কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৯:১৫

কমলগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল, চরম ভোগান্তিতে গ্রাহকরা

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমলগঞ্জ জোনালের অধীনস্থ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা ভুতুড়ে বিলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ব্যাপক আনুষ্ঠানিকতায় কমলগঞ্জে জাতীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ শুরু করলেও অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিল না গ্রাহকদের।

বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) থেকে সারাদেশের ন্যায় মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জাতীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ শুরু করেছে।

জানা যায়, মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে তাদের স্টাফ ও সরকারি-বেসরকারি হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে র‌্যালি ও আলোচনা অনুষ্ঠান করলেও গ্রাহকদের উপস্থিতি খুব একটা দেখা যায়নি। উপরন্ত বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকরা বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলে ধরেন।

শমশেরনগর, আলীনগর, মুন্সীবাজার, পতনঊষার ও কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর, শরীফপুরসহ বিভিন্ন স্থানের গ্রাহকরা বিদ্যুৎ অফিস থেকে প্রেরিত ভুতুড়ে বিল নিয়ে ভোগান্তি ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তেরও অভিযোগ করেন।

কমলগঞ্জের নজরুল ইসলাম, শমশেরনগরের মুহিবুর রহমান, আজিজুর রহমান, মোর্শেদুর রহমান, নিবাস শীল, তোয়াবুর রহমান, পতনঊষার ইউনিয়নের ধূপাটিলা গ্রামের মতিউর রহমান, রেজাউল করিম, সিদ্ধেশ্বর ভট্টাচার্য সুমন, শাহাজান রাজুসহ অসংখ্য গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, কমলগঞ্জ জোনাল বিদ্যুৎ অফিস থেকে জুলাই মাসের তৈরিকৃত বিদ্যুৎ বিল অফিসের নির্ধারিত তারিখের মধ্যেই পরিশোধ করা হয়েছে। বিল পরিশোধের ১২-১৩ দিন পর আগস্ট মাসের বিল তৈরি করা হয়। সে বিলেও বকেয়া হিসাবে জুলাই মাসের বিল যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

গ্রাহকরা বলেন, এ অবস্থায় বাড়তি টাকা খরচ করে অফিসে গিয়ে বিল সংশোধন করে আসতে হয়েছে। অফিসের স্টাফদের আচার-আচরণও ভালো নয়। তাছাড়া অনেক স্থানে নিয়মিত মিটার রিডিং না দেখেই বিল তুলে দেওয়া হয়। ফলে কোন মাসে বিদ্যুৎ বিল খুব কম আবার কোন মাসে খুব বেশি আসে।

বিদ্যুৎগ্রাহক রফিক মিয়া ও আলমগীর হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ বিল নিয়ে কমলগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকদের অভিযোগ প্রথম নয়। প্রায়ই বিদ্যুৎ বিল দেখে অনেক গ্রাহকের চোখ কপালে উঠে যায়। ব্যবহৃত ইউনিট না দেখেই অতিরিক্ত বিল করা হয়। আবার বিল নিয়ে অভিযোগ করতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়। এসব হয়রানির কারণে গ্রাহকরা চরম অতিষ্ঠ।

উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান চিনুর অভিযোগ, মিটারের ইউনিট না দেখে বিদ্যুৎকর্মীরা আন্দাজে মনগড়া ইউনিট বসিয়ে দেন। এভাবে গ্রাহকদের গলা কেটে বিল নেওয়ায় সাধারণ মানুষ দিশাহারা ও ক্ষুব্ধ। তাই সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, বাড়িতে গিয়ে মিটার দেখে বিল করুন, অহেতুক গ্রাহকদের হয়রানি করবেন না।

বিদ্যুৎ গ্রাহকরা আরও বলেন, সার্ভিস চার্জ ও ভ্যাট ছাড়াও বিদ্যুৎ বিলের সাথে প্রতি মাসে দশ টাকা হারে মিটার ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে। অথচ টাকা দিয়ে মিটার কিনে নেওয়ার পরও মাসে মাসে মিটার ভাড়া দিতে হচ্ছে। এসব বিষয়ে সঠিকভাবে তদারকি করারও কেউ নেই। লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ চলে গেলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও কারণ জানতে চেয়ে প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের মোবাইলে ফোন করলেও কেউ ফোন রিসিভ করেন না।

অভিযোগ রয়েছে, মিটার রিডিং না দেখেই বিল তৈরি করছে কিছু সংখ্যক পল্লী বিদ্যুৎকর্মী। ভুতুড়ে বিলে অতিষ্ঠ গ্রাহকরা অফিসে ধরনা দিয়েও কোন কুল-কিনারা পাচ্ছেন না। এতে করে গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। একদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিং, অন্যদিকে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল, সব মিলিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।

প্রায় প্রতিদিনই মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে হাজির হচ্ছেন গ্রাহকরা। এতে করে একদিকে বিতরণ বিভাগের কর্মকর্তারা যেমন বিপাকে পড়েছেন তেমনি গ্রাহকদের মধ্যেও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অভিযোগের বিষয়ে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. মোবারক হোসেন সরকার বলেন, এভাবে কোন সময় এক মাসের পরিশোধিত বিল অন্য মাসের সাথে যুক্ত হয়নি। দুটি বইয়ে সমস্যা থাকার কারণে সম্প্রতি কয়েকটি বিলে পরিশোধিত পূর্বের বিল যুক্ত করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি আরও গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রাহকদের সাথে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা কখনো কোন খারাপ আচরণ করেননি। যথাসাধ্য আমরা গ্রাহকদের নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত