শাকিলা ববি

১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ১৫:৪৭

সাগরদিঘিরপাড়ের ওয়াকওয়ে নিয়ে উভয়সঙ্কটে সিসিক!

সিলেট নগরীর সাগরদিঘিরপাড়ের ওয়াকওয়ের পাশে সড়কে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে বর্ষা মৌসুমে এই সড়কে ধসের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে চালক, যাত্রী ও পথচারীদের।

৬ এপ্রিল থেকে টানা বৃষ্টিতে সাগরদিঘিরপাড় এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া মালনী ছড়া ভরে গেছে পানিতে। মঙ্গলবার থেকে সিলেটে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাই ছড়ার পানির স্রোতে এখন এই এলাকার প্রধান সড়ক ধসে যাওয়ার উপক্রম।

সিলেট সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাছ কাটতে না পারায় সাগরদিঘিরপাড় ওয়াকওয়ের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই ছড়ার পাড়ের গার্ডওয়াল দিতে পারছে না সিলেট সিটি করপোরেশন।

সিসিক কর্মকর্তাদের দাবি, বন বিভাগের অনুমোদন থাকার পরও সাগরদিঘিরপাড় সড়কের পাশে গাছ কাটতে আপত্তি জানাচ্ছেন পরিবেশবাদীরা। এইজন্য সাগরদিঘিরপাড় ওয়াকওয়ের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। গাছ না কাটলে ছাড়ার গার্ডওয়াল দেওয়া যাবে না। এদিকে অসম্পূর্ণ গার্ডওয়ালের কারণে এখন ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে সাগরদিঘিরপাড় এলাকার সড়ক।

পাহাড়, টিলা, সবুজ চা-বাগানে বেষ্টিত সিলেট নগরীতে রয়েছে বেশ কয়েকটি ছড়া। দীর্ঘদিন যাবত দখল দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছিল ছড়াগুলো। দখল-দূষণের হাত থেকে ছড়া রক্ষা করতে ও নগরীর শোভা বর্ধন ও জলাবদ্ধতা দূর করতে সিসিকের পক্ষ থেকে ছড়াগুলো উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া হয়।

 সিসিকের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর আমলে সাগরদিঘির পাড়ে ছড়ার পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এই ওয়াকওয়ে প্রকল্পের বেশকিছু কাজ এখনো বাকী আছে। সেগুলো সম্পন্ন করছেন সিসিকের বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।  

সিসিক সূত্রে জানা যায়,  প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ধাপে নগরীর সাগরদিঘিরপাড় এলাকায় দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশন। ওয়াকওয়ের নির্মাণের জন্য মালনীছড়ার পাড়ে থাকা গাছ রক্ষা করে নকশা তৈরি করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী অনেকগুলো গাছ অক্ষত রেখে প্রথম দফার কাজ শেষ হয়। প্রথম ধাপের কাজে ওই এলাকার ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশ থেকে মণিপুরি সম্প্রদায়ের শ্মশান পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৫০০ ফুট দীর্ঘ ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়। এই অংশে সড়কের পাশে রয়েছে ২৩টি গাছ। এর মধ্যে ৩টি পড়েছে ওয়াকওয়ের মধ্যে। ওয়াকওয়েতে থাকা এসব গাছ অক্ষত রাখা হয়েছে। আর বাকি গাছগুলো রক্ষায় ওয়াকওয়ে কিছুটা বাঁকানো হয়েছে।

পরবর্তীতে দ্বিতীয় ধাপের কাজে মণিপুরি শ্মশান থেকে বর্ণমালা পয়েন্ট পর্যন্ত ৩৮টি গাছ অক্ষত রেখে ওয়াকওয়ে নির্মাণের নকশা করা হয়। তবে ওয়াকওয়ে ও সড়কের উন্নয়নের জন্য ৮টি গাছ কাটা জরুরী বলে জানায় সিসিক।  এই আটটি গাছ কাটতে বনবিভাগের অনুমতি চায় সিসিক। সিসিকের আবেদন অনুযায়ী গত ২২ জানুয়ারি ৮টি গাছ কাটার অনুমতি দেয়া হয়।  

বুধবার (১৭ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা গেছে, মালনীছড়ার উপর নির্মাণাধীন সাগরদিঘিরপাড় ওয়াকওয়ের কাজ বন্ধ রয়েছে। মণিপুরি শ্মশান থেকে বর্ণমালা পয়েন্ট পর্যন্ত বেশ কয়েকটি জায়গায় গার্ডওয়ালের কাজ অসম্পন্ন রয়েছে। এদিকে প্রতিদিনই ছড়ার পানি বাড়ছে। তাই সাগরদিঘিরপাড় প্রদান সড়কের নিচ থেকে মাটি সড়ে বেশ কিছু জায়গায় পাশে ফাটল দেখা দিয়েছে। এসময় এই সড়ক ধসের আশঙ্কার কথা জানান স্থানীয় এলাকাবাসী।   

পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তানের প্রধান সমন্নয়ক আশরাফুল কবির  বলেন, উন্নয়ন কাজসহ বিভিন্ন কারণে গাছ কাটতে হয়, এর বিপক্ষে আমরাও না। তবে আমার প্রশ্ন হচ্ছে সিলেটের মত এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এলাকায় কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা করার সময় কেন গাছ, পাহাড়, টিলা, ছড়ার কথা চিন্তা করা হয় না।

তিনি বলেন, সাগরদিঘিরপাড় ওয়াকওয়ের তৈরি করতে এখন দেখা যাচ্ছে উভয় সংকট তৈরি হয়েছে। একদিকে গাছও বাঁচানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে সড়ক ধসের শঙ্কায় আছে। এই উভয় সংকট তৈরি হয়েছে অপরিপক্ষ পরিকল্পনার জন্য। তাই এই উন্নয়ন প্রকল্পের যে পরিকল্পনা করেছেন এই উভয় সংকটের দায়ভার তার। এখন তাকেই এই উভয় সংকটের সমাধান দিতে হবে।

এই উভয় সংকটের ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান  বলেন, আমরা কেউই গাছ কাটার পক্ষে না। তাই গাছ অনেকগুলো অক্ষত রেখেই সাগরদিঘিরপাড় ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে গাছ কাটতে হয়। তাই এই নির্মাণ কাজেও আমাদের আটটি গাছ কাটতে হচ্ছে। কারণ এই গাছগুলো না কাটলে গার্ডওয়াল করা যাবে না। তাই আমরা বন বিভাগ থেকে আটটি গাছ কাটার অনুমতি নিয়েছে। এই এখন অনুমতি নিয়েও আমরা গাছ কাটতে পারছি না নানা কারণে ।

এখন ওয়াকওয়ের নির্মাণ কাজ বন্ধ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন এই কাজ বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে সড়কে। শিগ্রই গাছগুলো কেটে গার্ডওয়াল নির্মাণ না করলে সাগরদিঘিরপাড় সড়কে ধস নামবে। তাই আমি আশা করবো সবাই আমাদের এই সংকট সমাধানে সহযোগিতা করবেন।

এ ব্যাপারে সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমরা কেউই পরিবেশ ধ্বংসের পক্ষে নই। গাছ থাকলে পরিবেশ ভালো থাকবে আর পরিবেশ ভালো থাকলে প্রাণীকুল ভালো থাকবে সেটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু মাঝে মাঝে রাস্তাঘাট,  নদী, ছড়ার উন্নয়নের জন্য গাছ কাটতে হয়। উন্নয়নের সুফলও কিন্তু বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ভোগ করবে। সাগরদিঘির পাড় ওয়াকওয়ে করার সময়ও আমরা ছড়া পাড়ের অনেকগুলো গাছ রক্ষা করেছি। কিন্তু যে গাছগুলো না কাটলেই নয় সেগুলো কাটার জন্য আমরা বনবিভাগ বিভাগ থেকে অনুমতি এনেছি। ওয়াকওয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর আমরা এখানে আবারও গাছ রোপণ করবো। কিন্তু তারপর এই কাজ সম্পন্ন করতে অনেক বাঁধা আসছে। এখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ছড়ার পানি বাড়ছে তাই গাছের জন্য ওয়াকওয়ের যেসব জায়গায় গার্ডওয়াল করা যাচ্ছে না সেসব জায়গার সংলগ্ন সড়কে ধসের শঙ্কা আছে। তাই আমরা চাই এই ওয়াকওয়ের কাজ দ্রুত শেষ করতে তা না হলে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ভাঙলে স্থানীয় এলাকবাসীসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকার মানুষকে আরও বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হবে। আমি আশা করি এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সবাই আমাদের সহযোগিতা করবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত