তাহিরপুর প্রতিনিধি

১৮ জুন, ২০২১ ১৬:৫১

তাহিরপুরের তিন শিশুকে আশুগঞ্জে আটকে রাখার অভিযোগ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার তিন শিশুকে আশুগঞ্জের ধানিছ অটোমেটিক রাইছমিলে আটকে বাধ্য করা হচ্ছে ঝুকিপূর্ণ শিশুশ্রমে অভিযোগ তুলেছে শিশুদের পরিবার।

আটককৃত শিশুরা হচ্ছে- উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়নের বালিজুড়ী গ্রামের কামরুল ইসলামের পুত্র মুবাশ্বির (৭) এবং শফিকুল ইসলামের ২ পুত্র তালহা (৬) ও হৃদয় (৪)। এই শিশুদের উদ্ধারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে তাদের পরিবার।

অভিযুক্ত মিলটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে অবস্থিত। মেসার্স দানিস বয়লার রাইস মিলের প্রোপাইটর সিদ্দিকুর রহমানের পুত্র বাবুল মিয়া।

পারিবারিক সূত্রে যায়, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ থানার নয়াহালট গ্রামের কালা মিয়ার পুত্র কামাল মিয়া এলাকায় এসে দানিস অটোমেটিক রাইছমিলে কাজের সুযোগ আছে বললে এই শিশুদের পিতা তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরি গ্রামের কামরুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলামসহ তাদের স্ত্রী সন্তানদেরকে সেখানে ধান শুকানোর কাজে নিয়ে যায়। গত ঈদুল ফিতরের সময় পরিবার দুটি বাড়িতে আসতে চাইলে মিল কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে মিলের টাকা পাওনা আছে বলে বাড়িতে যেতে দেয়নি। এরপর থেকে বাড়ির কথা বললেই মিল কর্তৃপক্ষ পরিবার দুটির উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়।

একপর্যায়ে গত ৮জুন সকাল ৮টায় পিতামাতা তাদের সন্তানদেরকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে মিলের ম্যানাজার ও সর্দার তাদেরকে আটক করে ২পরিবারের ৩সন্তানদেরকে জিম্মি করে রেখে দেয়। পিতামাতা বাধ্য হয়ে সন্তানদেরকে জিম্মি রেখে কোন রকমে প্রাণ নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মিলের সর্দার কামাল মিয়া এই ৩শিশু ঐ মিলেই আছে স্বীকার করে বলেন, সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কারেন্টের বাজারের ফারুক মিয়াসহ তারা ৩টি পরিবার আমাদের মিলে আসে। তাদের ৩পরিবারকে অগ্রীম নন জুডিসিয়েল সাদা স্টাম্পে স্বাক্ষর ও ভোটার আইডি রেখে এক বছরের জন্য চুক্তি করে আমি ৩লাখ টাকা প্রদান করেছি। কিন্তু ৯মাসের ব্যবধানে তারা পালিয়ে যাওয়ায় আমরা বাধ্য হয়ে তাদেরকে আটকে রাখার চেষ্টা করি। একপর্যায়ে ৩শিশুকে রেখে তাদের অভিভাবকরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

আটককৃত সন্তানদের পিতা কামরুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম বলেন, মিলের মালিক আমাদের কাছে কোন টাকা পয়সা পান না। বরং আমরা তাদের মিলে কাজ করে ঠিকমতো খাবার ও পারিশ্রমিক পাইনি। কামাল আমাদেরকে প্রতিদিন ১২শত টাকা পারিশ্রমিক দেওয়ার কথা বলে ৩পরিবারকে খাটায়। কিন্তু কোন পারিশ্রমিক দেয়নি। আমাদেরকে পারিশ্রমিক পরিশোধ করাতো দূরের কথা ঈদুল ফিতরে বাড়িতে আসতে চেষ্টা করেছি কিন্তু বাড়িতে পর্যন্ত আসতে দেয়নি। অগ্রিম কোন টাকাপয়সা না দিয়েই আমাদের কাছ থেকে নন জুডিসিয়েল সাদা স্টাম্পে কামাল ও বাবুল মিয়া নাম দস্তখত নিয়েছে। আমরা কাজ করতে গিয়ে তাদের কাছে প্রতারিত হয়েছি।

আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কেউ যদি বাচ্চাগুলো নেয়ার জন্য আমার কাছে আসে তাহলে আমি এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রায়হান কবির বলেন, বিষয়টি জেনেছি এবং শিশুদের উদ্ধারের চেষ্টা করছি।

তাহিরপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন, মিল মালিক, দালাল ও মজুরদের মধ্যে যাই ঘটে থাকুক না কেন সেটা পরে দেখা যাবে। আমরা আপাতত শিশুগুলো উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করছি।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঘটনার ব্যাপারে কোন অভিযোগ পেলে আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিশু উদ্ধারে ব্যবস্থা নেবো।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান বলেন, শিশু উদ্ধারের ব্যাপারে অভিভাবকরা নিজের থানায় অভিযোগ দায়ের করলে এবং সংশ্লিষ্ট থানা আমাদেরকে জানালে আমরা শিশুদেরকে উদ্ধার করে দিতে পারি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত