সিলেটটুডে ডেস্ক

০৫ মার্চ, ২০১৮ ১১:০১

আহলে হাদিস অনুসারী ফয়জুর!

লেখক, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারীর নাম ফয়জুল হাসান ওরফে ফয়জুরের (২৪) পরিবার আহলে হাদিস বা সালাফি মতবাদে উদ্বুদ্ধ। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, তার কুয়েত প্রবাসী দুই চাচার প্রভাবে পুরো পরিবার মসজিদে ভিন্ন পদ্ধতিতে নামাজ পড়তেও শুরু করে। এনিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে সমস্যারও সৃষ্টি হয়।

ফয়জুলদের মুল বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউপির কালিয়ারকাপন গ্রামে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শেখপাড়ার কাঁচা মঞ্জিলের স্বত্বাধিকারী হাফিজ আতিকুর রহমানের ছেলে। ফয়জুল নগরীর জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশনের দ্বিতীয়তলার মঈন কম্পিউটারে কর্মরত ছিল। তার বাবা শহরতলির টুকেরবাজার এলাকার শাহ খুররুম মখলিছিয়া হাফিজিয়া মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষক। বড় ভাই এনামূল হাসান ঢাকায় থাকেন। আর মেজভাই আবুল হাসান কুয়েতপ্রবাসী। আর ছোট দুই বোন হাফসা বেগম ও হাবীবা বেগম মাদ্রাসায় পড়ে। হাফসা রশীদিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় আর হাবীবা বাবার মাদ্রাসায় পড়ে।

হামলাকারী ফয়জুল দিরাই ধল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে। এরপর সিলেটে একটি মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষা দেয়। কোন মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিয়েছে এসম্পর্কে কেউ জানে না।

মাঝে মাঝে ফয়জুলকে ফেরি করে কাপড়ও বিক্রি করত। তবে এ কাপড় বিক্রি নাকি অন্য কোন কারণে এনিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধছে। বছর খানেক আগে কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে পকেটমারতে গিয়ে ধরা পড়েছিল ফয়জুল। তখন স্থানীয়রা তার ব্যাপারে কড়া হুশিয়ারি দিয়েছিল তার বাবাকে। এলাকা ছেড়ে চলে যেতেও বলা হয়েছিল। এর পর থেকে তাকে আর তেমন একটা দেখা যায়নি। পাঁচ-ছয় বছর আগে ফয়জুলের মামা ও বাবা পৃথক জায়গা কিনে বাসা করেন। এর পর থেকেই তারা এখানে আছে।

ফয়জুলের পরিবারের সদস্যদের চলাফেরা ‘রহস্যজনক’। তারা কারও সঙ্গে মিশত না। বাসা থেকেও খুব একটা বের হতো না। শুধু মসজিদে নামাজে যাওয়ার জন্য বের হয়। সবাই মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত। বড়ভাই হাফিজ হাসান আগে নগরীর পাঠানটুলা জামেয়ায় পড়ালেখা করত।

জানা যায়, গ্রামের বাড়ির মসজিদে ভিন্ন পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করতে গিয়ে মুসল্লিদের তোপের মুখে পড়েছিল ফয়জুল। একপর্যায়ে তাকে ও তার চাচাকে মসজিদ থেকে বের করে দেয়া হয়। হামলাকারীর দুই চাচা আবদুল জাহার ও আবদুল সাদিক ২০ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েতে বসবাস করছেন। তার ভাই আবুল হাসান ছয় মাস আগে কুয়েত যান। স্থানীয়রা জানান, দুই চাচা মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে সালাফি মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে পড়েন। তার পর থেকেই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উগ্র ভাব দেখা দেয়।

উল্লেখ্য, গত ৩ মার্চ শাবিতে একটি অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালকে প্রাণনাশের চেষ্টা চালায় ফয়জুর। হামলার পর পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হামলাকারীকে আটক করে। জাফর ইকবাল বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত অবস্থায় রাজধানীর সিএমএইচে চিকিৎসাধীন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত