নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ জুন, ২০২১ ২০:২৩

নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ

মৌলভীবাজারের বড়লেখা

নারীশিক্ষা একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন। ইনসাটে উঠে যাওয়া র‌্যাম্প ফ্লোরের নেট ফিনিসিং ও জং ধরা সিলিং ফ্যান।

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় চার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শুক্রবার (১৮ জুন) বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী এই চার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন শেষে কাজের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইউএনও নির্মাণাধীন ভবনগুলো ঘুরে দেখেন।

প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে পৌর শহরের নারীশিক্ষা একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বড়লেখা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছোটলিখা উচ্চ বিদ্যালয়, নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের চান্দ্রগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়।

এসময় ছোটলিখা উচ্চ বিদ্যালয়ে মাটিযুক্ত বালু দিয়ে প্লাস্টার কাজ করায় তাৎক্ষণিকভাবে কাজ বন্ধ করেন ইউএনও। বাকিগুলোর ত্রুটিপূর্ণ কাজ পরিবর্তন করতে বলেছেন।

পরিদর্শনে তার সাথে ছিলেন বড়লেখা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাওলাদার আজিজুল ইসলাম, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন প্রমুখ।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ছোটলেখা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণে ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, নারী শিক্ষা একাডেমি মাধ্যমকি বিদ্যালয়ের ৪ তলা একাডেমিক ভবনে ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, বড়লেখা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা ও চান্দ্রগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণে ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এই চার প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে।

বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপি একটি বিদ্যালয় ভবন উদ্বোধনের সময় সেই ভবনের কাজের মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। পরিবেশমন্ত্রী ইউএনওকে বিভিন্ন ভবনের কাজ পরিদর্শন করতে বলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার ইউএনও চারটি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ ঘুরে দেখেন। এ সময় এই চারটি ভবনের কাজে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহারের বিষয়টি তার চোখে পড়েছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নারীশিক্ষা একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের দরজায় অপরিণত কাঠ লাগানো হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নিম্নমানের সামগ্রী ও বাথরুমে নিম্নমানের ফিটিংস ব্যবহার করা হয়েছে। ভবনের নিচের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। র‌্যাম্প ফ্লোরের নেট ফিনিসিং উঠে যাচ্ছে। বড়লেখা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনে দুটি দরজায় নিম্নমানের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। ভবনের ছাদের প্লাস্টার উঠে গেছে। জানালায় নিম্নমানের পুডিং ব্যবহার করা হয়েছে। ছোটলিখা উচ্চবিদ্যালয়ে মাটিযুক্ত বালু দিয়ে প্লাস্টার কাজ করতে দেখা গেছে। এই ভবনের ছাদের প্লাস্টার উঠে গেছে। যথাযথভাবে কিউরিং করা হয়নি। চান্দগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ভবনের বিভিন্ন জায়গায় নিম্নমানের ইট ব্যবহার করতে দেখা গেছে। বালু ও সিমেন্টের মিশ্রন কোনো কোনো জায়গায় সঠিকভাবে হয়নি। ছোটলিখা উচ্চ বিদ্যালয়ে মাটিযুক্ত বালু দিয়ে প্লাস্টার কাজ করায় তাৎক্ষণিক কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চান্দ্রগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোর নিম্নমানের সামগ্রী পরিবর্তন করার কথা বলা হয়েছে।

নারীশিক্ষা একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনের ঠিকাদার রুসমত আলম বলেন, ‘ভবনের কাজ এখনো চলমান আছে। রং, সোলার ও বিদ্যুতের কাজ বাকি রয়েছে। ত্রুটি থাকলে সংশোধনের সুযোগ রয়েছে।’

ছোটলিখা উচ্চ বিদ্যালয় ভবনের ঠিকাদার প্রদীপ কুমার দেব বলেন, ‘বিল্ডিং এর বাহিরের অ্যাপ্রোনের কাজ চলছে। ভবনের মূলকাজ শেষ পর্যায়ে। সকল কাজ প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের দেখিয়ে করা হয়েছে। কাজে এরকম হওয়ার কথা না। কিউরিং এর বিষয়ে আমি সচেতন। পানি দেওয়ার লোক রাখা আছে। তারপরও আমি দেখব। যেহেতু কাজ চলমান। সংশোধন করা যাবে।’

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, ‘যেসব ত্রুটি পাওয়া গেছে এগুলো সংশোধনের জন্য চার প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারদের পূর্বেই বলা হয়েছে। তারা সংশোধন করে দেবেন বলেছেন। কিছু সংশোধন কার্যক্রম চলছে। ভবনের কাজ চলমান আছে। কাজ যথাযথ না হলে বিল দেওয়া হবে না।’

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, ‘চারটি ভবনের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও বেশকিছু ত্রুটি পাওয়া গেছে। একটি ভবনে তাৎক্ষণিক কাজ বন্ধ করা হয়েছে। অন্যগুলোতে নিম্নমানের সামগ্রী অপসারণ করতে বলা হয়েছে। দরপত্রের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী প্রত্যেক ভবনের যাবতীয় কাজ যথাযথ না হলে ঠিকাদারদের বিল না দিতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’


আপনার মন্তব্য

আলোচিত