নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ জুন, ২০২২ ১৬:০৪

আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে আশ্রয়হীন

সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাও ইউনিয়নের জইকার কান্দিগ্রামের আক্কাস আলীর ঘর চুরমার করে দিয়েছে বানের পানি। ঘরের ভিটে ছাড়া আর কিছুরই অস্তিত্ব নেই। পানি কমায় বৃহস্পতিবার আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে এই অবস্থা দেখে ভেঙে পড়েন আক্কাস।

ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ঘরের চালের টিন কুড়াতে কুড়াতে তিনি বলেন, ‘পানি তো নামছে। কিন্তু আমাদের সব নিয়া গেছে পানি। পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নাই। মানুষের দেয়া সহায়তায় কোনো রকমে খেয়ে বেঁচে আছি। কিন্তু এখন ঘর মেরামত করব কী করে? আসবাবপত্র কেনারই বা টাকা পাব কোথায়?’

ঘর ভেঙে যাওয়ায় পরিবারের অন্য সদস্যদের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে আনতে পারছেন না বলে জানান তিনি।

একই দিন ঘরে ফিরেছেন গোয়াইনঘাটের নলজুড়ি এলাকার পাথরশ্রমিক রাসেল মিয়া। তার ঘরও ক্ষতিগ্রস্ত পানিতে। বলেন, ‘পানিতে ঘর তছনছ হয়ে গেছে। ঘরের ভেতরে হাঁটু সমান কাদা। এই ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকব কী করে?

‘পানির কারণে আয়-রোজগার বন্ধ। ভাত খাওয়ারই পয়সা নাই। ঘর মেরামত করব কী করে?’

বন্যার পানি কমায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন বন্যার্তরা। আক্কাস ও রাসেলের মতো অনেকেরই ঘরবাড়ি বানের পানিতে ভেঙে গেছে; নষ্ট হয়েছে আসবাবপত্র। নিম্ন আয়ের মানুষেরা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন।

গত ১৫ জুন থেকে চলতি বছরে তৃতীয় দফায় বন্যা দেখেছে সিলেট। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় তলিয়েছে সিলেটের প্রায় ৮০ শতাংশ। এখনও বেশির ভাগ এলাকা জলমগ্ন।

জেলা প্রশাসনের হিসাবে, চলমান বন্যায় জেলায় ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ৬৪৪ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। আর ১৭ হাজার ৯১৫টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ তারিখ পর্যন্ত সিলেট জেলার ১৩ উপজেলা ও সিলেট সিটি করপোরেশনে ৬১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৫২ হাজার ৮৭৮ জন আশ্রয় নেন। তবে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন ৯১ হাজার ৬২৩ জন।

সে হিসেবে, প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে চলে গেছেন।

সিলেট সদর উপজেলার মইয়ারচর এলাকার তাহেরা বেগমও বৃহস্পতিবার আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি বলেন, ‘পাঁচ দিন বাদাঘাট উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। বাড়ি ফিরে দেখি পানিতে বাথরুম ভেঙে গেছে। সব আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এইগুলা এখন মেরামত করাই সবচেয়ে বড় সমস্যা।‘

বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন সিলেটের নাট্যকর্মী রুবেল আহমদ কুয়াশা। তিনি বলেন, ‘আপাতত শুকনো খাবার বিতরণের চাইতে বন্যার্তদের পুনর্বাসনের জন্য ফান্ড গঠন করা দরকার।

‘মানুষ তার আপৎকালীন সঞ্চয় আর ত্রাণ দিয়ে বন্যা চলাকালীন সংকট পার করে দিতে পারবে। কিন্তু তার মূল বিপদ পানি নামার পরেই দেখা দেবে। কারণ টিনের চাল, ঘরের বেড়া পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরের আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাঁস-মুরগি ভেসে গেছে। পানি নামার পর এগুলো মেরামতে বিপদে পড়বে তারা।’

কুয়াশার আশঙ্কা, এই মানুষগুলো ঘর ও আসবাবপত্র মেরামতে মহাজন বা বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান থেকে হয়তো ঋণ নেবে। তখন তারা আরও বিপদে পড়বে।

ঘরহারা কিছু মানুষের ঘর নির্মাণে সহায়তার জন্য তহবিল গঠনের চেষ্টা করছেন জানিয়ে আরেক স্বেচ্ছাসেবী দেবজ্যোতি দাস বলেন, ‘আমরা বন্ধুরা মিলে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছি। খুব বেশি না পারলেও কিছু মানুষকে আমরা ঘর নির্মাণ করে দিতে চাই।’

জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘এখনও বেশির ভাগ জায়গায় পানি রয়ে গেছে। এখন আমরা ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছি। পানি পুরো নেমে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত