সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০১:০৭

জনপ্রতি স্বাস্থ্যব্যয় সবচেয়ে কম সিলেটে

সিলেটে বেড়েই চলছে বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা। সরকারী হাসপাতালে মিলছে না পর্যাপ্ত সেবা। তাই বাধ্য হয়ে বেসরকারিগুলোতেই ছুটছেন রোগীরা। এখানকার চিকিৎসকরাও প্রাইভেট প্র্যাকটিসমুখী। ফলে বেড়েই চলছে সিলেটে স্বাস্থ্যব্যয়।

তবে  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের অধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টের (বিএনএইচএ) তথ্য বলছে, দেশের সাতটি বিভাগের মধ্যে সিলেটে জনপ্রতি স্বাস্থ্যব্যয় সবচেয়ে কম। আর সবচেয়ে বেশি ঢাকায়।

সামান্য অসুখেও বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের কাছে ধর্ণ দেওয়া, সরকারি হাসপাতালের চেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্সা নেয়ার ঝোঁকের কারণে ঢাকায় স্বাস্থ্যব্যয় সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে।

বিএনএইচএর তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ঢাকা বিভাগে জনপ্রতি বার্ষিক ব্যয় হয় ৩ হাজার ৮৩২ টাকা। এ ব্যয়ের পরিমাণ খুলনায় জনপ্রতি ৩ হাজার ৩১৫ টাকা, রাজশাহীতে ২ হাজার ৫৮০, চট্টগ্রামে ২ হাজার ৩৯১, বরিশালে ২ হাজার ২৬৯, রংপুরে ১ হাজার ৯০০ ও সিলেটে ১ হাজার ৫৫০ টাকা।

সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মোট ব্যয়ের মাত্র ৪ শতাংশ হয় সিলেট বিভাগে। বরিশাল বিভাগেও ৪ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে। এছাড়া মোট ব্যয়ের ১৬ শতাংশ চট্টগ্রামে, ১২ শতাংশ খুলনায়, ১১ শতাংশ রাজশাহীতে ও ৭ শতাংশ রংপুরে ব্যয় হয়। তবে ৪৬ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে ঢাকা বিভাগে। এর অন্যতম কারণ এখানে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞ চেম্বার ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ-সুবিধাও ঢাকাকেন্দ্রিক। ফলে এখানে স্বাস্থ্য বরাদ্দও বেশি হচ্ছে।

বিএনএইচএর ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে জনপ্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ৬৭ টাকা মানুষের পকেট থেকে ব্যয় হচ্ছে, যা ২০১২ সালে ছিল ৬৩ শতাংশ। আর সরকার জনপ্রতি ২৩ টাকা, দাতা সংস্থাগুলো ৭ টাকা ও অন্যান্য সংস্থা ৩ টাকা ব্যয় করছে। ব্যক্তির জনপ্রতি স্বাস্থ্যব্যয় ৬৭ টাকার মধ্যে ৪৬ দশমিক ৬ টাকা চলে যাচ্ছে ওষুধপত্র ক্রয়ে।

জনপ্রতি স্বাস্থ্যব্যয় বেশি যাওয়ার অন্যতম কারণ  সরকারির চেয়ে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি। সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চিকিত্সা করতে গেলে সবাই নানা ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকে। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় তা সম্ভব নয়। এছাড়া চিকিত্সকদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির একটি অনৈতিক লেনদেনের কারণে রোগীকে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হচ্ছে। ফলে  চিকিত্সা নিতে গিয়ে ব্যয় বাড়ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা বিভাগের বসিন্দারা সামান্য সর্দি-কাশি হলে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের শরণাপন্ন হচ্ছে। সেখানে যাওয়ার পর ওই রোগীকে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দেয়া হচ্ছে। আবার রোগ ভালো না হওয়ায় হঠাত্ চিকিত্সক পরিবর্তন করা এবং সেখানেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালের শয্যা ভাড়াও ঢাকায় সবচেয়ে বেশি। ফলে ঢাকায় স্বাস্থ্যব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, স্বাস্থ্যসেবার সব উপাদানের অধিকাংশই ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকা বিভাগের অধিকাংশ জেলার চিকিত্সাসেবা শহরকেন্দ্রিক। এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক, গুণগত ওষুধপত্র, শয্যা ভাড়া ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফিও অনেক বেশি। ফরমাল কেয়ার প্রোভাইডার ঢাকায় বেশি ও সিলেটে কম। ফলে ঢাকায় জনপ্রতি স্বাস্থ্যব্যয় বেশি ও সিলেটে কম।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক আসাদুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় হাসপাতাল বেশি, বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক বেশি এবং বাসিন্দারা সামান্য সর্দি-কাশি নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের শরণাপন্ন হচ্ছে। হেলথ সিস্টেম বিহ্যাভিয়ারের কারণে ঢাকায় স্বাস্থ্যব্যয় বেশি ও সিলেটে কম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত