জগন্নাথপুর প্রতিনিধি

২৯ আগস্ট, ২০১৬ ২১:৪৮

জগন্নাথপুর উপজেলাকে বাল্যবিবাহ মুক্ত ঘোষণা

ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলাকে বাল্য বিবাহ মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

সকাল থেকে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে উপজেলার পৌর পরিষদ, প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক, শিক্ষার্থীরা, প্রতিটি এলাকার নিকাহ্ রেজিস্ট্রার(কাজী), সরকারী-বেসরকারি এনজিও সংস্থা কর্মকর্তা কর্মচারীসহ বিভিন্ন মসজিদের ইমামগন ও সারা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জনসাধারণের সমাগমে লোকে লোকান্তরিত হয়ে যায়। সেই সাথে র‌্যালিতে মুখরিত হয়ে উঠে উপজেলার পৌর সদর এলাকা।

সোমবার (২৯ আগস্ট) সকালে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম স্মৃতিফলক উন্মোচনের মাধ্যমে জগন্নাথপুর উপজেলাকে বাল্য বিবাহ মুক্ত ঘোষণা করেন। পরে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করে পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় আব্দুস সামাদ আজাদ অডিটোরিয়ামে গিয়ে আলোচনা সভায় মিলিত হন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাসুম বিল্লার সভাপতিত্বে ও উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) কাজী আরিফুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. হারুন-অর রশিদ, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সিদ্দিক আহমদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আকমল হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুক্তাদির আহমদ মুক্তা, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান(মহিলা) হাজেরা বারী ও জগন্নাথপুর থানার ওসি (তদন্ত) খাঁন মোহাম্মদ মাঈনুল জাকির।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পৌর মেয়র(ভারপ্রাপ্ত) শফিকুল হক,চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে আশারকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ্ আবু ইমানী, শিক্ষক প্রতিনিধি জগন্নাথপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমার সিংহ, লুদুরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না চন্দ্র, কাজীদের প্রতিনিধি হলিয়ারপাড়া আলিম সুন্নি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মঈনুল ইসলাম পারভেজ, সাংবাদিক শংকর রায়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে জগন্নাথপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী শ্রাবন্তী সরকার তুষ্টি প্রমুখ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন, কলকলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাসিম, মীরপুর ইউপি চেয়ারম্যান জমির উদ্দিন, চিলাউড়া-হলদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান আরশ মিয়া, রাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম রানা, সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান তৈয়ব মিয়া কামালী, পাইলগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান হাজ্বী মখলুছ মিয়া, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন, উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা সাফরোজ ইসলাম মুন্না, আব্দুল মুকিত ও এমডি মুন্নাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন।

এসময় প্রধান অতিথি শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের অভিভাবকদের সবসময় নজর রাখতে হবে যেন মেয়েদের প্রতি অবিচার করা না হয়। আরো সচেতন হয়ে আমাদের সীমিত আয়ের মধ্যে কষ্ট করে হলেও লেখাপড়া শিখিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা প্রতিটি অভিভাবকের নৈতিক দায়িত্ব এবং কর্তব্য।

তিনি মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশের স্পীকার নারী, প্রধানমন্ত্রী নারী, ৯ জন জেলা প্রশাসকসহ দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে ছেলেদের পাশাপাশি সমান তালে কাজ করে বিরল ভূমিকা পালন করছে যাচ্ছে নারীরা। আমি দৃঢ় বিশ্বাসী আজকের মেয়েরা লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশ ও জাতীর জন্য কিছু একটা করবে। তাই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে বাল্য বিবাহ তো দূরের কথা লেখাপড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ের চিন্তা করাটাই উচিত নয়।

তোমরা আজ একা নও। সরকার তোমাদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তোমাদের হাতে ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত বছরের প্রথম দিন বই তুলে দিচ্ছে। তোমাদের স্বপ্ন পূরণে সব সময় সরকার তোমাদের পাশে রয়েছে। তোমাদের ভয়ের কোন কারণ নেই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত