নবীগঞ্জ সংবাদদাতা

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৩:৩৫

আইএস জঙ্গি সামিউনের হবিগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে আতঙ্ক

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ জঙ্গি  নবীগঞ্জের পল্লীতে জন্ম নেয়া আইএস জঙ্গি সামিউন রহমান ইবনে হামদু ঢাকা থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে আত্মগোপনে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার পাসপোর্ট জব্দ করে রাখলেও অবৈধভাবে সে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রবেশ করেছিল। গত রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর)  দিল্লির বিশেষ পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

জঙ্গি সামিউনের গ্রেপ্তার নিয়ে তার গ্রামের বাড়ি নবীগঞ্জে তোলপাড় হচ্ছে। আতঙ্ক বিরাজ করছে এলাকাবাসীর মধ্যে; তার কোন সহযোগী এখানে আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

জঙ্গি সামিউন ইবনে হামদু নবীগঞ্জ উপজেলার ফুটারচর গ্রামের লন্ডন প্রবাসী হামদু মিয়ার ছোট ছেলে। তার তিন বোন দুই ভাই সবাই লন্ডন সবাই লন্ডন থাকে।

পুলিশ সূত্রে জানাযায়, ভারতে সামিউন নিজেকে সুমন হক বলে পরিচয় দিয়েছিল। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে নিজের আসল পরিচয় দেয়। এরপর দিল্লি পুলিশ ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হওয়া একজন ব্রিটিশ জঙ্গি, যার বিরুদ্ধে আইএস, নুসরা ফ্রন্ট ও আল-কায়েদার জন্য সদস্য সংগ্রহের অভিযোগ রয়েছে, সে কিভাবে জামিন পেলো? আর কিভাবেই বা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে প্রবেশ করলো? এনিয়ে তীব্র আলোচনা হচ্ছে।

সামিউনের গ্রামের মেম্বার আব্দুল আজিজ বলেন, আমরা সবাই সামিউনের নাম শুনলে ভয় পাই। গ্রামের মানুষ জঙ্গি সামিউন ঘৃণার চোখে দেখে। গ্রামবাসী তার বিচার চায়। সে কি করে ভারতে গেলো আমরা গ্রামবাসী হতবাক হয়েছি।

এদিকে এ বিষয়ে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটে  প্রধান মনিরুল ইসলাম মিডিয়ায় বলেছেন, অন্যান্য জঙ্গির ক্ষেত্রে যেমন জামিন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট পক্ষ তাদেরকে (সিটিটিসি) জানায়, কিন্তু সামিউন রহমানের জামিন বা কারামুক্তির ক্ষেত্রে তাদের কোনও তথ্য জানানো হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে সামিউন রহমানকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সেসময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ব্রিটিশ নাগরিক সামিউন রহমান সিরিয়া ফ্রন্টে সশস্ত্র জিহাদি কার্যক্রম পরিচালনা করতে আইএস ও নুসরা ব্রিগেডের জন্য মুজাহিদ সংগ্রহ করতে বাংলাদেশে এসেছিল। আল-কায়েদা নেতা আইমান আল  জাওয়াহারী ঘোষিত একিউআইএস বা আল-কায়েদা অব ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট -এর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে জঙ্গি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যও ছিল তার।

জানা যায়, সামিউনকে গ্রেপ্তারের আগে ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে সেগুনবাগিচা ও ইস্কাটন এলাকা থেকে আসিফ আদনান ও ফজলে এলাহি নামে দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই পরে গ্রেপ্তার করা হয় এই ব্রিটিশ জঙ্গি সামিউন রহমানকে। আসিফ আদনান ও ফজলে এলাহির বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যে মামলা (নং ৫২, তারিখ ২৪/৯/২০১৪) দায়ের করা হয়, ওই মামলাতেই গ্রেপ্তার দেখানো হয় সামিউনকে। প্রায় দুই মাস আগে ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসলাম আলী শেখ তিন জনকেই অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন। ঢাকার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সামিউনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট জঙ্গি তৎপরতার প্রমাণ পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।’

কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল মাসে উচ্চ আদালত থেকেই জামিনে ছাড়া পেয়ে পালিয়ে যায় সামিউন রহমান। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরপরই আত্মগোপনে চলে যায় এবং  জুলাই মাসে বৃহত্তর সিলেটের সীমান্ত পথে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। এরপর ভারতের মনিপুরে চলে যায়। সেখানে কিছুদিন অবস্থান করার পর বিহারের কিশানগঞ্জে গিয়ে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে সামিউন রহমান।

গত রোববার দিল্লির ভিকাস মার্গ রোড থেকে সামিউন রহমানকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বিহারের কিশানগঞ্জ এলাকায় সুমন হক নামে ভোটার আইডি নিয়েছিল সে। বিহারের কিশানগঞ্জ এবং হাজারীবাগ এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসায় সে অবস্থান করেছে।

ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের হাতে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সামিউন জানিয়েছিল, সে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সিরিয়ায় গিয়ে নুসরা ফ্রন্টের হয়ে জিহাদে অংশ নিয়েছিল। জিহাদে অংশ নিতে এক ব্রিটিশ বন্ধুসহ সেসময় তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় যায় সামিউন। পরবর্তীতে পিস টিভির উপস্থাপক অ্যানথনির ফেসবুক ফ্যান পেজের সূত্র ধরে বাংলাদেশ থেকে জিহাদে অংশ নিতে ইচ্ছুক তরুণদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক থেকে ঢাকায় আসে সে।

এছাড়া  অনলাইনের মাধ্যমে পরিচয়ের পর সামিউন একাধিকবার বৈঠক করে আসিফ আদনান ও তানজিলের সঙ্গে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সেসময় সামিউনের সব বাংলাদেশি সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। যদিও একমাত্র তাসনিম বাদে সবাই জামিন নিয়ে বর্তমানে বাইরে রয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে ব্রিটিশ জঙ্গি সামিউন রহমানের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ  বলেছেন, ‘গ্রামে আব্দুল মুইয়ীদ নামে সামিউনের একমাত্র চাচাতো ভাই রয়েছে। বাকি সদস্যরা সবাই লন্ডনে। ২০১৪ সালে গ্রেপ্তারের পর সামিনউনকে আর গ্রামে কখনও দেখা যায়নি।’ জামিনে বেরিয়ে সে আর গ্রামে আসেনি বলেও জানান ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত