
২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ২২:৩৮
সিলেট নগরীর কলবাখানী ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ের বাসিন্দা মো. আজহার হোসেন উজ্জ্বল। সিলেটের মদনমোহন কলেজ থেকে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। সিলেটের নূরজাহান হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজও করেছেন। তিনি ও তার পরিবারের এলাকাতে ভাল অবস্থানে আছেন। বাসা ভাড়া, দোকান ভাড়া ও সিএনজি অটোরিকশার ব্যবসা আছে।
কিন্তু একটি মিথ্যা অভিযোগে মামলায় ফাঁসিয়ে পুলিশ তার ছবি তুলে ছিনতাইকারী হিসেবে বিভিন্ন মিডিয়ায় দিয়ে প্রচার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন আজহার।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সিলেট প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি ম্যানেজমেন্টে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে কর্মরত ছিলাম। বাসা, ভাড়া, দোকান ভাড়ার মাধ্যমে আমার আয় হয়। এছাড়া আমার সিএনজি অটোরিকশা আছে যেটি আমি ভাড়া দিয়ে রেখেছি। ওই অটোরিকশার ড্রাইভারকে ছিনতাই কাজে পেয়ে সেই মামলায় আমাকে ফাঁসিয়ে ছিনতাইকারী হিসেবে প্রচার করেছে পুলিশ।
এদিকে আজহার হোসেন উজ্জ্বলের সাথে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে পুলিশের ভূমিকাকে। সিএনজি অটোরিকশার মালিক ঘটনার সাথে জড়িত না জেনেও তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা পুলিশ গ্রহণ করে। এবং গত ২১ জানুয়ারি সিলেট মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজহারকে ছিনতাইকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ছিনতাই করাকালে আজহারকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু মূলত আজহার তার অটোরিকশা থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে গেলে মিথ্যা অভিযোগে তাকে আটক করে ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচয় করে দেয় পুলিশ।
আজহার বলেন, গত ১৭ জানুয়ারি আমার মালিকানাধীন সিএনজি অটোরিকশা (সিলেট খ ১২৩৪৫৪) সাইফুল আলম লখন নামে একজনের কাছে ভাড়া দেই। গত ২০ জানুয়ারি বিকেলে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ওই ড্রাইভারকে গাড়ি নিয়ে আসতে বললে সে জানায়, সিএনজি অটোরিকশাটি বদলি ড্রাইভারকে দিয়ে দিছে। এদিন রাত ৯টায় সময় আমার মোবাইলে সাবিনা ইয়াসমিন নামক এক মহিলার অভিভাবক ফোন দিয়ে জানান যে, আমার সিএনজি অটোরিকশার চালকসহ তার সঙ্গীয় ২ জন স্বর্ণ ও নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ছিনতাইকারী হাবিবুর রহমানসহ আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় অটোরিকশার মালিক হিসেবে আমি রাতেই কোতোয়ালি মডেল থানায় যাই। থানার সেকেন্ড অফিসার আব্দুল আলীম আমাকে বাদী পক্ষের লোকজনের সাথে বিষয়টি সমাধান করতে চাপ দেন। তখন বাদী পক্ষের লোকজন আমার কাছে দুই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে। আমি এ টাকা দিতে সম্মত না হওয়ায় আমাকে মামলা দেওয়ার হুমকি দেয়।
পরে ওই দিন রাত ৩টার দিকে আমার মোবাইলে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে জানানো হয় আমার সিএনজি অটোরিকশাটি সোবহানিঘাট রয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর এসআই মিজান আমার বাসায় দেখা করতে আসেন এবং বাসার গেইট বন্ধ থাকায় তিনি চলে যান। এসআই মিজান আমার হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিয়ে জানান, বিষয়টি সমাধানে সকালে থানায় যেতে অন্যথায় ছিনতাইকারী হিসেবে মামলা দায়ের করা হবে। পরদিন আমার ভাইসহ কয়েকজনকে নিয়ে থানায় গেলে এস আই মিজান কোন কিছু না বলে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, আপনি ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত। এসআই মিজান জোরপূর্বক আমার ছবি তুলে এডিট করে বিভিন্ন ছিনতাইকারীদের সাথে ছবি সেঁটে সিলেট মহানগর পুলিশের পেইজে ও বিভিন্ন মিডিয়ায় দিয়েছে। পরদিন ২২ জানুয়ারি আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পাই। কিন্তু এরই মধ্যে পুলিশের পক্ষ দেওয়া ছবিতে আমাকে ছিনতাইকারী হিসেবে উপস্থাপন করে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
আজহার হোসেন উজ্জ্বল বলেন, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পুলিশ আমার ও আমার পরিবারের মান সম্মান ক্ষুণ্ণ করেছে। এসব বিষয়ে সুবিচার পেতে আমি এসএমপি কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করে।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বাদীপক্ষের মামলার প্রেক্ষিতে আসামী ধরা হয়েছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। এখন সে ছিনতাইকারী কি না সেটা তদন্তে প্রমাণ হবে। আমরা তদন্ত করছি।
আপনার মন্তব্য