নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ জুলাই, ২০২১ ২৩:০৬

লকডাউনে ঢাকা থেকে এলেন নেতা, করলেন জনসভা

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে দেশব্যাপী চলছে কঠোর বিধিনিষেধের নামে লকডাউন। এই সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে মানা সকলের। অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলে মামলা-জরিমানাও করা হচ্ছে।

তবে এমন সময়ে চলছে সিলেট-৩ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ, জনসভা। এমনকি লকডাউনের নির্দেশনা ভেঙে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে ঢাকা থেকে এসেছেন দলটির কেন্দ্রীয় দুই নেতা। বিশাল জনসভায় বক্তৃতা করেছেন তারা। এতে সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও অংশ নেন। কয়েকশ' মানুষের অংশগ্রহণে এই জনসভায় স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিলো না।

তবে প্রশাসন বলছে জনসভা নয়, উঠান বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিলো যা পরবর্তীতে সমাবেশে পরিণত হয়।

রোববার বিকালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের পক্ষে নির্বাচনী জনসভায় অংশ নিয়েছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। লকডাউনের মধ্যেই রোববার দুপুরে ঢাকা থেকে সিলেট আসেন তারা। এরপর বিকেলে সিলেট-৩ আসনের নির্বাচনী এলাকা বালাগঞ্জে ডিএম মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় অংশ নেন এই দুই নেতা। এই জনসভায় সিলেট আওয়ামী লীগের প্রায় সকল শীর্ষ নেতাই উপস্থিত ছিলেন। তবে লকডাউনের সময়ে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে তাদের সিলেটে আসা ও জনসভায় অংশ নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।

২৮ জুলাই সিলেট-৩ আসনের উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের জন্য ভোটের দিন নির্বাচনী এলাকায় লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। তবে ভোটের আগের দিনগুলোতে লকডাউনের নির্দেশনা বহাল রয়েছে। তবে এসব নির্দেশনা মানা হচ্ছে না নির্বাচনী এলাকায়।

রোববার বালাগঞ্জের ওই নির্বাচনী জনসভায় নানক-আহমদ হোসেন ছাড়াও অংশ নেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী।

এছাড়াও জনসভায় অংশ নেন মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাউর রহমান, হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম, কুলাউড়ার পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ শিপার উদ্দিন প্রমুখ।

জনসভার মঞ্চে আওয়ামী লীগ নেতাদের গাদাগাদি করে বসতে দেখা গেছে, এবং অধিকাংশ নেতার মুখে মাস্কও ছিল না। এছাড়াও উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের  সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যায়নি।

ওই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মফুর। তিনি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, সমাবেশে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করেছি। নিজেরা মাস্ক পরেছি। সমাবেশে আসা মানুষজনের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করেছি। হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ছিলো। তবে অনেক লোকের সমাগম হওয়ায় পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হয়নি।

লকডাউনের মধ্যে এমন সমাবেশের আয়োজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় তো প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালাবেনই। তাছাড়া নির্বাচনের কারণে এই এলাকায় বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিলও করা হয়েছে।

করোনার সময়ে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে এইধরনের জনসভা সম্পর্কে জানতে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এম এমদাদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হক বলেন, নির্বাচনী বিধিবিধান এ সরকারি বিধিনিষেধ লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না তা দেখভাল করার জন্য নির্বাচনী এলাকায় বেশ ক'জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। কোনো অনিয়ম পেলে তারা ব্যবস্থা নেবেন। তবে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি।

বালাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজমুল ইসলাম করোনাকালের স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে জনসভা সম্পর্কে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘তারা উঠান বৈঠকের আয়োজন করেছিলো। এটাকে সমাবেশ করে ফেলেছে। এ ব্যাপারে আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের কারণে আমাদেরও কিছু বিষয় এড়িয়ে যেতে হচ্ছে। লকডাউনের বিধিনিষেধ পালনে কঠোর হতে পারছি না। তারপরে সমাবেশস্থলে আমাদের একাধিক মোবাইল টিম ছিল। যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মানুষকে উৎসাহিত করেছি।’

কেবল আওয়ামী লীগের প্রার্থীই নন নির্বাচনে প্রচারণায় থাকা কোনো প্রার্থীই করোনাকালিন স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। শনিবার ও রোববার দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার ও বালাগঞ্জের গৌরিপুরে নির্বাচনী জনসভায়ও বিএনপি থেকে বহিস্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরীও স্বাস্থ্যবিধি মানেননি। তার জনসভায়ও শতাধিক মানুষ গাদাগাদি করে অংশ নিতে দেখা গেছে। যাদের অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। তবে শফি চৌধুরীর দাবি তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রচার চালাচ্ছেন।

একই দাবি করে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক বলেন, লকডাউনের বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমি প্রচারণা চালাচ্ছি। জনসমাগম এড়িয়ে চলছি। কিন্তু অন্য প্রার্থীরা তা মানছেন না। বিশেষত আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রতিদিনই নির্দেশনা অমান্য করে জনসমাগম করছেন। এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুফল মেলেনি। নির্বাচনে ডাব প্রতীকের প্রার্থী বাংলাদেশের কংগ্রেসের নেতা জুনায়েদ মুহাম্মদ মিয়া নির্বাচনী প্রচারণায় নেই।

উল্লেখ্য, এ বছরের ১১ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কয়েস। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন শুরুতে এই আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয় সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেনকে, যিনি রোববার রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ইসরাইল হোসেনের মৃত্যুর কারণও ওই করোনাভাইরাস। এরআগে এ মাসের শুরুতে উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ তিন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বদল করে নির্বাচন কমিশন, তাদের সকলেই করোনায় আক্রান্ত বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যদিও ইসির প্রজ্ঞাপনে বিষয়টির উল্লেখ ছিল না।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে লড়ছেন হাবিবুর রহমান হাবিব। জাতীয় পার্টির হয়ে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক। বিএনপি থেকে এই নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা বলা হলেও মোটরগাড়ি প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য (বর্তমানে বহিস্কৃত) এবং দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী। এছাড়াও বাংলাদেশের কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে ডাব প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন জুনায়েদ মুহাম্মদ মিয়া।

আগামী ২৮ জুলাই ইভিএম পদ্ধতিতে এই আসনে ভোট গ্রহণ হবে। মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার। ভোটকেন্দ্র ১৪৯টি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত