হামিদুর রহমান, মাধবপুর

০৯ এপ্রিল, ২০২৪ ১১:১৮

ফোনেই মিলছে মরণনেশা, মাদকের কারণে বাড়ছে চুরি-ছিনতাই

মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। সরকারের এই জিরো টলারেন্স থাকার পরেও হাত বাড়ালেই মিলছে সর্বনাশা ইয়াবাসহ সকল মাদকদ্রব্য। আবার ঈদকে সামনে রেখে এই মাদক যেন আরও সহজলভ্য হয়েছে।

হবিগঞ্জের মাধবপুরের যুবসমাজের বড় একটি অংশ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। শুধু মাদকের টাকা জোগাড় করতে নেশায় আসক্ত এসব যুবক জড়িয়ে পড়ছে চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। সম্প্রতি চুরি, ছিনতাই, হামলাসহ নানা ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার মূলে রয়েছে মাদক ব্যবসা ও সেবন। গ্রামগঞ্জে প্রায়ই ঘটছে দিনদুপুরে চুরির ঘটনা। দিন দিন অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ছাড়াও সমাজের উঠতি বয়সের অনেকে নেশার টাকা জোগাড় করতে না পেরে চুরি ছিনতাইয়ের মত পথ বেছে নিচ্ছে। সবমিলিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছেন অভিভাবকরা। তাদের অনেকেই নেশায় আসক্ত সন্তানদের সুপথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। মাঝে মধ্যে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি এবং পুলিশ নামমাত্র মাদক আটক করলেও এর সঙ্গে জড়িতরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাহিরে।

এলাকায় হঠাৎ মাদক উদ্ধার এবং মাদক ব্যবসায়ী আটক না হওয়ায় নিয়ে এখানকার সচেতন মানুষ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ মাদক উদ্ধার না হওয়া এবং মাদক ব্যবসায়ী আটক না হওয়ার কারণে কি সীমান্ত এলাকায় মাদক চোরাচালান বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলতে পারব? উল্টো সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা বলেন, কাশিমনগর পুলিশ ফাঁড়ির আইসিসহ বিভিন্ন পদের রদবদলের সুযোগে মাদক ব্যবসায়ীরা আরও সরব হয়ে উঠেছে ।

চৌমুহনী, ধর্মঘর সীমান্তের ওপার থেকে ঈদকে সামনে রেখে এখন বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে ওপার থেকে মদ, গাঁজা, ইয়াবা মাদক ব্যবসায়ীরা নিয়ে আসছে কিন্তু কাশিমনগর পুলিশ ফাঁড়ি এবং বিজিবির মাদক রোধে কোন রকম পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।

কাশিমনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আ. রহিম জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। তবে অঞ্চল থেকে মাদক নির্মূল করতে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাদকের সঙ্গে পুলিশের কোন আপোষ নেই।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সন্ধ্যা নামলেই মাদকের আড্ডা বসে সীমান্তবর্তী মাধবপুর উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের ধর্মঘর ইউনিয়নের শিয়ালউড়ি, আলীনগর, দেবপুর, কালিকাপুর, হরষপুরস্টেশন, বিজয়নগরসহ চৌমুহনী ইউনিয়নের তুলশীপুর, রামনগর, হরিণখোলা, কমলপুর, নয়নপু, বড়জ্বালা বাজার, চৌমুহনী বাজার, বহরা ইউনিয়নের শ্রীধরপুর, মনতলা স্টেশন বাজার, দূর্গানগর, শাহজাহানপুরের লোহাইদ, বনগাঁও, চা বাগানগুলোসহ বিভিন্ন এলাকায়। একাধিক মাদক কারবারি প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা করছে। অতীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাদকদ্রব্য বিক্রির স্পটগুলোতে মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে মাদক কারবারিদের আটক করলেও সাক্ষীর অভাবে আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। এরপর আবারও জড়িয়ে পড়ে মাদক ব্যবসায়। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা কৌশলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তরুণদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের মরণনেশা পৌঁছে দিচ্ছে। বর্তমানে অজানা কারণে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে মাদকের ব্যাপারে। সীমান্তবর্তী ইউনিয়নগুলোতে নামকাওয়াস্তে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আটক হচ্ছে না উল্লেখযোগ্য মাদকের কোন চালান।

মাদক সেবন করে উঠতি বয়সী কিশোররা বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত হচ্ছে, কিশোর গ্যাং নামে আত্মপ্রকাশ ঘটছে অপরাধী চক্রের। কিছু অসাধু ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিও সক্রিয়ভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ কারণে তারা থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। এসব মাদক কারবারি ও সেবনকারী রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা ও সেবন করে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য কথা হয় মাধবপুর থানার ওসি রাকিবুল ইসলাম খান এর সঙ্গে। তিনি বলেন, মাদক নির্মূলে আমার থানার প্রতিটি অফিসার কাজ করে যাচ্ছেন। কোনোভাবেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জরুরী ভিত্তিতে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। মাদক সিন্ডিকেট শিকড় থেকে উপড়ে ফেলতে হবে। তা না হলে সমাজে এই মাদকের ভয়াল থাবা থেকে কেউই নিরাপদ নয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীরা রয়েছে বহাল তবিয়তে। উঠতি বয়সী তরুণরা ধ্বংস হচ্ছে। গড়ে উঠছে ছোট-বড় কিশোর গ্যাং। অভিভাবক মহল রয়েছে চরম বিপাকে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে অনেকে চুরি-ছিনতাই করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, আমার ছোট ছেলে রহিম (ছদ্মনাম) মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। তাকে নিয়ে আমি ও আমার স্ত্রী খুবই বিপদে আছি। ঘরের একটা জিনিসও নেই। ওই ছেলে সব বিক্রি করে ফেলেছে। কিছু বলতে গেলেই তেড়ে আসে মারপিট করতে।

সরাইল-২৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ আরমান আরিফ বলেন, এই এলাকায় মাদক প্রতিরোধে বিজিবি জিরো টলারেন্স। ঈদকে সামনে রেখে যাতে মাদক ব্যবসায়ীরা ওপার থেকে যাতে এপারে মাদকদ্রব্য না আনতে পারে সে জন্য সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত টহলের পাশাপাশি বিজিবির বিশেষ টিম মোতায়েন রয়েছে।

তিনি বলেন, মাদকের সঙ্গে বিজিবির কোন সদস্য জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত