নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৬:৪৭

মানসিকতা পাল্টে দিয়েছে দুই চাকার যান

আজ বিশ্ব সাইক্লিং দিবস

২০১৩ সালে যখন সিলেট শহরে একটি মেয়ে মাথায় হেলমেট পড়ে সাইকেল চালাত তখন আশপাশ থেকে অনেক কটু কথা আসতো। কেউ বলতেন ‘ইগুর মাথাত সমস্যানি, ইলা রাস্তাত কেনে বারইছে’ কেউ বলতেন ‘ ইগুরেতো জালি বেত দিয়া বাইরানি দরকার’। এই কটূক্তি, বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আজ শতাধিক মেয়ে সিলেটে সাইক্লিং করছে। যারা একসময় কটূক্তি করতেন তারা তাদের ছেলে মেয়ে এখন নিয়মিত সাইক্লিং করছেন। এই আট বছরে সিলেটের জনপদের একটি বড় অংশের মানসিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে সাইক্লিং।

আজ ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব সাইক্লিং দিবস। সাইকেল চালানোর গুরুত্ব উপলব্ধি থেকে এর জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টিই সাইক্লিং দিবসের উদ্দেশ্য। শরীর, মন, পরিবেশ সব কিছু ভাল রাখতেই সব বয়সের মানুষের জন্য সাইক্লিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি ভ্রমণ প্রিয় মানুষদের খরচ অনেক কমিয়ে দিয়েছে সাইক্লিং। তাই সাইক্লিংয়ের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। সিলেটের বিভিন্ন জেলা উপজেলায়ও গড়ে উঠেছে সাইক্লিং ক্লাব।

সিলেট নগরী বরাবরই ছিল রক্ষণশীল। সামাজিক, সাংস্কৃতিক সব ক্ষেত্রেই যেখানে রক্ষণশীলতার পর্দায় মোড়া সেখানে সাইক্লিং করাটা ছিল অনেক চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। সাইক্লিং সেই চ্যালেঞ্জ এখন বিপ্লবে পরিণত হয়েছে। আর এই অসাধ্য সাধন করেছে সিলেটে সাইক্লিং কমিউনিটি। ২০১৩ সালে ড. ওরকাতুল জান্নাতের নেতৃত্বে প্রায় ৮ জন রাইডার নিয়ে যাত্রা শুরু করে সিলেটে সাইক্লিং কমিউনিটি। আজ ২০২১ সালে এই সংগঠনের রাইডে অংশগ্রহণ করেন প্রায় দুই হাজার রাইডার।

ফেসবুক গ্রুপ ভিত্তিক এই সংগঠনে এখন সদস্য আছেন ৩৫ হাজারের অধিক সদস্য। ৭ জন এডমিন ও ৮ জন মডারেটর মিলে পরিচালনা করছেন এই সাইক্লিং কমিউনিটি। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গৃহিনী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এই সংগঠনের রাইডে অংশগ্রহণ করেন। প্রতি শুক্রবারে কমিউনিটির সদস্যরা ‘ফ্রাইডে রাইড’ নামে একটি ইভেন্ট করেন। ফ্রাইডে রাইডে তারা সিলেটের আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা, পর্যটন স্পটে যান। এছাড়া বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সহস্রাধিক রাইডার নিয়ে সাইকেল র‌্যালি আয়োজন করা হয়।

সিলেটে সাইক্লিং কমিউনিটির এডমিন ড. ওরকাতুল জান্নাত। পেশায় ডাক্তার হলেও তার নেশা সাইক্লিং। তিনি জানান, সাইকেল একটি আদর্শ বাহন। আর সাইক্লিং হচ্ছে আমাদের শরীর, মন ভাল রাখার জন্য একটি আদর্শ কাজ। আমরা যখন সিলেটে সাইক্লিং শুরু করি তখন আমাদের নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করতেন। উপহাস করতেন , কটু কথা বলতেন। কিন্তু একসময় যারা এই কাজ গুলো করেছেন আজ তারা, তাদের ছেলে, মেয়ে আমাদের সাথে সাইক্লিং করেন।

ওরকাতুল জান্নাত বলেন, এই শহরে দল বেঁধে মেয়েরা সাইক্লিং করাটা ছিল স্বপ্নের মত। কারণ ২০১৩ সাথে যখন আমরা সিলেটে সাইক্লিং শুরু করি তখন গ্রুপে আমি একমাত্র মেয়ে ছিলাম। প্রায় ৬ মাস সাইক্লিং করার পর ধীরে ধীরে একজন দুজন করে মেয়েরা রাইডে আসতে শুরু করে। এখন সাইক্লিংয়ের বড় কোনো ইভেন্টে শতাধিক মেয়ে অংশগ্রহণ করে। অনেক ছেলে মেয়ে আমাদের ক্লাবে এসে সাইকেল চালানো শিখেছে।

তিনি বলেন, এই ৮ বছরে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হল আমরা সিলেটের মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন করতে পেরেছি। যারা একসময় সাইক্লিংকে খারাপ মনে করতে তারা এখন বুঝতে পেরেছেন ছেলে মেয়ে মাদক মুক্ত রাখতে, খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে সাইক্লিং কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কারণ একজন মাদকাসক্ত মানুষ কখনোই রাইড করার শক্তি পাবে না। অভিভাবকরা মনে আমার এই বিশ্বাসটুকু আনেতে পেরেছি যে সাইক্লিং করলে তাদের সন্তানরা মাদক মুক্ত থাকবে। খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত