হামিদুর রহমান, মাধবপুর

১০ এপ্রিল, ২০১৭ ১৬:৫০

মাধবপুরে গোপিনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদে ডাক্তার ওরা

ছোট ছোট ভাবনা, ছোট ছোট স্বপ্ন আর ছোট ছোট কাজের সমষ্টিই জীবন। প্রতিটি চিন্তা প্রতিটি স্বপ্ন প্রভাবিত করে মানুষের জীবনকে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরও রয়েছে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। স্বপ্ন বা মন ছবি অথবা বলা যেতে পারে ‘জীবন ছবি’। আর এটা হলো বড় হওয়ার স্বপ্ন, জীবনে একটা কিছু করার স্বপ্ন। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের গোপিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষার্থীর এমনটাই স্বপ্ন, ওরা ডাক্তার হবে।

ওদের সে স্বপ্ন ত্বরান্বিত হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রমের মাধ্যমে। গোপিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চোখে পড়ে এ ৬ ক্ষুদে ডাক্তার। সবাই ভীষণ ব্যস্ত। কেউ রোগীদের নাম তালিকাভুক্ত করছে, কেউ গম্ভীর মুখে ওজন মাপছে, আবার কেউ দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করছে।

শিক্ষার্থীরা জানায়, তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির তুলনামূলকভাবে চটপটে এবং বাকপটু শিক্ষার্থীদের ‘ক্ষুদে ডাক্তার’ বানাতে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। ৬ জন শিক্ষার্থীর একটি দল বিদ্যালয়ে কাজ করছে। ৬ জনের এ ক্ষুদে ডাক্তারদের এ দলটি একজন করে গাইড শিক্ষক রুবিনা আক্তার চৌধুরী দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিদ্যালয়ে উচ্চতা মাপার ফিতা, দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার চার্ট (আই চার্ট অথবা ই-চার্ট) এবং ওজন মাপার মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে। গোপিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদে ডাক্তারদের এ কার্যক্রমটির গাইড শিক্ষক হিসেবে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন সহকারী শিক্ষক আঞ্জুব আলী। শিক্ষকরা সপ্তাহে একদিন করে ক্ষুদে ডাক্তারদের প্রাথমিক চিকিৎসার ওপর বিশেষ ক্লাস নিচ্ছেন।

ক্ষুদে ডাক্তাররা হচ্ছেন ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান ইমন, ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান রতন ও পলি আক্তার, ৪র্থ শ্রেণীর আশিক মিয়া ও নুপূর আক্তার ও ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী স্বর্ণা আক্তার।

গোপিনাথপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রমটি আমাদের মাধবপুর মাধবপুর উপজেলার ১৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে আমাদের উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছিদ্দিকুর রহমানের প্রচেষ্টায়। এক শিশু আরেক শিশুর ওজন ও উচ্চতা পরিমাপ করবে, চোখের দৃষ্টি ঠিক আছে কিনা তাও পরীক্ষা করবে।

জানা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার একটি অংশ হচ্ছে ফাইলেরিয়াসিস নির্মূল ও কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। বিদ্যালয়ে কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে জোরদার করার লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ২০১৬ সাল থেকে উদ্ভাবন করা হয় এই ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রম। পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৃমি নিয়ন্ত্রণ, জলাতঙ্ক, ম্যালেরিয়া, পুষ্টিহীনতা, ভিটামিন এ-প্লাস, ক্যাম্পেইন, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য’ পরিচর্যা বিষয়ে স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রদানসহ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।

মাধবপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ছিদ্দিকুর রহমান বলেন ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে তারা দেশ ও জাতির সেবায় এগিয়ে আসবে। এখন থেকে তারা ডাক্তার হওয়ার লক্ষ্যে ভালো করে পড়াশোনা করবে বলে মনে করছেন তিনি।

উল্লেখ্য, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ উপজেলার প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ক্ষুদে ডাক্তারদের দিয়ে শিক্ষকদের সহযোগিতায় কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে শিশু শিক্ষার্থীদের।


আপনার মন্তব্য

আলোচিত