তাহিরপুর প্রতিনিধি

২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৮:১৬

বাঁধ নির্মানে ধীরগতি, ফসল নিয়ে উৎকণ্ঠার কৃষক

নির্ধারিত সময়ের ১ মাস ৭ দিন পার হলেও সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মান কাজ পুরুদমে শুরু হয়নি। এবারও ধীর গতির কারনে ছোট বড় ২৩টি হাওরে আড়াইশ' কোটি টাকার বোরো ধান নিয়ে উৎকণ্ঠাও রয়েছেন কৃষকরা। এবারও কমিটি গঠনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

চলতি বছরে প্রথম ধাপে ১১ জানুয়ারি ৩০টি পিআইসি অনুমোদন দিলেও কাজ শুরু করেছে মাত্র ১৫-১৬টি। দ্বিতীয় ধাপে ২১ জানুয়ারি ৮২টি ঘোষণা করেছে। এর একটিও কাজ শুরু হয়নি।

এদিকে, সঠিক সময়ে হাওর প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় তরিঘড়ি করে বাঁধের কাজ করতে গিয়ে প্রতিটি বাধেঁই ঝুকিঁপূর্ন ও দূর্বল হবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।

বৃষ্টির পানি ও সামন্য পাহাড়ী পানির ঢলের চাপে বাঁধ ভেঙ্গে পানি হাওরে প্রবেশ করবে এই আশংকায় কৃষক পরিবার দুশ্চিন্তায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের উপজেলা শাখার নেতা তোজাম্মিল হক নাসরুম। তিনি জানান, এবার হাওরের কোনো ক্ষতি হলে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে দায় দায়িত্ব নিতে হবে।

কাবিটা নীতিমালা-২০১৭ অনুসারে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রাক্কলন শেষ করে ১৫ ডিসেম্বর ফসলরক্ষায় বাঁধের কাজ শুরু এবং ২৮ফেব্রুয়ারি শেষ করার কথা। কিন্তু নিয়ম নীতির তোয়াক্কাই করছেন না উপজেলায় প্রকল্প বাস্থবায়ন কমিটি (পিআইসি) দায়িত্বশীলরা। এর ফলে ২৮ ফ্রেরুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার সরকারি নির্দেশ থাকলে তা আর হবে না বলে জানান টাংগুয়ার হাওর পাড়ের কৃষক শফিকুল ইসলাম।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তাহিরপুর উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী উপজেলা হাওররক্ষা বাঁধ বাস্থবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব শওকত উজ্জামান অবশ্য দাবি করেছেন, উপজেলা কমিটির সকলের উপস্থিতিতে প্রথম দফায় ৩০টি পিআইসির কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে তারা সবাই কাজ শুরু করেছেন। দ্বিতীয় দফায় ৮২টি পিআইসি অনুমোদন করে ঘোষণা করা হয়েছে আর নির্ধারিত সময় মতই বাধেঁর কাজ শেষ করা হবে। ২৩টি পিআইসির কাজ শুরু করেছে। বাকী গুলো দ্রুত শুরু হবে।

উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, উপজেলার বোয়ালমারা, সমসা, নজরখালি, মহালিয়া, শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর, লোভার হাওর, বলদার হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওরসহ ছোট বড় ২৩টি হাওরে গত বছরে(২০২১ সাল)৬৮টি পিআইসি গঠন করা হয়। এতে ৫৩কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ ও মেরামতে প্রকল্পে প্রাক্কলন ধরা হয়েছিল ১২কোটি ৮৩লাখ টাকা। তবে এবছর বর্ধিত গুরমার অনেক পিআইসি বাতিল করা হলেও এবার গত বছরের চেয়ে ৪৪টি পিআইসি বেশি অনুমোদন করা হয়েছে। এবার ১১২টি পিআইসি অনুমোদন করা হয়েছে। এবার ৮৪.৫০০ শত  কিলোমিটার বাঁধে বরাদ্দ ২০কোটি ৯৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাসান উদ দৌলা বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ১৭হাজার ৩৯৩হেক্টর জমিতে ইরি-বোর ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ৮০হাজার মেট্রিকটনের বেশি চাল উৎপাদন হবে। এর মূল্য ২শ ৪৪কোটি ৮০লাখ টাকার বেশী। এপর্যন্ত ১৩হাজার ৪শত ৬৫হেক্টর চাষ হয়েছে।

উপজেলার সবচেয়ে বড় শনি হাওরের কৃষক কাদির মিয়া, আলী আহমদ, জামাল উদ্দিনসহ কয়েকজন বলেন, নিজেদের আখের গোছানোর জন্যেই সময়মত বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয় নাই। দালালরা নাকি তদবির করে পিআইসি নিয়ে বিক্রি করে শুনলাম। আর আমরা কৃষকরা আছি দুশ্চিন্তায় বাঁধ নিয়ে।

উপজেলার দ্বিতীয় বৃহত্তর মাটিয়ান হাওরের কৃষক সালাম মিয়া জানান,সময় মত বাধঁ নির্মান কাজ শুরু না হওয়া,অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে প্রতি বছরই ৪০ভাগ কাজ হয় না। ফলে সামান্য পাহাড়ী ঢলের পানিতে বাঁধ গুলো ভেঙ্গে হাওরগুলো ডুবে যায়। এবারও বোরো ফসল হারানোর আত্নংকে আছি।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা জানান,আমি সরেজমিন বিভিন্ন হাওরের বাধেঁর কাজ পরির্দশনে যাচ্ছি এবং সকল পিআইসিদেরকে দ্রুত বাঁধের কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়েছি। আমি সবাইকে বলেছি সঠিক ভাবে দ্রুত কাজ শেষ করতে। যারা সরকারী নীতিমালা অমান্য করবে তাদের বিরোদ্ধেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুন সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওর পাড়ের কৃষকদের কথা চিন্তা করে বাঁধ রক্ষায় কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেন সেই টাকা অপচয় করা যাবে না। হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের ধায় যারা পিআইসি নিয়েছেন তাদেরকেই নিতে হবে। যারা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম করবে সে যেই হউক,যত বড় ক্ষমতাশালী হউক আর তার পিছনে থেকে যত বড় শক্তি জোগানদাতা হউক না কেন তাকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। বাঁধ নির্মাণে কৃষকদেরকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহবান জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত