ডেস্ক রিপোর্ট

১১ মার্চ, ২০১৬ ১৭:৪৭

বেতন বৈষম্য নিরসন না হলে কর্মবিরতির ঘোষণা হেলথ এসিসট্যান্ট এসোসিয়েশনের

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুসারে পদ আপ-গ্রেডেশনের মাধ্যমে বিদ্যমান বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ হেলথ এসিসট্যান্ট এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।

শুক্রবার (১১ মার্চ) একযোগে দেশের ৬৪টি জেলায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এসোসিয়েশনের সিলেট জেলা সভাপতি আব্দুস সবুর।

লিখিত বক্তব্য বলা হয়, দেশের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় ২১ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী কাজ করে যাচ্ছেন। শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হ্রাস, যক্ষা, ধনুষ্টংকার, ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ, সংক্রামক অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ, অন্ধত্ব দূরীকরণে স্বাস্থ্য সহকারীরা তৃণমূল পর্যায়ে সফল ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তাদের কারণেই ইপিআই কার্যক্রমে শুধু দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ান হয়নি, সারা বিশ্বে রোল মডেল হয়েছে।

কমিউনিটি ক্লিনিক চালুতে সরকারি নির্দেশে স্থান নির্বাচন, স্থানীয় জনগণ হতে বিনামূল্যে জমিদানে উদ্বৃদ্ধকরণ, নির্মাণ তদারকিসহ স্বাস্থ্য সহকারীরা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে বর্তমান সরকারের সফল ও সার্থক উদ্যোগ কমিউনিটি ক্লিনিককে গ্রামীণ জনগণের দোর গোড়ায় সহজলভ্য সেবা একটি জনপ্রিয় মডেল কর্মসূচীতে পরিণত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এমডিজি, সাউথ সাউথ পুরষ্কার প্রাপ্তী, গ্যাভি কর্তৃক শ্রেষ্ঠ টিকাদানকারী দেশের স্বীকৃতি অর্জন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার টিকাদানে শ্রেষ্ঠত্ব এবং সম্প্রতি পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ গঠনে জাইকা কর্তৃক প্রেসিডেন্ট এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তিতে স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বলে সর্বজন স্বীকৃত।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে স্বাস্থ্য সহকারীরা টেকনিক্যাল পদমর্যাদার দাবী করে আসলেও সরকার তা বাস্তবায়ন না করায় পদমর্যাদা সহ চরম বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। ১৯৭৭ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুসারে এইচ.এস.সি পাশ স্বাস্থ্য সহকারীদের ১৬ তম গ্রেডে মূল বেতন ছিল ৩০০ টাকা। কৃষি বিভাগের এসএসসি পাস ব্লক সুপারভাইজার যারা ১৯৭৭ সালের জাতীয় বেতন স্কেলে ১৯তম গ্রেডে মূল বেতন পেতেন ২৪০ টাকা। ১৯৮৫ সালের ৫ই আগস্ট এক সরকারী আদেশে তাদের বেতন স্কেল আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে ১৪তম গ্রেডে উত্তীর্ণ করা হয়।

২০০১ সালের ২৩শে এপ্রিল তাদেরকে ১১তম গ্রেডে আপগ্রেডেশন করা হয় এবং টেকনিক্যাল মর্যাদা প্রদান করা হয়। ২০০৫ সালের ২৩শে এপ্রিল এক সরকারী আদেশে পদবী পরিবর্তন করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা করা হয়। প্রাণী সম্পদ বিভাগের ভেটেনারী ফিল্ড এসিস্ট্যান্টরা ১৯৭৭ সালের জাতীয় বেতন স্কেলে ১৯তম গ্রেডে মূল বেতন পেতেন ২৪০ টাকা। ব্লক সুপারভাইজারদের সাথে ১৯৮৫ সালে সরকারী আদেশে গ্রেড আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে ১৪তম গ্রেড প্রদান করা হয়।

২০১১ সালে ৩রা মার্চ সরকারী আদেশের মাধ্যমে ১১তম গ্রেডে উত্তীর্ণ করা হয় এবং টেকনিক্যাল মর্যাদা প্রদান করা হয়। ২০১৪ সালের ৯ই মার্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পাস সহকারী শিক্ষক যারা ১৭তম গ্রেডে নিয়োগ প্রাপ্ত হন, তাদের ১৪তম গ্রেডে উত্তীর্ণ করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রকল্পের আওতাধীন এইচএসসি পাস সিএইচসিপিদেরকে ১৪তম গ্রেডে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।

তারা আরো বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৮ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য সহকারীদের মহাসমাবেশে পদ-মর্যাদাসহ বেতন বৈষম্য নিরসনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, অর্থ, জনপ্রশাসন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি সমন্বয়ে নিয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের একাধিক কমিটির অনুকূল সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য সহকারীরা বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ইতিপূর্বে বেতন বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির আহ্বায়কসহ সকল সদস্যবর্গকে পৃথক পৃথক ভাবে আবেদনের মাধ্যমে বিষয়টি বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

গত ২২ জানুয়ারী সারা দেশে বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে স্বাস্থ্য বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্যগণ, প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রীগণ উপস্থিত থেকে বেতন বৈষম্য নিরসনের যৌক্তিকতা স্বীকার করেন এবং নিরসনের আশ্বাস প্রদান করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করে বলেন, কৃষি তথা পশু-পাখি, হাঁস মুরগি, গরু-ছাগল সহ গবাদিপশুর চিকিৎসা সেবা করে তারা ৩০ বৎসর পূর্ব থেকে টেকনিক্যাল মর্যাদা পেয়ে আসছেন। অথচ মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেও আমরা টেকনিক্যাল মর্যাদা পাচ্ছি না। ১৮ বছর পূর্বে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষণার পরও বেতন বৈষম্য ও পদ-মর্যাদার বিষয়টি নিরসন হয়নি। ৩০ বৎসর ধরে বেতন বৈষম্যের শিকার হওয়ার পরও স্বাস্থ্য সহকারীরা পেশাকে দাবী পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেননি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে আগামী ৩১শে মার্চের মধ্যে বেতন বৈষম্য নিরসনের সুস্পষ্ট ঘোষণা প্রদান না করা হলে ১ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মবিরতি সহ বৃহত্তর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল্লাহ আল আনসারী, কেন্দ্রীয় সহ প্রচার সম্পাদক সরফ উদ্দিন, মহিলা সম্পাদিকা হেলেন রায়, সিলেট জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক জসীম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক নিউটন ধর, আব্দুল কাইয়ূম, আব্দুল মুমিত, ফারুক উদ্দিন প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত