সিলেটটুডে ডেস্ক

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৬:৩৪

বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে হবিগঞ্জে বাপা ও খোয়াই ওয়াটারকিপারের উন্মুক্ত সভা

খোয়াই, সুতাং, সোনাই, কুশিয়ারা, করাঙ্গী, ঝিংড়ী, ভেড়ামোহনা, বিজনা, ঝনঝনিয়া প্রভৃতি চমৎকার শৈল্পিক নামের নদীগুলো হবিগঞ্জকে মায়ের মতোই আচল দিয়ে ঘিরে রেখেছে। কিন্তু নদী দখল, দূষণ, বালুদস্যুদের বেপরোয়া তাণ্ডব, শিল্পবর্জ্য দূষণ এর কারণে আমাদের নদীগুলোর অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উন্মুক্ত সভায় বক্তারা উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখা ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার এই সভার আয়োজন করে। বাপা জেলা সভাপতি অধ্যাপক মো. ইকরামুতার সভাপতিত্বে ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল এর সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক বাপা হবিগঞ্জের সহ-সভাপতি এডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, তাহমিনা বেগম গিনি, সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হক, হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকেয়া খানম, শিক্ষক হেলানুচ্ছামা, রোটারী ক্লাব অব হবিগঞ্জ খোয়াই এর চার্টার প্রেসিডেন্ট ডা. এস এস আল-আমিন সুমন ও এডভোকেট সৈয়দ জাদিল উদ্দিন আহমেদ।

শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন মুক্তাদির হোসেন, ওসমান গণি রুমি, মিসবাহ উদ্দিন জুয়েল, ফয়জুর রহমান রবিন, আমিনুল ইসলাম, দিলারা খানম, তৌহিদুর রহমান রানা, আবিদুর রহমান রাকিব, মো. ফাহিম তালুকদার, মো. মাঈনুল ইসলাম, ফাহমিদা আক্তার প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী তৌহিদুর রহমান রানা বলেন, মাধবপুরে সোনাই নদীর বুকে গড়ে উঠেছে সাহয়াম ফিউচার কমপ্লেক্স। এতে করে নদী প্রবাহে বিঘ্ন ঘটছে। চোখের সামনে এত বড় একটি স্থাপনা নির্মাণ হলেও যেন কেউই দেখছেন না।

শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, ঐতিহ্যবাহী সুতাং নদী শিল্প বর্জ্য দূষণে শেষ হতে বসেছে। কলকারখানার বর্জ্য সুতাং নদীতে সরাসরি নিক্ষেপ হচ্ছে। ফলে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং নদীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। নদীর পানি কৃষকরা ব্যবহার করতে পারছেন না। ধানসহ ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

ওসমান গণি রুমি পুরাতন খোয়াই নদী সম্পর্কে বলেন, দখল-দূষণে পুরাতন খোয়াই নদী মাত্রা ছাড়িয়েছে। যেটুকু অবশিষ্ট আছে সেটুকুও কিছুদিন পর আর দেখা যাবে না। শহরের সর্ববৃহৎ ডাস্টবিনে রূপান্তরিত হয়েছে পুরাতন খোয়াই।

খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার ও জেলা বাপা সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল হবিগঞ্জের নদীগুলোর বর্তমান চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা নদীগুলোকে বাঁচাতে চাই। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীগুলো আজ নানামুখী অত্যাচারে চরম বিপর্যয়ের শিকার। নদী নিয়ে ব্যবসা করা, নদী দখল ও হত্যা করে তা থেকে আর্থিক ফায়দা লুটা হচ্ছে, নদীর উপর বাড়ি-ঘর, স্থাপনা নির্মাণ, নদীকে দূষণ করা ইত্যাদি সকল অন্যায় ও অবৈধ আয়োজনই নদীর জন্য করা হচ্ছে। দৃশ্যত: দেখা যায় নদী নিয়ে ভাবার জন্য যেন কেউ নেই।

তিনি আরো বলেন, শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা খোয়াই নদী কি পরিমাণ বিপদজনক অবস্থায় পৌঁছেছে তা আমরা টের পেয়েছি বিগত ১৯ ও ২০ জুন ১ রাত ও ২ দিনের চরম উৎকণ্ঠায়। খোয়াইর তীর দখল হয়ে গেছে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালি উত্তোলন হচ্ছে। বালি-মাটি উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে শত বৎসরের পুরোনো “গরুর বাজার নৌকাঘাট” হারিয়ে গেছে। এটি কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়। কৃষি জমিতে কলকার-কারখানা স্থাপনে প্রচলিত নীতি ও আইন বিরুদ্ধ হলেও এই অঞ্চলে তা অতি দ্রুত বিস্তার করেছে। ফলে শিল্পবর্জ্য দূষণের মাত্রা ছাড়িয়েছে। হবিগঞ্জে গড়ে উঠা শিল্পাঞ্চলের ছড়িয়ে পড়া বর্জ্যরে দূষণের প্রতিরোধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে দূষণের মাত্রা আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মো. ইকরামুল ওয়াদুদ বলেন, হবিগঞ্জের পরিবেশ ও প্রাণ প্রকৃতির রক্ষার ক্ষেত্রে অপরিহার্য খোয়াই নদী, পুরাতন খোয়াই, সুতাং, সোনাইসহ  অন্যান্য নদী রক্ষার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা দেখছিনা। আমরা সচেতনতার সৃষ্টির চেষ্টা করছি। তবে সরকারের কর্তা ব্যক্তিগণ, সচেতন সুধী সমাজ নদী ও পরিবেশ রক্ষায় যথাযথ ভূমিকা পালন না করলে বর্তমানে নদীগুলো ও জেলার পরিবেশ যে অবস্থায় রয়েছে ভবিষ্যতে এই অবস্থাও নষ্ট হয়ে যাওয়ার সমূহ আশংকা রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত