
১৬ ফেব্রুয়ারি , ২০২৫ ২২:২২
চলতি বছরের গত পঁয়তাল্লিশ দিনে শান্তিগঞ্জ উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ঘটেছে খুনোখুনির ঘটনা, হয়েছে চুরি-ডাকাতি। এসব ঘটনায় উদ্বিগ্ন এলাকাবাসীবাসী। ভয় আর আতঙ্কে কাটছে উপজেলাবাসীর দিনকাল। আইন শৃঙ্খলার এমন অবনতি থেকে দ্রুত উত্তরণ চান তাঁরা।
তথ্যানুসন্ধান করে জানা যায়, চলতি বছরের ১জানুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি অন্তত ১০টি আলোচিত ঘটনায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জনসাধারণের মাঝে একধরণের ভীতিকর অবস্থার তৈরি করেছে এই ঘটনাগুলো। সর্বশেষ রোববার উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নে গরুর ধান খাওয়াকে কেন্দ্র আস্তমা ও কামরুপদলং গ্রামের মধ্যে দুই ঘন্টা ব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৪০ জন লোক আহত হয়েছেন।
এর আগে ১২ জানুয়ারি উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নে পরকীয়ার জেরে খুন হন মনির হোসেন নামের এক প্রবাসী। ইউনিয়নের উকারগাঁও গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাওরে বোরো জমিতে তার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ পাওয়া যায়। ৬ জানুয়ারি দরগাপাশা ইউনিয়নের সিচনী গ্রামের সামনে পাগলা-জগন্নাথপুর সড়কে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দু’জন নিহত হওয়ার ঘটনায়বিষিয়ে তুলে উপজেলাবাসীর মন।
গত দেড়মাসে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ছিলো ২২ জানুয়ারি থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। ২২ জানুয়ারি রাতে ভয়ঙ্কর ডাকাতির ঘটনা ঘটে ডাবর-জগন্নাথপুর সড়কে। দাঁড়াখাই-কোন্দানালা এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে। যদিও ঘটনাস্থল ছাতক থানাধীন, শান্তিগঞ্জ থানার লাগুয়া এলাকা হওয়ায় প্রভাপ পড়ে শান্তিগঞ্জেও।এই ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে।
২৪ জানুয়ারি শিমুলবাক ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রাম সংলগ্ন তেবরজান হাওরে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ২৬ জানুয়ারি পাথারিয়া ইউনিয়নে এক গৃহবধূর রহস্যজন মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এতে স্বামী ও শ্বশুরকে আটক করেছিল পুলিশ। ২৭ জানুয়ারী গাড়িভাড়া দ্বন্দ্বে ঘন্টাব্যাপী সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরুদ্ধ করে রাখেন সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা হলেও বিঘ্ন ঘটেছিলো। পরে প্রশাসন ও পরিবহণ শ্রমিক নেতাদের হস্তক্ষেপে ছয় দফা দাবিতে অবরোধ তুলে নেন সুবিপ্রবি’র শিক্ষার্থীরা।
একই দিনে পাগলা বাজার এলাকা থেকে মোবাইল ব্যাংকিং ও ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ীর প্রায় ৪ লক্ষ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় রকেট ও বাংলালিঙ্কের এসআর আরিফ হাসান লিটন ওরফে লিটন মিয়া। ৭ ফেব্রুয়ারি ভয়ঙ্কর ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে উপজেলার পাগলা বাজার এলাকায়। ব্রাহ্মণগাঁও পয়েন্টে গভীর রাতে প্রহরীকে তার লুঙ্গি দিয়ে বেঁধে ৩টি সিএসজি চালিত ফোরস্ট্রোক ও একটি দোকান লুট করে ডাকাত দল। একই সময়ে বীরগাঁও গ্রামের খালপাড় এলাকা থেকে আরেকটি সিএনজি নিয়েছে ডাকাতদল।সম্প্রতিজয়কলস ইউনিয়নের আসামপুর গ্রামে পৃথকভাবেঘটেছে চুরির ঘটনা। গ্রামের আঙ্গুর মিয়া ও আসাদ মিয়ার বাড়ি থেকে ৪টি গরু নিয়ে গেছে চুরেরা।
১৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের দামোদরতপী পয়েন্ট থেকে সৌদি আরব প্রবাসী আবদুল আলিম ওরফে আক্কুলি মিয়ারসিএনজি গচ্ছা যায়।
উপজেলাব্যাপী ঘটতে থাকা ধারাবাহিক এসব ঘটনায় একদিকে এলাকায় যেমন চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে, অপরদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চরম বার্তাও দিচ্ছে। সাধারণ ও সচেতন মানুষ এ নিয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এমন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পুলিশ প্রশাসনকে আরো কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করার দাবি জানিয়েছেন উপজেলাবাসী। পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে যা যা করা দরকার সেসব পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান করেছেন তারা।
পশ্চিম পাগলা এলাকার বাসিন্দা সজীব আহমদ,শিমুলবাক ইউনিয়নের জীবদাবার গ্রামের আবু লেইচ ও দরগাপাশা ইউনিয়নের নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা সত্যিকারার্থে উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা বিচলিত! চুরি, ডাকাতি ও খুনোখুনির ঘটনায় আমরা তটস্থ। এমন পরিস্থিতির উন্নতি চাই। আইনশৃঙ্খলার আরো উন্নতি দরকার বলে আমরা মনে করি।
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম আলী বলেন, শান্তিগঞ্জ উপজেলার আইনশৃঙ্খল পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এই উপজেলায় কোনো ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। আপনারা (গণমাধ্যমকর্মী) এটাকে টেনে ডাকাতির ঘটনা বানিয়েছেন। চুরি এবং ডাকাতির মাঝে সংজ্ঞা আছে না? ফৌজধারী কার্যবিধিতে চুরি এবং ডাকাতির সংজ্ঞা আছে। সংজ্ঞার ভিতরে ফেলে এগুলোকে মূল্যায়ন করতে হবে। ডাকাতি তো হয় নাই, চুরি ঘটনায়, খুনের ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলমান। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মন্তব্য