সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ জুন, ২০২১ ২১:০৬

মামলা করে আসামিদের ভয়ে বাড়িছাড়া বাদীর পরিবার

সংবাদ সম্মেলনে কানাইঘাটের আলমগীর কবির

‘কানাইঘাটের আগতালুক গ্রামের নিরীহ মানুষজন সন্ত্রাসী হারুন রশিদ ও তার বাহিনীর হাতে জিম্মি হয়ে আছেন। তাদের অন্যায় বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দ করলেই তার উপর নেমে আসে অমানসিক নির্যাতন। তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমার চাচা কামাল উদ্দিনকে কুপিয়েছে হারুন বাহিনী। এঘটনায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলায় করা মামলার বাদী হেলাল আহমদকে কুপিয়েছে তারা। তারা বর্তমানে মৃত্যু সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। হারুন বাহিনীর ভয়ে সাধারণ মানুষজন তটস্থ থাকলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ কারণে তারা এলাকায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।’

সোমবার (২১ জুন) দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন কানাইঘাট উপজেলার ৮নং জিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের আগতালুক গ্রামের আলমগীর কবির।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২০১৭ সালে গ্রামের হাওরে ছোট ছোট মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে আগতালুক গ্রামের প্রবীণ মুরব্বি ফরিদ উদ্দিনকে কুপিয়ে আহত করে হারুন বাহিনী। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করা দীর্ঘদিন পর পুরনো আক্রোশে চলতি বছরের গত ২৭ মে আমার চাচা কামাল উদ্দিনকে (৪৮) খুন করার লক্ষ্যে আগতালুক গ্রামের রাস্তায় একই গ্রামের মৃত শাখাওয়াত হোসেনের ছেলে হারুন রশিদের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা উপুর্যপুরি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এঘটনায় কামাল উদ্দিনের ছোটভাই হেলাল আহমদ গত ৩০ মে বাদি হয়ে হারুনসহ ১৫ জনের নামোল্লেখ করে কানাইঘাট থানায় ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৫/ ৩২৬/৩০৭/১১৪/৩৪ ধারায় ২৮ নম্বর মামলা দায়ের করেন।

তিনি লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আসামী হারুন রশিদ ও আনছার উদ্দিনসহ অন্যান্য আসামীরা। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তারা বাদি হেলাল আহমদকে হুমকি দিতে তাকে। কিন্তু হেলাল আহমদ মামলা প্রত্যাহার না করায় ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১২ জুন রাত ৯টায় ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের সীমার বাজারের পশ্চিম পাশে মামলার বাদি হেলাল আহমদকে হত্যার উদ্দেশ্যে মামলার অন্যতম আসামি আগতালুক গ্রামের মৃত শাখাওয়াত হোসেনের ছেলে হারুন রশিদের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সদস্যরা মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে দা দিয়ে উপুর্যপুরি কুপিয়ে মৃত ভেবে ফেলে যায়। পরে হেলাল আহমদকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। কিন্তু তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ওই হাসপাতালে বেশ কয়েকদিন চিকিৎসা নেন। তিনি বর্তমানে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এঘটনায় গুরুতর আহত হেলাল আহমদ বাদি হয়ে চাচাতো ভাই শামসুদ্দিনের মাধ্যমে গত ১৬ জুন সন্ত্রাসী হারুন রশিদকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের বিরুদ্ধে কানাইঘাট থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলা দায়েরের পাঁচদিন অতিবাহিত হতে চললেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ একজন আসামীকেও এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করেনি। উল্টো আসামীরা মামলা তুলে না নিলে বাদীর পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। এ অবস্থায় আসামীদের দ্বারা আরও হামলার ভয়ে বাদীর পরিবারের সদস্যরা আজ ঘর-বাড়িছাড়া।

হত্যাসহ কুখ্যাত সন্ত্রাসী হারুনের বিরুদ্ধে থানায় কমপক্ষে ৬টি মামলা বিভিন্ন সময় হয়েছে জানিয়ে আলমগীর কবির বলেন, কিন্তু হারুন বাহিনীর হুমকিতে অনেকে ভয় পেয়ে পরবর্তীতে মামলা তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, অতীতেও কুখ্যাত হারুন বাহিনীর প্রধান হারুন রশিদ এলাকায় একাধিক নির্মম ও নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটিয়েছে। ৮০ দশকের শেষের দিকে পাশের আকুনি গ্রামের আব্দুল আহাদ ওরফে সিফাইকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে টাকার বিনিময়ে হত্যা করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব শুরু করে হারুন বাহিনী। এ হত্যামামলা হারুন দীর্ঘদিন জেলে ছিলো। কিন্তু একপর্যায়ে জামিনে মুক্ত হয়ে হারুন তার প্রভাব খাটিয়ে মামলা থেকে রেহাই পেয়ে যায়। এর কিছুদিন পর তার পাশের বাড়ির হাজি মন্তাজ আলি ওরফে মন্তাই হাজিকে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে হারুনের নেতৃত্বে তার বাহিনী হামলা করে রক্তাক্ত জখম করে। ওই হমালা থেকে মন্তাই হাজি বেঁচে গেলেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি পঙ্গুত্ব হয়ে বেঁচে ছিলেন। ওই ঘটনায় হারুন বাহিনীর বিরুদ্ধে মন্তাই হাজি মামলা করলে সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে বাধ্য হয়ে মামলা প্রত্যাহার করেন তিনি। ১৯৯৮ সালে মাঝতালুক গ্রামে মামা আব্দুর রকিবের পক্ষ নিয়ে তার মামার চাচাতো ভাইদের ওপর ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে হামলা করে হারুন। এছাড়া ২০০৩ সালে ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে হারুন তার বাহিনী নিয়ে ঝিংগাবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হক মাস্টারের বয়োবৃদ্ধ চারভাইকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালে মাঝতালুক গ্রামের আনোয়ার দর্জির মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করে হারুন বাহিনীর অন্যতম সদস্য তার চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ। ধর্ষণের প্রতিবাদ করলে হারুন বাহিনী ওই বাড়িতে গিয়ে আনোয়ার দর্জি ও তার ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে ভিক্টিম কানাইঘাট থানায় নারী নির্যাতন এবং হামলার ঘটনায় মামলা করেন। কিন্তু নিরীহ আনোয়ার দর্জি শেষ পর্যন্ত তার ভয়ে মামলাটি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন।

এ অবস্থায় ভয়ঙ্কর হারুন বাহিনীর হাত থেকে আমাদের পরিবারের সদস্যদের জানমাল রক্ষায় সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি, জেলার পুলিশ সুপারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আকুল আবেদন জানাই।

তিনি বলেন, আমাদের মতো এলাকার নিরীহ মানুষদেরও একটাই দাবি হারুন বাহিনীর প্রধান হারুনকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে তার ত্রাসের রাজত্ব থেকে এলাকার মানুষকে যেন মুক্তি দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আগতালুক গ্রামের বাসিন্দা প্রবীণ মুরব্বি ফরিদ উদ্দিন, খলিল আহমদ, আলতাব উদ্দিন, মো. শামসুদ্দিন, নিজাম উদ্দিন, লোকমান উদ্দিন, আজমল আলী, মো. আলম, আবু শহীদ, আব্দুর রহমান, শাহাব উদ্দিন ও মো. মহি উদ্দিন প্রমুখ।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত