নিজস্ব প্রতিবেদক

০৯ ফেব্রুয়ারি , ২০২৫ ২০:৫৮

মৌলিক সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় : জামায়াতের আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছে, ‘নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। মৌলিক কিছু সংস্কার করা না গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। এই অবস্থায় নির্বাচন দেওয়া হলে এটা হবে নির্বাচনের জেনোসাইড বা নির্বাচন গণহত্যা।  আমরা এটা চাই না। আমরা চাই সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির পর নির্বাচন।’

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকালে জামায়াতের সিলেট মহানগর শাখার উদ্যোগে আয়োজিত শিক্ষা উপকরণ প্রদান অনুষ্ঠান শেষে এ কথা বলেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেশ স্বাধীনের পর থেকে কখনো একটু ভাল হয়েছে, কখনো খারাপ হয়েছে। কিন্তু খুব ভাল কখনো ছিল না। খুব ভাল কখনো হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্ত সঠিক না হবে। ওই সিদ্ধান্ত যখন সঠিক হবে, সততা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হবে তখন শুধু আইনশৃঙ্খলা নয় সবকিছুর উন্নতি সাধিত হবে।’

অপারেশন ডেভিল হান্ট প্রসঙ্গে জামায়াতের আমীর বলেন, ‘ডেভিল আছে এই সমাজে। সেই ডেভিল হান্ট যদি হয় তবে দেশের ১৮ কোটি মানুষ যৌথবাহিনীর যারা অভিযান পরিচালনা করবেন তাদের জন্য দোয়া করবে এবং তাদের সাথে থাকবে।’

নির্বাচিত সরকার সবসময় ভাল হয় না মন্তব্য করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার দাবি করে ১৫ বছর ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতা আকড়ে ছিল। তারাইতো দেশের এই অবস্থা করে গেছেন। সরকার নির্বাচিত হলেই যে ভাল হবে, তা বলা যাবে না। ভাল সরকার হতে হলে ভাল মানুষের দ্বারা সরকার গঠিত হবে। যাদের অতীত ভাল, বর্তমান ভাল- তাদেরকে দিয়েই ভবিষ্যত ভাল হবে-  এটা আশা করা যায়।’

 জামায়াত এখনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করেনি উল্লেখ করে সংগঠনটির আমীর বলেন, ‘জামায়াত এখনো অফিসিয়ালি প্রার্থী ঘোষণা করেনি। এটা প্রাথমিক সিলেকশন। ইলেকশন এখনো অনেক দূর। ইলেকশন কাছে আসলে দল ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেবে। তখন যাদেরকে নমিনেশন দেবে তারাই প্রার্থী হবে।’

বিকেলে নগরীর কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সোলেমান হলে সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়। মহানগর জামায়াতের আমীর মো. ফখরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলী পরিচালনা করেন।

এরআগে দুপুরে নগরীর একটি ইনডোর মাঠে সিলেট জেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ডা. শফিকুর রহমান।

এতে তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে বৈষম্য মুক্ত ন্যায় ও ইনসাফের। যেখানে মানুষ স্বাধীনভাবে তার মত প্রকাশের অধিকার পাবে। প্রত্যেকে তার ন্যায্য অধিকার যথাযথ ভাবে ভোগ করবে।

তিনি বলেন, আমাদেরকে অন্যায় ভাবে নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো। দেশব্যাপী আমাদের নেতাকর্মীদেরকে অমানবিকভাবে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হয়েছে, শহীদ করা হয়েছে। মুসলিম দেশে স্বাভাবিক ধর্ম-কর্ম পালন করাও মানুষের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছিলো। শহীদদের রক্তের ফোঁটা ও মজলুমের চোখের জলের বিনিময়ে জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার মুক্ত হয়ে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই দেশকে এখন সকলে মিলে গড়তে হবে। কোন বিভেদ-বিভাজন তৈরী করে এই অগ্রযাত্রাকে থামতে দেয়া যাাবে না। তিনি আগামীর বাংলাদেশ গঠনে প্রয়োজনে আগের থেকেও আরো বেশি ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে থাকেত এবং সকল বৈষম্য, অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

ডা. শফিক বলেন, সবকিছুর ফায়সালা আমাদের হাতে নেই। কিন্তু যোগ্যতার সবটুকু দিয়ে সত্যকে ধারণ করে সত্যের পক্ষে চেষ্টা চালাতে হবে। আবেগ এবং বিবেকের সংমিশ্রনে চলতে হবে। সংযত আবেগই শক্তি।

সিলেট জেলা আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তর আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ফজলুর রহমান। জেলা সেক্রেটারী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীনের পরিচালনায় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও সিলেট জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও সিলেট জেলা নায়েবে আমীর হাফেজ আনওয়ার হোসাইন খান, জেলার সাবেক নায়েবে আমীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, জেলা সহকারী সেক্রেটারী অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারী মাওলানা মাশুক আহমদ, জেলা মজলিশে শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, জেলা মজলিশে শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য উপাধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার, জেলা শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল-হোসাইন প্রমূখ।  

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, দেশের প্রতিটি সেক্টরে সৎ ও যোগ্য লোকদের নেতৃত্বে বসাতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের বৃহত্তর কল্যাণে সকল নেতিবাচক কার্যক্রম পরিহার করতে হবে।

জেলা আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, কুরআন আমাদের জীবন বিধান। এর সাথে সকলের সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্তরে কুরআনকে প্রতিষ্ঠা করতে সাবইকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত