হৃদয় শুভ, মৌলভীবাজার

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২২:১১

শ্রীমঙ্গলে আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন

শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের বিধি মোতাবেক প্রতীক পাওয়ার আগে প্রচারণা চালানো নিষিদ্ধ থাকলেও মনোনোয়ন পত্র দাখিলের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আচরণবিধি লঙ্ঘনে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। বাকি তিন প্রার্থীও থেমে নেই। প্রকাশ্যে না এলেও বাকি তিন প্রার্থী বিভিন্নভাবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও এ ব্যাপারে নিরব নির্বাচন কমিশন। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর ৪ প্রার্থী এ উপনির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দেন। এর হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ভানু লাল রায়, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রব, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আফজল হক ও প্রেমসাগর হাজরা।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ভানু লাল রায় নানা কৌশলে নির্বাচনী প্রচারনা চালাচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের নামে নৌকার জন্য ভোট চাইতে দেখা গেছে তাকে। এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সরকারি চাকুরীজীবীরাও অংশ নিচ্ছেন।

এরই মধ্যে তিনি শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় নিজের ছবি সম্বলিত স্টিকার, নৌকা মার্কার আলোকসজ্জ্বা করছেন।

শহরের মৌলভীবাজার সড়কের নাহার পেট্রল এর পাশে সেন মার্কেটে আলোকসজ্জ্বা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নৌকা। শহরের শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা, কার, মাইক্রোবাস ইত্যাদিতে প্রার্থীর ছবি সম্বলিত স্টিকার লাগানো রয়েছে। শুক্রবার ১০টার দিকে শহরের মৌলভীবাজার সড়কে মোটরসাইকেল শোডাউনও করতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে।

এছাড়া প্রায় প্রতিদিন ‘বিজয়ের মালা আনবো, ৭ তারিখ নৌকা মার্কায় ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে যাবো’ কথা সম্বলিত ব্যানার নিয়ে উপজেলা রাধানগর, রূপসপুর, সদর ইউনিয়ন, দক্ষিণ উত্তরসুর, আমানতপুর ইত্যাদি এলাকায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের নামে নৌকার জন্য ভোট চাইতে দেখা গেছে।

এদিকে নির্বাচনের বাকি তিন প্রার্থী জাতীয় পার্টির মিজানুর রব, স্বতন্ত্র পার্টি আফজল হক ও প্রেমসাগর হাজরা বড় অনুষ্ঠান না করলেও বিচ্ছিন্নভাবে উঠান বৈঠক, গণসংযোগ করে ভোট চাইছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আফজল হক বলেন, আমরা এখনো প্রচারণা শুরু করিনি। সময় আসলে আমরা প্রচারণায় যাবো। তবে নৌকার প্রার্থী সভা সমাবেশ সব কিছুই করছেন। আমরা নির্বাচন অফিসকে বার বার অভিযোগ দিয়েছি। কোন কাজ হয়নি। আমরা এই বিষয়ে খুবই হতাশ, মর্মাহত। এভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা করার ফলে শ্রীমঙ্গলের শান্তি নষ্ট হবে। আমরা চাই একটি সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন হোক।

তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই একটি ফ্রি ও ফেয়ার নির্বাচন হোক। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করছি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রেমসাগর হাজরা বলেন, আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় সবাই খুশি হবে। ভোটাররা যেন তাদের ভোট দিতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রশাসনকেই নিতে হবে।

আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ভানু লাল রায়ের কাছে এ বিষয়ে জানতে শনিবার বিকেল ৫টার দিকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তার এক ঘনিষ্ঠজন ফোন রিসিভ করে বলেন ‘ উনি একটি নির্বাচনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন, পরে কল দেন’।

এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদ হোসেন ইকবাল বলেন, আমার শরীর অসুস্থ। আচরনবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমরা আগামী ২০ সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হবে। সেখানে আমাদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি হবে, সেখান থেকে আমরা আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে। আচরনবিধি ভেঙে আগাম প্রচারণার বিষয়টি আমার জানা নেই।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা তপনজ্যোতি অসিম বলেন, তফসিল ঘোষণা করার পর এভাবে কেউ প্রচারণা শুরু করতে পারবে না। সেটা আচরনবিধি লঙ্ঘন হবে। আমাদের কাছে কোন প্রার্থী অভিযোগ দেয়নি। কোন প্রার্থী বা যে কেউ আমাদের অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।

উল্লেখ্য, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ছিলো মনোনোয়ন জমা দেওয়ার শেষদিন। আগামী ১৯ তারিখ এই উপজেলায় প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন, ২০ তারিখ প্রতীক বরাদ্ধ। আগামী ৭ অক্টোবর এই উপজেলায় উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত