কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

০৫ মে, ২০১৮ ১৭:৫১

চা বাগানে শিশুদের অন্যরকম পাঠশালা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পাত্রখোলা চা বাগানের এক ঝাঁক শিশু ছুটে চলছে অন্যরকম এক পাঠশালার উদ্দেশ্যে। এই চা বাগানে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স নামে একটি এনজিও পরিচালিত এ পাঠশালার নাম শিশুকানন পূর্বপাড়া গৌরনিতাই মন্দির। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন ছাড়া প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে অর্থাৎ স্কুলে ভর্তির বয়স হয়নি এমন ৩০টি শিশু এ অন্যরকম স্কুলে আনন্দ বিনোদনের মাধ্যমে পড়তে যায়।

জানা যায়, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস থেকে কমলগঞ্জ উপজেলায় পাত্রখোলা চা বাগানসহ শ্রীমঙ্গল উপজেলার হোসেনাবাদ, এমআর খাঁন, ভাড়াউড়া চা বাগান ও বাইক্কাবিল হাওরে ৩-৫ বছরের শিশুর প্রাক-শৈশব যত্ন ও বিকাশে সহযোগিতা করা এবং শিশুদের মৌলিক শিক্ষা গ্রহণের সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, আন্তর্জাতিক সংস্থা এডুকো-র সহায়তায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে এডুকেশন এজ রাইটস ইন টি গার্ডেন এন্ড হাওর (আর্থ) প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫টি শিশুকানন চালু করেছে।

শিশুবান্ধব পরিবেশে সজ্জিত শিশু কাননে শিশুদের আনন্দময় পরিবেশে শিক্ষাদান করা হয়। যেমন- শিশুভিত্তিক ছড়া, গান, অভিনয়, খেলাধুলা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, ছবি আঁকা ইত্যাদি বিষয় শেখানো হয়। এসব বিষয়ে সহায়তা করার জন্য প্রতি কেন্দ্রে একজন সহায়িকা রয়েছেন।

এ কেন্দ্রের সহায়িকা সোনিয়া আক্তার জানান, শিশু কার্যক্রমের পাশাপাশি অভিভাবকদের নিয়ে প্রতি মাসে প্যারেন্টিং সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ সেশনে পুষ্টি, যত্ন, আচরণ, অধিকার, শিশুর পরিবেশ, বিকাশ, সৃজনশীলতা বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে অভিভাবকদের সচেতন করা হয়। শিশুকানন পরিচালনার জন্য ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিচালনা কমিটি রয়েছে।

শিশুকাননে যে শিশুর বয়স জানুয়ারি মাসে পাঁচ বছরের অধিক হবে তাকে পার্শ্ববর্তী স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তি করা হবে। পাশাপাশি প্রকল্পের আওতাভুক্ত চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়- পাত্রখোলা চা বাগান প্রাথমিক বিদ্যালয়, এম আর খান চা বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোসেনাবাদ চা বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাড়াউড়া চা বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আর্থ প্রকল্প কাজ করে যাচ্ছে। এই চারটি বিদ্যালয়ের শিশুদেরকে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ দেয়া হয়েছে এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোশাররফ হোসেন জানান, চা বাগানের শিশুদের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে এ উদ্যোগ নি:সন্দেহে চমৎকার। চা শ্রমিকের সন্তানদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলো (এনজিও) এগিয়ে আসলে একটি সুশিক্ষিত ও সমৃদ্ধ জাতি গঠন সহজ হবে।

ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানে শিশুদের শিক্ষায় উৎসাহিত করতে যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তা নি:সন্দেহে চমৎকার ও প্রশংসনীয় বললেন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাহমুদুল হক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত