নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ নভেম্বর, ২০১৭ ১৭:৪০

কলেজে ক্লাস হয় না, প্রতিবাদে অনশনে মুক্তিযোদ্ধা

কলেজে নিয়মিত ক্লাস না হওয়া ও  শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ায় উব্ধুদ্ধ করার প্রতিবাদে অনশন করেছেন সুনামগঞ্জের এক মুক্তিযোদ্ধা। বৃহস্পতিবার সকালে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা অনশন করেন মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেন।

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের বারান্দার ফ্লোরে বসে অনশন শুরু করেন মালেক হোসেন পীর। এসময় তিনি কলেজে শিক্ষক নিয়োগ, নিয়মিত ক্লাস নেওয়া ও প্রাইভেট পড়া বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। প্রায় দুই ঘণ্টা পর জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে অনশন ভেঙে বাড়ি ফেরেন মালেক হোসেন।

এ ব্যাপারে মালেক হোসেন পীর সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তাঁর মেয়ে সানজিদা আক্তার সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ে স্নাতক শিক্ষার্থী। বুধবার তার ইংরেজি আবশ্যিক বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষে তিনি মেয়ের কাছে পরীক্ষা কেমন হয়েছে জানতে চাইলে মেয়ে জানায়, পরীক্ষা ভালো হয়নি। এ বিষয়ে কলেজে কোন ক্লাস না হওয়ায় পরীক্ষায় ভালো হয়নি বলে বাবাকে জানায় মেয়ে।

মালেক হোসেন বলেন, “শুধু সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ না, সুনামগঞ্জের সবকটি স্কুল ও কলেজে একই অবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর কোন ক্লাস হয় না, অথচ প্রাইভেটে পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে সব শিক্ষকের কাছেই।''

তিনি বলেন, ''মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রাপ্ত সামান্য ভাতা দিয়ে সংসার চালিয়ে মেয়েকে প্রাইভেট পড়ানোর ব্যবস্থা করা যায় না।“

মালেক হোসেন বলেন, “আমার প্রতিবাদ কেবল আমার মেয়ের জন্য নয়, বরং পুরো ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। সুনামগঞ্জের সবকটি স্কুল ও কলেজের অবস্থা একইরকম যার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম সংকট, ক্লাস না নিয়ে প্রাইভেট পড়ানোসহ সবধরনের শিক্ষাবিরোধি কার্যক্রম দ্রুত বন্ধ করা উচিত।'

তবে মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেনের অভিযোগের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার।

তিনি বলেন, “আমার কলেজে ইংরেজি বিষয়ে প্রয়োজনের থেকে একজন বেশি শিক্ষক রয়েছেন। আর ওই শিক্ষার্থীর ফাইনাল পরীক্ষা না বরং অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ছিল যার ফলাফলের উপর শিক্ষাক্রম নির্ভর করে না। ওই শিক্ষার্থীর বাবা আমার সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারতেন।''

তবে কলেজের অধ্যক্ষ কলেজে ক্লাসরুম সংকট রয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, “পুরাতন এই কলেজটির সবচেয়ে বড় সংকট ক্লাসরুম, যে কারণে অনেক সময় রুটিন অনুযায়ী ক্লাস নেয়া যায় না, একটি ক্লাস শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত আরেকটি ক্লাস শুরু করা যায় না। এছাড়াও নানা কারণে শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে উপস্থিত থাকেন না। এতে যদি কারো পরীক্ষা খারাপ হয়, তবে তার তার দায় কোনভাবেই কলেজ কর্তৃপক্ষ নিতে পারে না।“

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, “একজন মুক্তিযোদ্ধা আমার কার্যালয়ের বাইরে বসে থেকে প্রতিবাদ করছেন জানামাত্র আমি তাঁর সাথে দেখা করে তাঁর অভিযোগ শুনি এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ নিতে তাঁকে আশ্বস্ত করি।''

তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেন রবিবার লিখিতভাবে তাঁর অভিযোগ দাখিল করবেন আর সেইসাথে জেলা প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করবে। শুধু এই কলেজ নয়, সুনামগঞ্জের সবকটি স্কুল ও কলেজেই শিক্ষক সংকটসহ বাকি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।'

সুনামগঞ্জে কেবলমাত্র শিক্ষক নয়, প্রশাসনিক সকল ক্ষেত্রেই লোকবল সংকট রয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, “যখন কোন স্থান শূন্য থাকে, তখন কেউ না কেউ অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকেন। দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টিও অনুসন্ধান করা হবে।''

এদিকে, অভিনব এই দাবিতে মেঝে বসে মুক্তিযোদ্ধার অনশনের একটি ছবি বৃহস্পতিবার ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকে শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করে মালেক হোসেনের এই প্রতিবাদের প্রশংসা করেন।

সুনামগঞ্জের সাংবাদিক শামস শামীম বৃহস্পতিবার দুপুরে মালেক হোসেনের অনশনের ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করেন। এরপর তা ভাইরাল হয়ে পড়ে।

শামস শামীমের ছবি শেয়ার করে লেখক হাসান মোরশেদ ফেসবুকে লিখেছেন- 'মালেক হোসেন পীর। একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন নাগরিক, একজন অভিভাবক।

একটা সরকারি কলেজে সারা বছর ধরে তার সন্তানের ইংরেজি বিষয়ে ক্লাস হয়নি, আর্থিক অবস্থার কারণে সন্তানকে প্রাইভেট পড়াতে পারেননি, ফলে পরীক্ষা খারাপ হয়েছে।

কেনো ক্লাস হয়নি সারা বছর ধরে? সে প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়ে জেলা প্রশাসকের দরজার সামনে বসে আছেন আড়াই ঘণ্টা ধরে।।

হয়তো জেলা প্রশাসক তার কার্যালয়ে নেই। একটা সরকারী কর্মকর্তা নেই ঐ কার্যালয়ে যে এই মানুষটাকে একটু সম্মান দিতে জানে?

একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন পিতা, একজন মানুষকে!'

আপনার মন্তব্য

আলোচিত