নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ অক্টোবর, ২০২১ ১৩:৩৪

এক ব্যক্তিই লুট করেছেন সেই টিলার আড়াইশ’ কোটি টাকার পাথর

দুদকের মামলায় অভিযোগ

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহ আরেফিন টিলা থেকে অবৈধভাবে ২৫১ কোটি ৫৫ লাখ ৯০ হাজার টাকার পাথর লুটের অভিযোগ এনে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে এই টিলার কোয়ারির ইজারাদার মেসার্স বশির কোম্পানীর সত্ত্বাধিকারী  উপজেলার কাঠালবাড়ি এলাকার মোহাম্মদ আলীকে (৪০)।

বুধবার সিলেট জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ১৩৭ দশমিক ৫০ একর আয়তনের শাহ আরেফিন টিলার নিচে রয়েছে বড় বড় পাথর খন্ড। এসব পাথর উত্তোলন করতে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে সরকারি খাস খতিয়ানের বিশাল এই টিলা। লালচে, বাদামি ও আঠালো মাটির এই টিলার পুরোটা খুঁড়ে তৈরি করা হয়েছে অসংখ্য গর্তের। ফলে টিলার অস্থিত্বই এখন সঙ্কটে।

টিলার মাটি কেটে গর্ত খুঁড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে প্রায়ই মাটি ধসে এখানে শ্রমিকের মৃত্যু হয়। গত পাঁচ বছরে এই টিলা ধসে অন্তত ২৫ জন পাথর শ্রমিক মারা গেছেন।

শাহ আরেফিন টিলা ধ্বংস করে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাথর উত্তোলনের বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে উঠে আসে গণমাধ্যমে। ২০১৬ সালে এই টিলা থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়। তবু ঠেকানো যায়নি অবৈধ পাথর উত্তোলন।

এবার দুদকের পক্ষ থেকে প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকার পাথর লুটের অভিযোগে মামলা করা হলো।

মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দুদকের সিলেট জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন জানা্ন, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় মামলা করা হয়েছে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০০৪ সালের এপ্রিলে শাহ আরেফিন টিলার ৬১ একর ভ’মি পাথর উত্তোলনের জন্য ১৩ শর্তে মোহাম্মদ আলীকে ইজারা দেওয়া হয়। তবে ইজারা নেওয়ার পর শর্তভঙ্গ করে পাথর উত্তোলন শুরু করেন মোহাম্মদ আলী। এতে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে টিলা থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে খনিজ সম্পদ উন্নয় ব্যুরো।

তবে মোহাম্মদ আলী এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাথর উত্তোলন অব্যাহত রাখেন। এমনকি ৬১ একর ভ’মি ইজারা নিলেও তিনি টিলার পুরো ১৩৭ একর জায়গা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন শুরু করেন। পাথর উত্তোলনের পূর্বে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা নেননি ইজারাদার।

এসব অভিযোগ এনে মামলার এজাহারে বলা হয়, সার্বিক বিচারে অবৈধভাবে ৬২ লাখ, ৮৮ হাজার ৭৫০ ঘনফুট সরকারি পাথর অভেধভাবে উত্তোলন করে ২৫১ কোটি ৫৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা লুট করেছেন মোহাম্মদ আলী। যা দ-বিধি ৪২০/৪০৬ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এরআগে ২০১৭ সালে পাথর উত্তোলনকালে একসাথে ৫ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায়ও এই টিলায় অবৈধ কার্যক্রমের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। সেসময় জেলা প্রশাসনের তদন্তেও ইজারাদারে অনিয়মের প্রমাণ মেলে। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৬৫ একর ভ’মি লিজ নিয়ে ১৩৭ একরের পুরো টিলাটি ইজারাদার ধ্বংস করে দিয়েছেন।
সিলেটের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা হাকিম (এডিএম) আবু সাফায়াৎ মুহম্মদ শাহেদুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে টিলা ধ্বংসের সাথে জড়িত ৪৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। টিলা কেটে পাথর উত্তোলনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শাহ আরেফিন খানকা শরীফের খাদেম এবং ইজারাদার জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত