এস আলম সুমন, কুলাউড়া

২৯ জুন, ২০১৬ ১৭:৫৫

পাউন্ডের দরপতনে মৌলভীবাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা

ব্রেক্সিটের প্রভাবে পাউন্ডের মূল্যে ধস নামায় কয়েকদিন ধরে থমকে গেছে মৌলভীবাজার জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য।

পাউন্ডের লেনদেনে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ব্যাংকসহ মুদ্রা বিনিময় মার্কেটেও। ঈদ সামনে তারপরও দোকানীরা আশানুরূপ ক্রেতা পাচ্ছেন না। ব্রেক্সিটের প্রভাব কাঠিয়ে ওঠা নিয়ে বৃটেনের মত নানা কারণে উদ্বিগ্ন মৌলভীবাজারের মানুষও।

জানা যায়, এবছর প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের অধিকাংশ ইংল্যান্ড প্রবাসী ঈদ উপলক্ষে আসছেন না দেশে। তাছাড়া পাউন্ডের দরপতনে হঠাৎ করে রেমিটেন্স আসা কমতে থাকায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে পুরো জেলায়। ইইউতে বৃটেনের থাকা না থাকা গণভোটের ফলাফলের পর ক্রমাগত পাউন্ডের দরপতনে এমন নাজেহাল অবস্থা।

লন্ডন প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজারের প্রতিটি গ্রামেই রয়েছেন একাধিক বৃটেন প্রবাসী। তাই আত্মীয়স্বজন বৃটেনের প্রবাসী থাকায় ওদের পাঠানো রেমিটেন্স দিয়েই চলে তাদের সংসার। আর এখানকার বেশী লোক বৃটেনের প্রবাসী হওয়ায় তাদের পাঠানো রেমিটেন্সের উপর অনেকটাই র্নিভরশীল ওখানকার ব্যবসা বাণিজ্য। গত কয়েকদিন থেকে ব্রেক্সিটের প্রভাব পড়েছে মৌলভীবাজারের সব কটি উপজেলায়।

মৌলভীবাজারের অন্যতম ডির্পাটমেন্টাল শপিং সেন্টার এম.বি ক্লথ স্টোর ও বিলাসের পরিচালক আনোয়ার ইকবাল ও সুমন আহমদ জানান ঈদের এই সময়টিতে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্রেতা বিক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড় লেগে থাকলেও এ বছর বৃটিশ পাউন্ডের দরপতনে বৃটেন প্রবাসী অধ্যুষিত এ জেলার মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার বিপর্যয় ঘটায় ক্রেতা কমে গেছে। বৃটেন ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা থাকায় তারপরও কিছুটা হলেও চলছে তাদের কেনাবেচা।

লন্ডন প্রবাসী কুলাউড়ার জয়চন্ডি গ্রামের জামাল উদ্দিন রুবেল ও মৌলভীবাজারের কাজী বাড়ির ইমাদ মৌলা জানান গণভোটের পর পাউন্ডের ক্রমাগত দরপতনে বৃটেন প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠানো কমিয়ে দিচ্ছেন। অতি প্রয়োজনীয় না হলে তারা রেমিটেন্স পাঠাতে চাইছেন না পরবর্তীতে পাউন্ডের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার আশায়। আর এ কারণেই হঠাৎ করে স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বৃটিশ পাউন্ডের দাম ১০১.৮০ টাকা যা কিছু দিন আগে ছিল ১১৮ টাকা।

তবে মৌলভীবাজারের অনুমোদনবিহীন মানি এক্সচেঞ্জ মার্কেটে বৃটিশ পাউন্ড ৮০-৮৫ টাকা দরে ক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে। মৌলভীবাজারের অনুমোদনবিহীন মানি এক্সচেঞ্জ মার্কেট হিসেবে পরিচিত শহরের বেড়ীরপাড় এলাকায় রয়েল মার্কেটে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনবিহীন ৮টি ফরেন মানি এক্সচেঞ্জের দোকান রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে তারা মূলত এ ধরনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে চালান রমরমা ব্যবসা। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত মৌলভীবাজার সৈয়দ ফরেন মানি এক্সচেঞ্জের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ ফয়ছল আহমদ জানান, এ কয়দিন থেকে তাদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। প্রতিবছর ঈদকে সামনে রেখে ১০-১৫ রোজা থেকে তাদের ব্যবসা ভালো হলেও এ বছর উল্টোচিত্র পাউন্ডের দরপতনে।

মৌলভীবাজার সোনালী ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার দেওয়ান মো. মনিরুজ্জামান ও সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. মোস্তাক আহমদ জানান ইইউ থেকে ইংল্যান্ড বেরিয়ে যাওয়ার গণভোটের পর বৃটিশ পাউন্ডের অব্যাহত দরপতনে বৃটেন প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানো কমে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ব্যাংকগুলোতে পাউন্ডের লেনদেনের ধস প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। বৃটেন এটি কাটিয়ে উঠতে না পারলে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে।

মৌলভীবাজার ব্যাংকার অফিসার এসোসিয়েশনের সভাপতি এডভোকেট আবু তাহের বলেন ব্রেক্সিটের প্রভাবে পাউন্ডের দরপতনে ইংল্যান্ড থেকে এখন রেমিটেন্সটা কম আসছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন দর বাড়লেই বৃটেন প্রবাসীরা জমানো পাউন্ড দেশে পাঠাবেন তখন আর এই স্থবিরতা থাকবে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত