কামরুল ইসলাম মাহি, জগন্নাথপুর

০১ মার্চ, ২০১৮ ১৭:০৫

জগন্নাথপুরে শেষ হয়নি একটি বাঁধের কাজও

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজের বেধে দেওয়া নির্ধারিত সময় বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) শেষ হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে উপজেলার ৯২টি বাঁধের মধ্যে শতভাগ কাজ একটি বাঁধেরও সম্পন্ন হয়নি। এনিয়ে ফসল ঘরে তুলা নিয়ে কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এদিকে আরো ১৫ দিন সময় বাড়ানোর জন্য বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জগন্নাথপুর উপজেলা কাবিটা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, জগন্নাথপুর উপজেলায় এবার বোরো ফসল রক্ষায় ৯২টি পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) গঠন করা হয়েছে।

জেলার অন্যতম হাওর উপজেলার সর্ববৃহৎ নলুয়া হাওর সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এখনও নলুয়া হাওরের ভুরাখালি স্লুইস গেট সংলগ্ন বাঁধ ও হালেয়ার পতিত বাঁধে মাটিই পড়েনি। বৈশাখী বাঁধের কিছু কিছু অংশে মাটির কাজ চলছে। গত বছর এই বাঁধ ভেঙে প্রথমে হাওরে পানি প্রবেশ করে পুরো হাওরের ফসলডুবির ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন।

এছাড়া ভুরাখালি, রাখালগাছ, বৈশাখী, শালিকার বাঁধ, হামহামি, দাসনোয়াগাঁও কুরেরপাড়সহ নলুয়া হাওরের সব কটি বাঁধের কাজ এখনও শেষ হয়নি। ফলে ফসল নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

স্থানীয় কৃষকদের দাবি বেড়িবাঁধের কাজ ৫৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে কোন কোন বাঁধের গুড়া থেকে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। যে কারণে ওইসব বাঁধগুলো হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন কৃষকরা।

কৃষক আব্দুর রউফ বলেন, হাওরের বাঁধগুলোর কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। গত বছর বন্যার কারণে জমির সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হয়ে যায়। অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতে হচ্ছে। এ বছর যদি ফসল গোলায় না তুলতে পারি তাহলে না খেয়েই হয়তো মরতে হবে।

নলুয়া হাওরের ভুরাখালি স্লুইস গেট সংলগ্ন বাঁধের পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) সভাপতি চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরশ মিয়া বলেন, প্রকল্পের কিছু অংশে কাজ চলছে। অপর অংশে এক দুই দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে।

তিনি বলেন, হাওর থেকে দেরিতে পানি নামায় ও বাঁধের কার্যাদেশ দেরিতে পাওয়ায় এবং শ্রমিক ও মাটি কাটার মেশিন সংকট থাকায় নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা দুরূহ হয়ে উঠে। তিনি আরো ১৫ দিন সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

কৃষক নেতা সিদ্দেকুর রহমান বলেন, এবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেড়িবাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় আমরা হতাশ হয়েছি। এখনও একটি বাঁধেরও কাজ শতভাগ হয়নি। এতে করে ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি।

এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ জানান, যথাসময়ে হাওরের বাঁধের কাজ শেষ করার জন্য আমরা মাঠে কাজ করেছি। এরই মধ্যে ১৩ জন পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) সদস্যদের লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বেড়িবাঁধের কাজ শেষ করার জন্য আরো ১৫ দিনে সময় বাড়ানোর জন্য জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে আবেদন জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, এ বছর উপজেলার নলুয়া, মইয়া, পিংলাসহ ছোট বড় ১৫টি হাওরের প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর বোরো ফসলের চাষাবাদের আওতায় আনা হয়েছে বলে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত