হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

০৫ এপ্রিল, ২০১৭ ১৫:২৬

দৈনিক প্রভাকরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

হবিগঞ্জের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও দৈনিক প্রভাকরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক নোমান চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (৫ এপ্রিল)।

২০১৬ সালের এই দিনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। মরহুম নোমান চৌধুরী জেলার একজন সিনিয়র সাংবাদিক নির্লোভ ও নিষ্ঠাবান সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ (বুধবার) বাদ আছর হবিগঞ্জ শহরের চাঁন মিয়া টাউন মসজিদে মিলাদ মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে। এ মিলাদ মাহফিলে আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধবসহ সকল শুভানুধ্যায়ীকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন মরহুমের পরিবার।

মরহুম নোমান চৌধুরীর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন: স্বাধীনতা পূর্বকালে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে পড়াকালীন তিনি সাংবাদিকতার সাথে জড়িত হন। ১৯৬৬ সালে দৈনিক আজাদ এর মহকুমা সংবাদদাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৭০ সালে বিএ ডিগ্রী লাভ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে ভর্তি হন। ১৯৭৩ সালে লেখাপড়াকালীন সময়ে দৈনিক আজাদ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। ওই সময় মুক্তিযোদ্ধাদের মূখপত্র সাপ্তাহিক গ্রেনেড নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন।

১৯৭৪ সালে সরকার ৪টি পত্রিকা রেখে দেশের সকল পত্রিকা বন্ধ ঘোষণা করলে তিনি চাকুরী হারান। ওই সময় সরকার চাকুরিচ্যুত সাংবাদিকদের বিকল্প কর্মসংস্থান কার্যক্রম নিলে তাকে সাব রেজিস্ট্রার পদে প্রস্তাব দেয়া হয়। এছাড়া সিলেটের একটি চা বাগানের ম্যানেজারের পদের সুযোগ পেয়েও তিনি যোগদান করেননি। সাংবাদিকতার প্রতি অনুরক্ত থাকায় তিনি সরকারি ও বেসরকারি চাকুরীতে যোগদান না করে হবিগঞ্জে ফিরে আসেন। হবিগঞ্জে এসে স্থানীয় সাংবাদিকতার উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭৪ সালে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ১৯৭৮ সালে তিনি প্রেসক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হন। ওই বছর হবিগঞ্জ মহকুমার শতবর্ষ পূর্তিতে ‘হবিগঞ্জের মুখ’ নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করে প্রশংসিত হন। ‘আউলিয়ার জনপদ’ হবিগঞ্জ নামে তার লেখা নিবন্ধে সৈয়দ নাসির উদ্দিন সিপাহসালার (র.) এর মাজারসহ জেলার বিভিন্ন আউলিয়ার মাজারের বর্ণনা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। তার এ লেখা তৎকালীন তথ্য অধিদফতর সরকারি খরচে পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করে। ১৯৬৯ সালে তিনি ‘অন্ধগলি’ নামে একটি নাটক রচনা করেন যা স্থানীয় টাউন হলে পর পর তিন বার সফলভাবে মঞ্চস্থ হয়।

১৯৮২ সালে তিনি সাপ্তাহিক দৃষ্টিকোণ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে হবিগঞ্জে সংবাদপত্র অঙ্গনের সমৃদ্ধি সাধন করেন। পরে দৈনিক প্রভাকর নামে অপর একটি পত্রিকা প্রকাশ করে জেলার সংবাদপত্র অঙ্গনকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যান। মৃত্যুর পূর্বদিন পর্যন্ত তিনি পত্রিকাটির সম্পাদনা করেন। তার সম্পাদিত পত্রিকায় কাজ করে বর্তমান প্রজন্মের অনেক সংবাদকর্মী হাতেখড়ি শিক্ষা নেন। তিনি ছিলেন স্থানীয় অনেক সাংবাদিকদের শিক্ষাগুরু। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি কৃষি বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এলে হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান শাহ এএমএস কিবরিয়া অর্থমন্ত্রী হলে নোমান চৌধুরী গুঙ্গিয়াজুরী হাওর উন্নয়ন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেন। অর্থমন্ত্রী তার প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেন। ১৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। পরে তা একনেকে অনুমোদন পায়। বর্তমানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত