নিজস্ব প্রতিবেদক

০৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০১:০৭

এবার স্বপরিবারে দণ্ডিত রাগীব আলী

এরআগে আরো দুটি মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন। তবে সে দুটিতে কেবল বাবা আর ছেলেই শাস্তি পেয়েছেন। এবার একেবারে স্বপরিবারে দণ্ডিত হলেন সিলেটের বিতর্কিত শিল্পপতি রাগীব আলী।

সিলেটের প্রতারণার মাধ্যমে দেবোত্তর সম্পত্তির তারাপুর চা-বাগান দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় বৃহস্পতিবার রাগীব আলীসহ তাঁর ছেলেমেয়ে, জামাতা ও এক আত্মীয়কে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করে আদালত।

এই মামলায় রাগীব আলীর স্ত্রী রাবেয়া খাতুন চৌধুরীও আসামী ছিলেন। প্রয়াত হওয়ায় আসামী তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

প্রতারণার মাধ্যমে তারাপুর চা বাগান দখল করে সম্পত্তি আত্মসাতের মামলায় বৃহস্পতিবার দুপুরে রায় প্রদান করেন সিলেট মহানগর মূখ্য হাকিম আদালতের বিচারক সাইফুজ্জামান হিরো। রায়ে রাগীব আলীর ১৪ বছর, ছেলে আবদুল হাই, জামাতা আবদুল কাদির, মেয়ে রুজিনা কাদির ও নিকটাত্মীয় দেওয়ান মোস্তাক মজিদকে ১৬ বছরের কারাদ- প্রদান করা হয়।
এই মামলার অপর আসামী তারাপুর চা বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে খালাস প্রদান করেন আদালত।

সিলেটের সরকারী কৌশলী মিসবাহউদ্দিন সিরাজ জানান,  আসামীদের চারটি ধারায় এ দন্ড প্রদান করা হয়। রাগীব আলীকে ৪৬৭ ও ৪৬৮ ধারায় ৬ বছর করে ও ৪২০ ও ৪৭১ ধারায় এক বছর করে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দণ্ডিত অন্য চার জনের প্রত্যেককে ৪৬৭ ও ৪৬৮ ধারায় সাত বছর ও ৪২০ ও ৪৭১ ধারায় এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।  দণ্ডিত পাঁচ জনকেই প্রতিটি ধারায় ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাস করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

দণ্ডিতদের মধ্যে রাগীব আলী ও ছেলে আবদুল হাই কারাগারে, জামাতা আবদুল কাদির ও মেয়ে রোজিনা কাদির পলাতক এবং নিকটাত্মীয় মৌলভীবাজারের রাজনগরের বাসিন্দা দেওয়ান মোস্তাক মজিদ জামিনে ছিলেন।

এই রায়ের সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মিসবাহউদ্দিন সিরাজ। তবে আসামী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল মুকিত অপি রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমরা আগেই এই আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছি। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপীল করবো।

এর আগে, গত ২ ফেব্রুয়ারি তারাপুর চা বাগানের ভূমি বন্দোবস্তের নামে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি মামলার রায় দেন একই আদালত। রায়ে রাগিব আলী ও তার ছেলেকে ১৪ বছরের কারাদন্ডাদেশ দেওয়া হয়।

এছাড়া মামলায় আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যুর পর পলাতক থাকাবস্থায় পত্রিকা প্রকাশের কারণে রাগীব আলী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে দায়ের করা অন্য একটি মামলার রায়ে রাগীব আলী ও তার ছেলেকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালত। বর্তমানে এসব মামলায় কারাগারে সাজা ভোগ করছেন রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাই।

দেবোত্তর সম্পত্তির চা বাগান বন্দোবস্ত নেওয়া ও চায়ের ভূমিতে বিধি বহির্ভূত স্থাপনা করার অভিযোগে ২০০৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম আবদুল কাদের বাদী হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি ও সরকারের এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দু’টি করেন। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে মামলার নিষ্পত্তি করে দেয় পুলিশ।

মামলা দু’টি গত বছরের ১৯ জানুয়ারি পুনরুজ্জীবিত করার নির্দেশ দেন সুপ্রিমকোর্ট।
এই মামলায় গত বছরের ১০ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল এবং ১২ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে এদিনই রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাই সপরিবারে ভারতে পালিয়ে যান। ১২ নভেম্বর দেশে ফেরার পথে জকিগঞ্জ সীমান্তে আবদুল হাই ও ২৩ নভেম্বর ভারতের করিমগঞ্জে গ্রেপ্তার হন রাগীব আলী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত