নিজস্ব প্রতিবেদক ও গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি

২৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:৩২

আগস্টেই চালু হচ্ছে সিলেটের প্রথম স্থল বন্দরের কার্যক্রম

দীর্ঘ অপেক্ষার পর আগামী আগস্টেই চালু হচ্ছে তামাবিলে নির্মানাধীন সিলেটের প্রথম স্থল বন্দরের কার্যক্রম। স্থলবন্দরটি অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শেষ পর্যায়ে জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছৈন, আগামী মাসেই এটির কার্যক্রম উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা যায়, ২০০১ সিলেটের তামাবিল শুল্ক স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করেছিলো নৌ ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে প্রায় ১৪ বছর পর ২০১৫ সাল থেকে স্থল বন্দরের জমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামো নির্মান কাজ শুরু হয়। কথা ছিলো ২০১৬ সালের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু হবে। তবে নির্মান কাজের ধীরগতির কারণে গত বছরে চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ করে কার্যক্রম উদ্বোধনের আশা ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিস্টরা।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজের সাথে সম্পৃক্তরা জানিয়েছেন, কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ হয়ে গেছে। আগামী মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়ে যাবে। আগস্টেই স্থল বন্দরের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে।

তামাবিল শুল্ক স্টেশনের শুল্ক কর্মকর্তা আবু জাফর মো. রায়হান বলেন, অনেকদিন থেকেই শুনতে পাচ্ছি এই স্থল বন্দরের কার্যক্রম উদ্বোধন হবে। তবে কাজ শেষ না হওয়ায় এটি বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। এখন শুনছি আগামী আগস্টে উদ্বোধন হবে।

সিলেটের ব্যবসায়ীরা জানান, তামাবিল স্থল বন্দরের কার্যক্রম শুরু হলে ভারতের সাত রাজ্যসহ ভূটানের আমদানি রফতানি আরো প্রসারিত হবে। বর্তমানে অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা না থাকায় সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ব্যবসা বাড়ছে না। স্থল বন্দর কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বিলম্বের কারণেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, সিলেটের তামাবিল শুল্ক স্টেশনকে ২০০১ সালে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের অক্টোবরে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহাজান খান সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল শুল্ক স্টেশনকে স্থল বন্দরে উন্নীতের কাজের উদ্বোধন করেন। সে সময় বলা হয়েছিলো ২০১৬ সালের মধ্যে এই বন্দরের কার্যক্রম শুরু হবে।
বন্দরে উন্নীতের কার্যক্রমের মধ্যে ২৩.৭২ একর ভূমি অধিগ্রহণ, এক লাখ নয় হাজার ৩৩০ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, দুই হাজার ৫০০ মিটার বাউন্ডারি ওয়াল তৈরি, আট হাজার ১৮০ বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ, ২৭ হাজার বর্গমিটার ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ড নির্মাণ, ৭৪৪ বর্গমিটার ওয়্যারহাউস নির্মাণ, এক হাজার ৩৪৯ বর্গ মিটার অফিস, ডরমেটরি ও ব্যারাক ভবন নির্মাণ, দুই হাজার মিটার ড্রেন নির্মাণ, দুটি ওয়েব্রিজ ও দুটি ১০০ মেট্রিকটন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ওয়েহিং স্কেল সংগ্রহ করা, পাঁচটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া কম্পিউটার ফটোকপি, জীপসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ক্রয় করা হবে বলেও জানান সংশ্লিস্টরা। এসব উন্নয়ন কাজে ব্যয় হচ্ছে ৬৯ কোটি টাকা।

এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রধানত কয়লা, চুনাপাথর, পাথর ও ফল আমদানি করা হয় এবং প্রসাধন সামগ্রী, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও ইট রফতানি করা হয়।

তামাবিলে বন্দর কর্তৃপক্ষের কোন স্থাপনা না থাকায় আমদানিকারকরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভাড়া করা জায়গায় আমদানিকৃত মালামাল সংরক্ষণ ও লোডিং-আনলোডিংয়ের কাজ করে থাকেন বলে জানান আমদানীকারকরা। দেশের ব্যস্ততম এই শুল্ক স্টেশনে ওয়েটব্রিজ না থাকায় আমদানি-রফতাকিৃত পণ্যের সঠিক ওজন পরিমাপ করতে না পারায় সরকার প্রচুর পরিমাণ শুল্ক হতেও বঞ্চিত হচ্ছে বলেও মন্তব্য শুল্ক কর্মকর্তাদের।

তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক পার্থ ঘোষ বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের প্রায় ৯৫ ভাগেরও বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে।  অচিরেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এই স্থলবন্দরের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এ স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যেও ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।

সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ বলেন, ভারতের সাত রাজ্যসহ ভ’টানের সাথে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদাও রয়েছে সেখানে। কিন্তু সুযোগ সুবিধা না থাকায় ব্যবসায়ীরা এদিক দিয়ে পণ্য রফতানিতে আগ্রহী নন। স্থল বন্দর হলে সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলবে।

স্থানীয় (সিলেট-৪) সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ বলেন, সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ অপচেষ্টায় তামাবিলকে একটি আধুনিক স্থলবন্দর হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে। সরকার দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ এবং স্থানীয় কর্মসংস্থানকে তরান্মিত করতে অত্যান্ত আন্তরিক। তাই শুধু তামাবিল স্থলবন্দরই নয়, তামাবিলের পাশে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলও গড়ে তোলতে মহাপরিকল্পনা এগিয়ে চলছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত