মো. শাহ আলম সুমন:

২৮ জুন, ২০২২ ২২:৩৮

স্বস্তি নেই আশ্রয়কেন্দ্রেও, দীর্ঘ হচ্ছে বাড়ি ফেরার প্রতীক্ষা

বন্যায় বাড়ি ঘর প্লাবিত। এক সপ্তাহ ধরে প্রাপ্তবয়স্ক দুই মেয়ে ও ছোট এক ছেলে নিয়ে নূরজাহান বেগম থাকছেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ভূকশীমইল স্কুল এন্ড কলেজের আশ্রয় কেন্দ্রে। তাদের বাড়ি ওই এলাকার মদনগৌরী গ্রামে।

নূরজাহান বলেন, বাড়িতে পানি ওঠে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠেছি। এখানে থাকা, খাওয়া গোসল সব করতে হয়। ত্রাণ নিয়ে অথবা অন্য কারণে যে কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে আসছেন। এখানে অনেক পরিবার থাকেন। তাদের আত্মীয় স্বজনও আসেন। আমার প্রাপ্তবয়স্ক দুটি মেয়েকে নিয়ে এখানে থাকতে অস্বস্তি লাগছে। কবে পানি নামবে আর কবে বাড়িতে ফিরবো।

এভাবেই তাদের মতো কুলাউড়ার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা অনেক মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুণছেন বাড়িতে ফেরার। বন্যার পানিতে বাড়িঘর তলিয়ে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি কমে গেলে সেগুলো কিভাবে সংস্কার করবেন এমন দুশ্চিন্তায়ও আছেন অনেকে। পানি কমছে না। প্রতিদিন আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তায় তাদের অপেক্ষার প্রহর কাটেছে বানভাসী মানুষের। আকাশ মেঘলা হলেই সেই আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। এই বুঝি বৃষ্টিতে পানি বাড়লো। সব হারিয়ে অনেকেই এখন নিঃস্ব।

উপজেলার হাওর তীরবর্তী উপজেলার ভূকশীমইল এলাকার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে গেলে সেখানে থাকা লোকজন এ কথাগুলো বলেন। দীর্ঘ তিন দশক পরে এমন দীর্ঘতর সময় পানিবন্দি উপজেলার লাখো মানুষ। গত ১৭ জুন থেকে হাওর তীরবর্তী এলাকাসহ ৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৫টি ওয়ার্ড পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়।

ওই আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা আরেক নারী মিনা বেগম বলেন, লোক এসে ডেকে নিয়ে যায়। একসাথে জড়ো করে ত্রাণের প্যাকেট হাতে ধরিয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত সবাই। খুব খারাপ লাগে তখন। ঘরে পানি, নয়তো এখান থেকে বাড়িতে চলে যেতাম। বাধ্য হয়ে থাকছি।

ভূকশীমইলের কাইরচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা জাহাঙ্গীর আলী বলেন, ২/৩ দিন ধরে পানি একটু কমলে আবার বৃ্ষ্টি শুরু হলে তখন আতঙ্কে থাকি। ৬ দিন ধরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বাড়ি ছাড়া। ঘরের ভিতর সবকিছু প্রায় পানির নিচে। দিনে নৌকা দিয়ে বাড়িতে গিয়ে দেখে আসি। রাতে যেতে পারিনা। ঘরের মালামাল চুরি ও নষ্ট হয়ে গেলে কিভাবে কি করবো এই চিন্তায় কাটছে।

সাদেকপুর এলাকার রাসেল আহমদ, মাহবুব আহমদ বলেন, ২০০৪ সালের পর এই প্রথম আমাদের এলাকায় শুধু রাস্তাঘাট নয় অধিকাংশ বাসার নিচ তলায় পানি ঢুকেছে। এক সপ্তাহ পেরিয়ে গলেও পানি কমেনি। উল্টো বৃষ্টি হলে পানি বাড়ছে। অনেকে আত্মীয় স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠেছেন। পৌর এলাকায় এরকম দীর্ঘ বন্যা আগে কখনো হয়নি।

টিটিডিসি এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক মিফতা বলেন, ঘরের ভিতর পানি প্রবেশ করলেও অনেকেই চুরির ভয়ে বাসা ছেড়ে যাচ্ছেন না। সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়েও জলাবদ্ধ ঘরে থাকছেন।

আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা একাধিক নারী পুরুষের সাথে আলাপকালে জানা যায়, সবাই এখন বাড়িতে ফিরবেন এমন প্রহর গুণছেন। এরকম দীর্ঘসময় বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ছাড়া থাকতে হয়নি তাদের। অনেকে বাড়ি ঘর চুরি ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। অনেকেই শুধুমাত্র পরিধানের কাপড় নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেছেন। পানি দ্রুত বাড়ার কারণে ঘরে থাকা অনেক মূলবান জিনিসপত্র নিরাপদে নিয়ে যেতে পারেননি। বাড়ি ফিরে এগুলি পাওয়া যাবে কি-না এখন অনেকেরই সন্দেহ রয়েছে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ‘উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার ২৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৭ শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যাদূর্গত ১৫ হাজার পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধিকরণ ওষুধ ও স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।’

‘‘জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান স্যার সরেজমিন এসে আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যাদূর্গত এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে। বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনসহ সকল সহায়তায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থাকবে। আমরা সার্বক্ষণিক বন্যাদূর্গতদের খোঁজ নিচ্ছি।’’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত