নিজস্ব প্রতিবেদক:

০৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৯:১৪

হাকালুকি হাওরে হিজল-করচ কেটে বোরো আবাদ

হাকালুকি হাওরের সাতবিলার উত্তর পাশের প্রায় ৫ একর জমি থেকে হিজল-করচসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ বৃক্ষ কেটে বোরো ধান চাষের জন্য জমি তৈরি করা হয়েছে।

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হাকালুকি হাওরের সরকারি খাসজমি থেকে হিজল-করচসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ বৃক্ষ কাটার ঘটনা ঘটেছে। হাওরের মালাম বিলের দক্ষিণ পাশের ও সাতবিলার উত্তর পাশের প্রায় ৫ একর জমি থেকে এই গাছ কাটার অভিযোগ ওঠেছে। গাছ কেটে ওই এলাকায় ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করে বোরো ধানের চারা রোপন করা হয়েছে। আবার কোথাও বোরো ধান চাষের জন্য ট্রাক্টর দিয়ে জমি তৈরি করার কাজ চলছে।

এ ঘটনায় গত বুধবার ৯ ব্যক্তির নামে বড়লেখা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন হাল্লা ফরেস্ট ক্যাম্পের কর্মকর্তা জুনিয়র ওয়াইল্ড লাইফ স্কাউট তপন চন্দ্র দেব নাথ।

অভিযুক্তরা হলেন- বড়লেখা উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের কাজিরবন্দ গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে পারভেজ আহমদ, মৃত মইয়ব আলীর ছেলে রিয়াজ আলী, মৃত ছোয়াব আলীর ছেলে নাজিম উদ্দিন, মৃত ছাদ উল্লার ছেলে গফুর উদ্দিন, মৃত দেলইর ছেলে হান্নান, ছত্তার আলীর ছেলে জয়নাল, ছালিয়া গ্রামের মৃত তছির আলীর ছেলে মালেক ও মৃত মইয়ব আলীর ছেলে সুরুজ আলী এবং কাজিরবন্দ গ্রামের মৃত আমরুজ আলীর ছেলে মোশাইদ আলী।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে হাকালুকি হাওরে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে হিজল-করচসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ বৃক্ষ রোপন করা হয়। এছাড়া এখানে প্রাকৃতিকভাবে বেশ কিছু গাছ বেড়ে ওঠেছে। গত ৩০ নভেম্বর হাওরের মালাম বিলের দক্ষিণ পাশের ও সাতবিলার উত্তর পাশের প্রায় ৫ একর জমি থেকে জলজবৃক্ষ কেটে ধান চাষের জন্য জমি তৈরি করার খবর পান হাল্লা ফরেস্ট ক্যাম্পের কর্মকর্তা। এর প্রেক্ষিতে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গাছ কেটে জমি তৈরি ও বোরো আবাদের প্রমাণ পেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার গাছ ধ্বংস করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রায় ৭ মাস আগে হাকালুকি হাওরের মালাম বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশের খাসজমি থেকেও কয়েক হাজার গাছ কাটার ঘটনা ঘটেছিল। এই ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালায় মামলা করা হয়। সাতজনকে আসামি করা হয়েছিল। ওই মামলাটি এখন তদন্ততাধীন রয়েছে।

এদিকে হাওরের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যেখানে গাছ লাগানোর কথা, সেখানে সরকারি খাসজমি থেকে গাছ কেটে অবৈধ দখলদাররা ধান চাষ করায় পরিবেশবিদসহ স্থানীয় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

হাল্লা ফরেস্ট ক্যাম্পের কর্মকর্তা জুনিয়র ওয়াইল্ড লাইফ স্কাউট তপন চন্দ্র দেব নাথ বলেন, ‘চলিত বছরের মে মাসে কয়েক হাজার জলজ বৃক্ষ ধ্বংস করে ট্রাক্টর দিয়ে জমি তৈরি করা হয়। সেই জায়গার অন্য পাশের প্রায় ৫ একর ভূমিতে এবার চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার গাছ উপড়াইয়া বোরো ধান লাগিয়েছে। বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে সরকারি ভূমি দখলকারদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে সন্ধ্যায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আগের ঘটনায় অভিযুক্ত কয়েকজন এবারও গাছ কাটায় জড়িত আছেন।’

বড়লেখা থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান বলেন, ‘লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। খাসজমির বনের ভেতরে জমি তৈরি করে বোরো ধানের চারা লাগানোর আলামত পাওয়া গেছে। এই বিষয়য়ে তদন্ত পূর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা যেহেতু পরিবেশ অধিদপ্তরের আওত্তাধীন তারা নিয়মিত মামলা করবেন। এর আগেও গাছ কাটার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছিল।’

পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বলেন, ‘গাছ কেটে জমি তৈরি ও বোরো আবাদের খবর পেয়েছি। শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাব। পরিদর্শন করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া পাহারাদারদের বলেছি ওই জায়গায় লাল ফ্ল্যাগ টানিয়ে রাখতে। যাতে আর কেউ এই এলাকায় ঢুকতে না পারে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত