিষয় নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয় দুটি হলো— জমি ও পারিবারিক কলহ।

তবে ঘটনাস্থলের আলামত, হিফজুরের শরীরের আঘাত এবং ফোনকলের বিষয়গুলো দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে— পারিবারিক কলহের কারণেই হিফজুর স্ত্রী-সন্তানদের বঁটি দিয়ে কুপিয়ে ও জবাই করে খুন করেন। এর পর নিজের শরীরে কিছু আঘাত করে মৃতের মতো পড়ে থাকার ভান ধরেন।

স্থানীয় বিরোধের বিষয়েও বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে এখনও কাউকে আটক কিংবা গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। জ্ঞান ফিরলে হিফজুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তখন বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

সিলেটের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন বলেন, পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটন করার জন্য নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পুলিশ বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পুলিশ ধারণা করছে পারিবারিক বিরোধের জেরেই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত