সাজ্জাদ হোসেন শাহ্,তাহিরপুর

০২ মার্চ, ২০১৫ ১৯:৩২

আবুলের শুভঙ্করের ফাঁকি !

তাহিরপুরে একই স্থানে দু’প্রকল্প দেখিয়ে কাবিখা ও এলজিএসপির ২২ লাখ টাকার একাধিক প্রকল্পের তদন্তে পুকুর চুরির ঘটনা ধরা পড়েছে

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একই স্থানে দু’প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে অননিয়ম দুর্নীতি ও পুকুর চুরির মত শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে সরকারের কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে লোক দেখানো যৎসামান্য কাজ করে কেবল ফাইল ওয়ার্ক করেই সেই টাকাই ঐ ইউপি চেয়ারম্যান প্রকল্প কমিটিকে ব্যবহার করে নিজেই সরকারি টাকা পকেটস্থ করেছেন বলে স্থানীয় এলাকাবাসী ও ঐ পরিষদের একাধিক ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিশ্চিত করেছেন।  

এমন দুর্নীতি ,অপকীর্তি আর সরকারি টাকা লুপাটের ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদে। পরিষদের উন্নয়ন কর্মকান্ডে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্র্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই প্রকল্পের একই স্থানে দুই প্রকল্প বাস্তায়ন করা হয়েছে।  

জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিস্ট সুত্রে জানা গেছে, ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে দ্বিতীয় লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রকল্পের (এলজিএসপি-২) আওতায় প্রায় ২২ লাখ টাকা বরাদ্দের ভিক্তিত্বে উন্নয়ন কাজের ৩টি উন্নয়ন প্রকল্পেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

বিগত বছরের  গত আগস্ট মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত অডিট ফার্মের নিরীক্ষায় এসব অনিয়ম দুর্নীতি ও পুকুর চুরির ঘটনাটি ধরা পড়েছে। অডিট ফার্ম দুইটি প্রকল্প নিয়ম অনুযায়ী হয়নি বলেও প্রতিবেদনে আপত্তি জানিয়েছে। এছাড়াও একই প্রকল্পের স্থানে সরকারি টাকা আত্বসাতের অসৎ উদ্দেশ্যে ঐ ইউপি চেয়ারম্যান একই স্থানে দুই প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়েছেন।

পরবর্তীতে বিগত বছরের ২৩ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখা থেকে অডিট আপত্তির জবাব দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হলেও ঐ ইউপি চেয়ারম্যান কিংবা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে একটি জবাব দাখিল করা হয়েছে। তবে এই জবাব যে সন্তুষ্টজনক নয় তাও জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে সরজমিনে প্রাথমিক ভাবে তদন্ত টিম পাঠিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন।  

ইউনিয়ন পরিষদ অপারেশনাল ম্যানুয়েল ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্টের (এলজিএসপি-২) বরাদ্দ দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ অপারেশনাল ম্যানুয়েলের  ৮.১.৬ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে ইউনিয়ন পরিষদের অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। যা সরাসরি ম্যানুয়েল পরিপন্থি।

সরজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলজিএসপি প্রকল্প বাস্তবায়ন নীতিমালা লঙ্ঘন করে শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের প্রস্তাবিত স্থানের গর্তে মাটি ভরাট করার কাজের প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে।

৩ লাখ টাকা ব্যয়ে  ভবনের প্রস্তাবিত স্থানের ভূমির ক্ষয়রোধে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও ২ লাখ টাকা ব্যয়ে ইউনিয়ন ভূমি অফিস হইতে প্রস্তাবিত ইউপি ভবন পর্যন্ত রাস্তার দুই পার্শ্বে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ ও গর্তে মাটি ভরাট। অথচ নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে যত সামান্য দৈর্ঘ্যের কিছু মরাগুড়া পাথর , অতিরিক্ত বালি ও সিমেন্ট কম দিয়ে চেয়ারম্যান নিজের লোক দিয়ে কয়েক ব্লক আর মাটির প্রলেপ দিয়ে মাটিয়াইন হাওরের মত পাার্শ্ববর্তী এলাকা ঘেষে এই প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের নামে সরকারি টাকার অপচয় ও লুপাট করেছেন। এলজিএসপি প্রকল্পের বরাদ্দে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ইউপি ভবনের প্রস্তাবিত স্থানের গর্তে মাটি ভরাট করা প্রকল্পের স্থানে ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের বরাদ্দকৃত কাজের বিনিময়ে খাদ্য ‘কাবিখা’ প্রকল্পের বরাদ্দও ব্যয় করা হয়েছে। 

অডিট আপত্তি সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়ন কার্যালয় থেকে নিয়মমাফিক বার্ষিক কর্মকান্ড (দৈনিক পত্রিকা,ম্যাগাজিন, লিফলেট ও প্রচার বিলিপত্র) প্রকাশ করা হয়নি, পরিষদের গ্রাম আদালত ফিস ও জরিমানা আদায় রেজিস্ট্রার, ইউপি পাঠাগার রেজিস্ট্রার, বেতন বিল রেজিস্ট্রার ও তথ্য সেবা রেজিস্ট্রার যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, ফি-বছর বড়ছড়া, চারাগাঁও বাগলী এই তিন শুল্ক ষ্টেশন থেকে সারা দেশে নৌ-পথে এলসির মাধ্যমে শুল্ক ভ্যাট,আয়কর ও কাষ্টমস ডিউটি দিয়ে বৈধ ভাবে আমদানিকৃত কয়লা-চুনাপাথর ট্রলার, কার্গো ও বলগেট দিয়ে নৌ-পথে দেশের বিভিন্ন ইটভাটা ও মোকাকে নিয়ে যাওয়ার পথে আবুল চেয়ারম্যান তার প্রাইভেট বাহিনীর লোকদিয়ে ইউনিয়ন ট্যাক্সের নামে উচ্চ আদালত, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় ও জেলা প্রশাসন থেকে  নিষেধ থাকা সত্বেও  সম্পুর্ণ বে-আইনি ভাবে ইউনিয়ন ট্যাক্স তুলে নিজেই আয়েশী জীবন যাপন করে জ্ঞাত আয় বর্হিভুত টাকার পাহাড় গড়ে তুলে  নিজ এলাকায় সুরম্য অট্টালিকা, খাঁস জমিতে বাগান বাড়ি, নতুন বাজারে মার্কেট, জয়বাংলা বাজারে অফিস, টেকেরঘাট প্রকল্পে নিজ বলয়ের অনুসারীদের দিয়ে টিলা কেটে ও পতিত  বিসিআইসির জায়গা দখল, বাগলীতে অফিস ও  জেলা শহরে একাধিক গাড়ি বাড়ি কিনেছেন।

ইউনিয়ন পরিষদের ম্যানুয়েল অনুসারে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়নি, ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিক সনদ (সিটিজেন চার্টার) সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়নি, ইউনিয়ন পরিষদের ত্রৈমাসিক ক্রয় প্রতিবেদন যথাযথভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট প্রদান করা হয়নি। এছাড়া পরিষদের অনেক কর্মকান্ড নিয়ম অনুযায়ী চালিত হয়নি বলে অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের একটি দায়িত্বশীল সুত্রে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, ঐ ইউনিয়ন পরিষদের অডিট আপত্তির জবাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হয়েছিল কিন্তু এ জবাব নেহায়েত ফাইল ওয়ার্ক বলে ফের সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ইউজিপি’র জেলা ফ্যাসিলিটেটর খন্দকার রবিউল আউয়াল নাসিম বলেন,‘ শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে একই প্রকল্পের স্থানে এলজিএসপি-২ প্রকল্পের টাকা বরাদ্দ ব্যয় করা হয়েছে আবার কাবিখা প্রকল্পের বরাদ্দও ব্যয় করা হয়েছে। যা সম্পুর্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে পড়ে। বিষয়টি অডিটে ধরা পড়েছে।

বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে অনিয়ম-দুর্র্নীত ও পুকুর চুরির মত সরকারি টাকা লুটপাটের অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউপি  চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন,‘এলজিএসপি-২ প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা ব্যয়ে ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে ও কাবিখা প্রকল্পের বরাদ্দে আমার ইউনিয়ন পরিষদের যে সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে তাতে কোন প্রকল্পেই অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি।

স্থানীয় সরকার শাখার উপ -পরিচালক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহ বলেন,‘শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে এলজিএসপি-২ প্রকল্পের বরাদ্দের উন্নয়ন কর্মকান্ডে অডিট আপত্তি পাওয়া গেছে। অডিটে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির ও অর্থ আত্বসাতের বিষয়টি উঠে এসেছে।

 

 

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত