নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ এপ্রিল, ২০১৭ ০১:০৬

সব হারানো শাহানার বিয়েও এখন ‘অনিশ্চিত’

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মকর্তা শাহানা বেগম। আতিয়া মহলের ৩য় তলায় ভাড়া থাকতেন। ২৪ এপ্রিল তার বিয়ের দিন ধার্য করা ছিলো। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

স্বর্ণালঙ্কার তৈরি, কেনাকাটা করা সব প্রস্তুতিই সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু আতিয়া মহলের জঙ্গি নির্মূল অভিযান 'সব শেষ' করে দিয়েছে শাহানার। ১৬ দিন পর মঙ্গলবার আতিয়া মহলে নিজ ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখেন স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সব জিনিসপত্রই খোয়া গেছে। আসবাবপত্রে পুড়ে যাওয়া আসবাব ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

নিজের ফ্ল্যাটের নিঃস্ব অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শাহানা। বলেন, আমি একেবারে শেষ হয়ে গেলাম। আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে।

শাহানা বলেন, ২৪ এপ্রিল আমার বিয়ের তারিখ নির্ধারিত ছিলো। আমি শৗৈখিন মানুষ, কেনাকাটা আমার শখ। আমার অনেক জামা কাপড়। বিয়ের সব স্বর্ণালঙ্কারও বাসায় রাখা ছিলো। এখন সব শেষ। এখন সবই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার সকালে সিলেট নগরীর শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহলে গিয়ে দেখা কথা হয় শাহানার সাথে। কেবল শাহানা নয়, এই বাসার আরো ভাড়াটিয়াই জানিয়েছেন বাসায় থাকা সব জিনিসপত্র হারিয়ে গেছে তাদের। কিছুই খোঁজে পাননি।

২৩ মার্চ রাতে পুলিশ এই বাসায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর গত ২৫ মার্চ সকালে সেনাবাহিনীর ভবনটির ২৮ টি ফ্ল্যাটে থাকা ৭৮ বাসিন্দাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। সেসময় এক কাপড়ে আসা এই বাসিন্দারা নিজেদের সব মালপত্র ফেলে আসেন বাসার ভেতরে।

জঙ্গি অভিযান ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ অভিযান শেষে মঙ্গলবার সকালে আতিয়া মহলের ভাড়াটিয়াদের মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো নিজেদের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। তবে ১৬ দিন পর নিজ বাসায় ঢুকে অনেকেই খুঁজে পাননি নিজেদের আসবাবপত্র, টাকাপয়সা আর স্বর্ণালঙ্কার।

পুরো ভবনটি যেনো একটি পুড়া বাড়ি। পুড়ে কালচে হয়ে গেছে বেশিরভাগ দেওয়াল। অনেক দেওয়ালই ভাঙ্গা। দেওয়ালজুড়ে গুলি-বিস্ফোরণের ক্ষত, পুড়ে গেছে বৈদ্যুতিক পাখা, ফ্রিজ, টিভির মতো বৈদ্যুতিক সামগ্রী।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ভবনটির নিচ তলার বাসিন্দারা। নিজ তলার একটি ফ্ল্যাটেই ছিলো জঙ্গিরা। এই তলার অন্য পাঁচ ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়ারা মঙ্গলবার নিজেদের বাসায় ঢুকে প্রায় কিছুই পাননি। সবকিছু ঝাঁঝরা হয়ে গেছে।

নিচ তলায়ই পরিবার নিয়ে থাকতেন পশু চিকিৎসক শ্যামসুন্দর ঘোষ। তিনি বলেন, সারাজীবন রোজগার করে যা কিছু গড়েছিলাম তার সব শেষ হয়ে গেছে। কিছুই পাইনি। বাকী জীবন রোজগার করেও আর এগুলো গড়া যাবে না।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই ভাড়াটিয়ারা নিজেদের আসবাবপত্র আতিয়া মহল থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া শুরু করেন। অনেকেই এরমধ্যে খুঁজে নিয়েছেন নতুন বাসা।

সিলেট নগরীর মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল বলেন, সোমবার র‌্যাব অভিযান শেষে ভবনটিকে ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণার পর মঙ্গলবার আমরা তালিকা দেখে সকল ভাড়াটিয়াদের ভেতরে পাঠিয়েছি। তাদের নিজেদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, ভবনটি বিধ্বস্ত থাকায় এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এখনই কেউ এখানে থাকতে পারবেন না। তা নিজেদের মালপত্র নিয়ে যেতে পারবেন।

অনেকের টাকাপয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার খোয়া যাওয়া প্রসঙ্গে খায়রুল ফজল বলেন, নিচ তলায় তো আর কিছু পাওয়ার কথা নয়। তবে উপরের তলাগুলো থেকে কিছু খোয়া যাওয়ার সুযোগ নেই। এমন প্রশ্ন উঠতে পারে ভেবে আমি এখন পর্যন্ত ভবনের ভেতরে কোনো পুলিশ ঢুকতে দেইনি। র‌্যাব ভবনটি বুঝিয়ে দেওয়ার পরই ভাড়াটিয়াদের ডেকে এনেছি। তারা মালামাল সরিয়ে নেওয়ার পর আমরা ঢুকবো।

তিনি বলেন, তারপরও কারো কিছু হারিয়ে গেলে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা খুঁজে দেখবো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত