
১৬ ফেব্রুয়ারি , ২০২৫ ২০:৩৭
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর (অবঃ) ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনও নানা আয়োজনে ওসমানীর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি), ১৭ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার, সিলেট এরিয়া মেজর জেনারেল আ স ম রিদওয়ানুর রহমান, এডব্লিউসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, জি যথাযথ সামরিক মর্যাদায় হযরত শাহজালাল (র.) মাজার সংলগ্ন জেনারেল এম এ জি ওসমানীর (অবঃ) সমাধিস্থলে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন।
এসময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনারের মাধ্যমে সম্মান প্রদর্শন করে। পরিশেষে তাঁর রুহের মাগফেরাত এবং দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
অনুষ্ঠানে সিলেট এরিয়ার সকল ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাগণ, সামরিক বাহিনীর অন্যান্য পদবির সদস্যগণ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ : বঙ্গবীর জেনারেল মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী’র ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ও মহানগর ইউনিটের উদ্যোগে এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিট কমান্ডের প্রতিষ্ঠাতা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম খানের পৃষ্ঠপোষকতায় আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর জিন্দাবাজারস্থ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হলে এ আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিট কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর্জা জামাল পাশা’র সভাপতিত্বে ও মহানগর ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শহিদ খানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন বঙ্গবীর ওসমানী গবেষণা ইন্সটিটিউটের চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মালেক খান।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মনাফ খান, ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জমির উদ্দিন, সদর উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রইছ আলী, ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মছদ্দর আলী, যুব উদ্যোক্তা ও সংগঠক মো. নজরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড সুহেল আহমদ, মো. সুমন, আসলাম খান স্বপন প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বঙ্গবীর ওসমানীর বর্ণাঢ্য জীবন ও স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর কৃতিত্বপূর্ণ অবদানকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি জানান। মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মুফতি মাওলানা রশিদ আহমেদ জামালগঞ্জী।
জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী উদ্যাপন পরিষদ: সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেছেন, বঙ্গবীর জেনারেল এমএজি ওসমানী ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান চালিকা শক্তি। তাঁর সাহসিকতা ও নেতৃত্ব চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, ওসমানী শুধু একজন সামরিক নেতা নন, তিনি ছিলেন এক দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব, যাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। মুক্তিযুদ্ধে ওসমানীর অসামান্য অবদান জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, তাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে হবে, যাতে তারা ওসমানীর জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে পারে। ওসমানীর মতো নেতা ইতিহাসে বিরল। তাঁর জীবনাদর্শ থেকে দেশপ্রেম ও নৈতিকতার শিক্ষা নিতে হবে।
তিনি রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জিন্দাবাজারস্থ নজরুল একাডেমী মিলনায়তনে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী, বঙ্গবীর জেনারেল এমএজি ওসমানীর ৪১তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বঙ্গবীর জেনারেল এমএজি ওসমানী জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী উদ্যাপন পরিষদ জাতীয় কমিটি সিলেট আয়োজিত আলোচনা সভা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
বঙ্গবীর জেনারেল এমএজি ওসমানী জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী উদ্যাপন পরিষদ জাতীয় কমিটির সভাপতি ও জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মনোরঞ্জন তালুকদার পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, মুরারীচাঁদ কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শেখ মোঃ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন (বিএমবিএফ) সিলেট বিভাগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এম আসাদুজ্জামান, ফুলকলি ফুড প্রোডাক্টস লিঃ এর ডিজিএম জসিম উদ্দিন খন্দকার, লাল দির্ঘারপাড় পুরাতন হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মোঃ আনোয়ার হোসেন, সুনামগঞ্জ সমিতির সভাপতি এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান কামালী, বঙ্গবীর জেনারেল এমএজি ওসমানী জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী উদ্যাপন পরিষদ জাতীয় কমিটির সহ-সভাপতি এম এ হান্নান, সহ-সভাপতি আশরাফুর রহমান চৌধুরী।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বঙ্গবীর জেনারেল এমএজি ওসমানী জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী উদযাপন পরিষদ জাতীয় কমিটির চিত্রাংকন কমিটি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এম এ মতিন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মহি উদ্দিন আহমদ, সাংবাদিক ফয়সল আহমদ বাবলু, খালেদ মিয়া, মো. ইউসুফ সেলু, শিরিন চৌধুরী, আব্দুল ওয়াদুদ, তুহিন আহমদ, সাহেদা বেগম, ফাতেমা বেগম, মো. আলমগীর আলম প্রমুখ।
ওসমানী স্মৃতি সংসদ: জেনারেল মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর ৪১তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে রোববার বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করা হয়।
দিনটি যথাযথ মর্যাদার সাথে পালনের লক্ষ্যে বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি সংসদ সিলেটের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত হাফিজ আমির উদ্দীন (রহ) এতিমিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা মেজরটিলার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দরগাহে হযরত শাহজালাল (রহ:) মাজার প্রাঙ্গণে হাফিজগণের নেতৃত্বে খতমে কোরআন, বাদ যোহর হযরত শাহজালাল (রহ:) দরগাহ জামে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে পর বঙ্গবীর ওসমানীর মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মরহুমের কবর জিয়ারত।
মিলাদ পূর্ব বঙ্গবীর ওসমানীর জীবন ও কর্মসম্পর্কে বক্তব্য রাখেন, বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি সংসদের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য বিশিষ্ট চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জহিরুল ইসলাম অচিনপুরী ও সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের অব. অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, সিলেট বিভাগ গণদাবী ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি চৌধুরী আতাউর রহমান আজাদ এডভোকেট।
তাঁরা তাদের বক্তব্যে, সিলেটের কৃতি সন্তান বঙ্গবীর জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীকে রাষ্ট্রীয় ভাবে সম্মান প্রদর্শন করা এবং তাঁর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয় ভাবে পালন, তাঁর লিখিত পান্ডুলিপি প্রকাশ করা এবং তাঁর জীবনী স্কুল-কলেজে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবী জানান।
দোয়া মাহফিল ও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি সংসদের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী গোলাম মর্তুজা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আহমদ, সাংবাদিক চৌধুরী দেলওয়ার হোসেন জিলন, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী এহিয়া, স্মৃতি সংসদের সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুল মালিক, যুব সংগঠক কয়েছ আহমদ সাগর, আমীন তাহমিদ, কারী আবুল লেইছ, মাওলানা আব্দুস সোবহান প্রমুখ।
মিলাদ মাহফিল শেষে বঙ্গবীর এম.এ.জি ওসমানীর আত্মর মাগফেরা কামনা সহ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে দোয়া পরিচালনা করেন হাফিজ মাওলানা শামসুল ইসলাম ভাদেশ্বরী।
আপনার মন্তব্য