নিজস্ব প্রতিবেদক

০৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:৫৩

জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে বিদ্যুৎ লাইনের নিচে নির্মাণ করা হয়েছিল ঘর

জুড়ীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ছয়জনের মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ী গ্রামে সরকারি পুকুরশ্রেণির জমি ভরাট করে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ লাইনের নিচে বসতঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছিল। ঝড়ে ওই বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিঁড়ে ঘরের ওপর পড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এক পরিবারের ছয়জনের মৃত্যু হয়।

দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা এ তথ্য জানিয়েছেন। গত শুক্রবার বিকেলে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ঊর্মি বিনতে সালাম বলেন, প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এতে বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছে। এর আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে একই ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) তদন্ত কমিটির সুপারিশে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) স্থানীয় তিনজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও একজন শিক্ষানবিশ লাইনম্যানকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবদুস সালাম চৌধুরী। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, পূর্ব গোয়ালবাড়ীতে ঘটনাস্থলের জমিটি সরকারি পুকুরশ্রেণির। রহমত আলী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি মাটি ভরাট করে অবৈধভাবে ওই জমি দখল করেন। বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত ফয়জুর রহমানকে পরিবার নিয়ে বসবাসের জন্য তিনি (রহমত) সেখানে ঘর নির্মাণ করে দেন। জমিটি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।

আবদুস সালাম চৌধুরী আরও বলেন, প্রতিবেদনে যেসব স্থানে বিদ্যুৎ লাইনের নিচে বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা রয়েছে, সেখানে আবরণযুক্ত তার ব্যবহার, প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎলাইন বন্ধ, বাড়িঘরসহ অন্যান্য স্থাপনার ওপর দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন না টানা, সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগের উপকেন্দ্রে ব্রেকারযন্ত্র স্থাপন, বিদ্যুৎলাইনের নিচে বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ না করার বিষয়ে লোকজনের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, পূর্ব গোয়ালবাড়ী গ্রামে রহমত আলীর জমিতে টিনের চালা ও বেড়া দেওয়া একটি ঘরে বাক্‌প্রতিবন্দ্বী দিনমজুর ফয়জুর রহমান (৫০) পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকতেন। ফয়জুর ভূমিহীন ছিলেন। তার ঘরের ওপর দিয়ে টানানো ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইন। ২৬ মার্চ ভোরে বজ্রপাতসহ ঝড়বৃষ্টিতে পাশের খুঁটি থেকে বিদ্যুৎ লাইনের একটি তার ছিঁড়ে ঘরটির ওপর পড়ে যায়। এতে ঘরটি বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে। পরিবারের সদস্যরা জীবন বাঁচাতে দরজা খুলে বাঁচার চেষ্টা চালান।

এ সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই ফয়জুর রহমান (৫০), তার স্ত্রী শিরি বেগম (৪৫), মেয়ে সামিয়া সুলতানা (১৪), সাবিনা আক্তার (১১) ও ছেলে সায়েম আহমদ (৭) মারা যান। গুরুতর দগ্ধ সোনিয়াকে প্রথমে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ওই দিন রাতে সে মারা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশের বেড়া দিয়ে রহমত আলীর দখল করা জমির সীমানা আলাদা করা। দুর্ঘটনার পর থেকে ফয়জুর রহমানের ঘরটি ফাঁকা পড়ে রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আত্তর আলী, আইয়ুব আলী, মইন উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন বলেন, রহমত আলী বছরখানেক আগে মারা গেছেন। তার তিন ছেলের দুজন যুক্তরাষ্ট্র ও একজন বাড়িতে থাকেন। সরকারি জমিটি দীর্ঘদিন ধরে রহমত আলীর দখলে। দুই-তিন বছর আগে উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প করার জন্য জমিটি পরিদর্শন করে যান। এরপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে সরকারি জমির পাশে রহমতের মালিকানাধীন কিছু জমিও রয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী বলেন, বিদ্যুৎ লাইন থেকে নিরাপদ দূরত্বে ঘর বানানো দরকার ছিল। এটা করলে হয়তো এ দুর্ঘটনা ঘটত না।

সরকারি জমি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে রহমত আলীর ছোট ছেলে সোহান মুন্তাসির বলেন, জীবদ্দশায় তার বাবা জমি-সংক্রান্ত বিষয় দেখভাল করতেন। তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানেন না। -খবর প্রথম আলোর

আপনার মন্তব্য

আলোচিত