রুমেল আহসান, ফেঞ্চুগঞ্জ

২২ জুন, ২০২২ ১৪:৪৯

ফেঞ্চুগঞ্জে পানিবন্দি অর্ধলক্ষ মানুষের মানবেতর জীবন

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার গয়াসী গ্রামের গৃহবধূ গীতা বিশ্বাস। বসতঘরে কোমর সমান পানি। বাঁশ দিয়ে ঘরের মধ্যে সাঁকো বানিয়ে কোনো রকমে চলাচল করছেন। রান্না ঘরে পানি। পানিতে ভাসমান একটি গাছের মধ্যে বসে ভাসমান চুলায় রান্না করছেন খাবার। বাতাসে নিভে যাচ্ছে চুলার আগুন। ভয়াবহ এই বন্যায় এভাবে গীতা বিশ্বাস টিকে থাকার সংগ্রাম করছেন।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে ফেঞ্চুগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে গ্রাম থেকে গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। চলাচলের জন্য নৌকায় এখন একমাত্র ভরসা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার ৫০ হাজার মানুষ। মানবেতর জীবনযাপন করছেন পানিবন্দি মানুষেরা।

জানা যায়, পাঁচদিন ধরে ফেঞ্চুগঞ্জে বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক। কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে প্লাবিত হয়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ সদরের বাজার বাজার সহ পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম। বাজারের ৯০ শতাংশ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যে সড়কে গাড়ি চলাচল করতো, সেই সড়কে বন্যায় এখন নৌকা চলাচল করছে। দোকানে দোকানে ঢুকে পড়েছে পানি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারের প্রায় ৭০০ দোকানের মধ্যে অন্তত ৪০০ দোকানে পানি ঢুকে পড়েছে। এ অবস্থায় বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে। যেসব দোকানে পানি একটু কম, কেবল সেখানে কিছুটা বেচাকেনা হচ্ছে।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ভেলকোনা, সুড়িকান্দি, সাইলকান্দি, বাঘমারা, গয়াসী, পূর্ব যুধিষ্ঠিপুর, পিঠাইটিকর, ছত্তিশ, চানপুর, উত্তর ইসলামপুর, গঙ্গাপুর, সুলতানপুর, বাদেদেউলী, ইলাশপুর, কটালপুর, বারোহাল, জেটিঘাট সহ অনেক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পানিবন্দি মানুষের কারো বসতঘরে হাঁটু সমান পানি, আবার কারো বসতঘরে কোমর সমান পানি। অনেকে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ ঘরের মেঝেতে ইট বিছিয়ে কোনো রকমে চলাচল করছেন। দেখা দিয়ে তীব্র বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট।

ছত্তিশ গ্রামের ইসমাইল আলী(৭৬) বলেন, ‘আমার জীবনে এই রকম বন্যা আমি দেখি নি। ১৯৮৮ সালে বন্যায় এরকম পানি হয়েছিল। এই বছর বন্যায় তখনকার চেয়ে বেশি পানি।’

গয়াসী গ্রামের গৌরী বিশ্বাস বলেন, ‘ঘরের মধ্যে কোমর সমান পানি। নৌকার মধ্যে বসবাস করছি। তিনদিন ধরে শুধু মুড়ি ও চিড়া খাচ্ছি।’

আশ্রয় কেন্দ্রে কেন যাচ্ছেন না, ‘এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আশ্রয় কেন্দ্রে এক সাথে অনেক মানুষ থাকেন। এক রুমে প্রচুর মানুষ একসাথে থাকতে হয়। তাছাড়া খাবারসহ নানা সমস্যা হয়। সেজন্য আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছি না।’

ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী লিটন আহমদ বলেন, আমার দোকানে বুক সমান পানি। বন্যার পানিতে দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ফেঞ্চুগঞ্জে বন্যার্ত মানুষের জন্য ১৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রায় ৮০০ পরিবার সেই আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান নিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার বিতরণ অব্যাহত আছে।

সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী গোলাম বারী বলেন, সিলেটে বৃষ্টি কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুরমা নদীর পানি কমছে। উজানে বৃষ্টি কম হলে ও ভারতের পানি ঢল না নামলে কিছুদিনের মধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানি কমবে।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সীমা শারমিন বলেন, বন্যার্ত মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষের খোঁজখবর সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে প্রশাসন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত