নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ অক্টোবর, ২০১৬ ০১:৫৭

সিলেটের চার কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা

সিলেটের চারটি কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে শঙ্কায় পড়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিক। পাথর ব্যবসায়ী ও স্টোন ক্রাশার মিল ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে। উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভারত থেকে পাথর আমদানি নির্ভরতা আরো বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

নিষেধাজ্ঞায় থাকা কোয়ারিগুলো হলো গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং, বিছনাকান্দি, শাহ আরেপিন টিলা ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ। এসব কোয়ারি থেকেই দেশের সবচেয়ে বেশি পাথর উত্তোলন করা হতো। তবে সিলেটের অন্য দুটি পাথর কোয়ারি লোভাছড়া ও শ্রীপুর থেকে পাথর উত্তোলনে কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি বলে জানা গেছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ১ সেপ্টেম্বর সিলেটের ইজারাবহির্ভূত সব কোয়ারিতে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ নির্দেশনা এসে উপজেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছে। এর পর থেকেই ইজারাবহির্ভূত পাঁচটি কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধে তত্পর হয় প্রশাসন।

জানা গেছে, সিলেটের বৃহৎ পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জ, জাফলংসহ চারটি কোয়ারি থেকেই ইজারাবহির্ভূতভাবে খাস কালেকশনের মাধ্যমে পাথর উত্তোলন করা হতো। কেবল লোভাছড়া ও শ্রীপুর থেকে ইজারার মাধ্যমে পাথর উত্তোলন করা হয়।

জাফলংয়ে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে কোয়ারি এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়া কোয়ারিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

তবে কী কারণে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আহমদ কিছু জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। তবে চিঠি পাওয়ার পরই আমরা সব কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছি।

সালাউদ্দিন বলেন, জাফলংকে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণে এখানে আগে থেকেই পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ।

এদিকে সিলেটের পাথর ও স্টোন ক্রাশার মিল ব্যবসায়ীদের সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, দেশের চাহিদার ৮০ শতাংশ পাথর ভারত থেকে আমদানি করা হয়। বাকি ২০ শতাংশ সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকে উত্তোলন করা হয়। উত্তোলন বন্ধ করে দেয়ায় এখন আমদানি নির্ভরতা বাড়বে।

সারা বছরই কোয়ারি থেকে বিচ্ছিন্নভাবে পাথর উত্তোলন করা হলেও মূলত নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়কে পাথর উত্তোলনের মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ বছর মৌসুম শুরুর আগমুহূর্তে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতারা জানান, সিলেটে পাথর উত্তোলন, পাথর ভাঙা ও পাথর পরিবহনের সঙ্গে প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিক জড়িত। পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে পড়লে শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়বেন। পরিবহন খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এছাড়া পাথর উত্তোলন ও পাথর ভাঙার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে।

সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি ও সিলেট স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি মাসুদ আহমদ চৌধুরী বলেন, যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন করলে পরিবেশের ক্ষতি হয়। কিন্তু হাতের সাহায্যে পাথর তুললে তো কোনো ক্ষতি নেই। ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে প্রাকৃতিকভাবে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেয়া উচিত।

তিনি বলেন, সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো মূলত পাহাড় থেকে নেমে আসা নদী। এসব নদীতে প্রতি বছরই বর্ষায় ঢলের সঙ্গে পাহাড় থেকে পাথর নেমে আসে। শুষ্ক মৌসুমে এগুলো সংগ্রহ করা হয়। এ পাথর সংগ্রহ না করা হলে উল্টো নদীই ভরাট হয়ে যাবে। নতুন পাথরও আসবে না।

একই মত গোয়াইনঘাট পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সহসভাপতি ইসমাইল হোসেনেরও। তিনি বলেন, সিলেটে তো কোনো ব্যবসা নেই। পাথর আর কয়লা ছিল। সিলেটের কয়লা আমদানি ব্যবসাও এখন চট্টগ্রাম বন্দরমুখী। আর পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেলে সিলেটে কোনো ব্যবসাই থাকবে না। শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বে। এছাড়া নির্মাণশিল্পেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

এ ব্যাপারে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সালাহ্ উদ্দিন আলী আহমদ বলেন, সিলেটের পাথরের মান ভালো হওয়ায় সারা দেশে এর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এভাবে হঠাত্ করে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেলে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়বে। সরকারও বঞ্চিত হবে বিপুল রাজস্ব থেকে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত