নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ অক্টোবর, ২০১৬ ১৭:৩৪

১৮ কোটি টাকার প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১১৩ কোটি

ছাতকে সুরমা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতু

দীর্ঘ নয় বছর পর পুনরায় শুরু হচ্ছে সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ। ২০০৬ সালে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ শুরু হলেও ২০০৭ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে নয় বছরে সেতুটির নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে ছয় গুণেরও বেশি। গত মঙ্গলবার ১১৩ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের সুনামগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ছাতকের সঙ্গে দোয়ারাবাজার উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ২০০৫ সালে পৌর শহরের বাজনামহল এলাকায় সুরমা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া তত্কালীন সরকার। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এর পর সরকারের একটি বিশেষ প্রকল্পের (গুচ্ছ) আওতায় ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ধরে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেতুর কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

সূত্র জানায়, বন্ধ হওয়ার আগে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর চারটি পিলার নির্মাণ করা হয়। এর পর প্রকল্পটি এডিপি থেকে বাতিল হলে বন্ধ যায় সেতুর নির্মাণকাজ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ শুরুর কারণে মাঝপথেই তা বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেতুর নকশা পরিবর্তন করে পুনরায় নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে। এছাড়া শুরুতে কেবল সেতু নির্মাণের কাজটি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভূমি অধিগ্রহণ, সংযোগ সড়ক নির্মাণ ওই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। নতুন প্রকল্পে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে নির্মাণ ব্যয়ও বেড়েছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের হাওড়বেষ্টিত উপজেলা ছাতক ও দোয়ারাবাজারের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সুরমা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নির্মাণকাজ শুরু হলেও এক বছর যেতে না যেতেই তা বন্ধ হয়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর ছাতক শহর অংশে তিনটি পিলার ও নদীর অন্য পারে আরো দুটি পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেই সঙ্গে সেতুর দুই পাড়ের সংযোগ অংশের কিছু কাজ ছাড়া বাকি কাজ অসম্পন্ন রয়েছে।

দেখা গেছে, সুরমা নদীর পূর্ব পাড়ে গড়ে উঠেছে কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। রয়েছে রেলওয়েসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ফলে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণেও অতিরিক্ত ব্যয় হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে সওজ সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বলেন, ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় সেতুটির নির্মাণকাজ। মাস চারেক আগে পুনরায় কাজ শুরুর জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়; যার পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক।

তিনি বলেন, নকশা তৈরি, প্রাক্কলন, দরপত্র আহ্বান, ভূমি অধিগ্রহণসহ সব প্রক্রিয়া শেষ করে সেতুর কাজ শুরু করতে আরো পাঁচ-ছয় মাস সময় লাগতে পারে। ভূমি অধিগ্রহণ ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের কারণে প্রকল্প ব্যয় অনেকটা বেড়েছে।

দীর্ঘদিন পর সেতুটির কাজ শুরু হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, জোট সরকারের আমলে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে আমি এ প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরুর চেষ্টা করেছিলাম। অবশেষে তা একনেকে অনুমোদন পেয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত