শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি

২৯ মার্চ, ২০১৯ ২০:৫৬

মনিপুরীদের ‘থাবল চোংবা’ অনুষ্ঠান

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দোল উৎসব উপলক্ষে মনিপুরীদের বিশেষ অনুষ্ঠান ‘থাবল চোংবা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সন্ধ্যা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত মনিপুরী তরুণ-তরুণীরা বর্ণাঢ্য সাজে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরে।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) উপজেলার রামনগর মনিপুরী পাড়ায় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গা থেকে মনিপুরী সম্প্রদায়ের সকলে এসে জড়ো হয় এই উৎসবটিতে অংশ নিতে। তরুণ তরুনীদের নাচে থাবল চোংবা অনুষ্ঠানটি উৎসব মুখর রূপ নেয়।

রামনগর মনিপুরী পাড়ার বাসিন্দা বিপুল সিংহ বলেন, প্রতিবছরই তারা এ ধরনের আয়োজন করে থাকেন। তাদের এই আয়োজনে মনিপুরী কমিউনিটির লোক ছাড়াও অন্যান্যরাও আনন্দ করে।

প্রতিবছর দোল পূর্ণিমাকে ঘিরে মণিপুরিরা পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করে থাকে। উৎসবের মূল আকর্ষণগুলোর মধ্যে থাকে বাড়ি বাড়ি ঘুরে কাঠ, বাঁশ, খড়ের ছাউনি ইত্যাদি সংগ্রহ করে ছোট ছোট ঘর বানানো। এ ঘরেই স্থাপিত হয় শ্রীচৈতন্যদেবের মূর্তি। উৎসবের প্রথম দিন মণিপুরি মেয়েরা ওই ঘরেই শ্রীচৈতন্যকে পূজা দেন। পূজার শেষে আরতি করা হয় আর তারপরই ঘরটি পুরিয়ে ফেলা হয়। মূলত লেইশাঙ বলে পরিচিত এ ঘরটিকে পুরিয়ে বসন্তকে স্বাগত জানান মণিপুরিরা। লেইশাঙয়ের ভস্মকে পবিত্র বলে বিশ্বাস করেন মণিপুরিরা। উৎসবের আরেকটি বিশেষ অংশে থাকে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাল ও ফলমূল সংগ্রহ করা। এসব সংগ্রহ করতে বের হওয়া দুটি দলের পথে দেখা হয়ে গেলে তারা রং খেলায় মেতে ওঠে। য়াওশাঙ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হলো থাবাল-চোঙবা। থাবাল-চোঙবা মূলত মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী এক ধরনের নৃত্য। য়াওশাঙ উৎসব আসলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হোলি উৎসবেরই মণিপুরি রূপ। তবে অষ্টাদশ শতকের আগ পর্যন্ত এ উৎসবটি শুধু শীতের বিদায় ও বসন্তের আগমন বার্তাই বয়ে আনত। মূলত মণিপুরিরা বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করলে হোলি উৎসবের সঙ্গে মিশতে শুরু করে য়াওশাঙ ও থাবল চোংবা উৎসব৷

উৎসব দেখতে আসা নাগরদোলা থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক শিমুল তরফদার বলেন, মনিপুরীরা আসলে সংস্কৃতি সচেতন এবং তারা নৃত্যে খুবই পারদর্শী৷ তবে ইদানিং সকলের জীবনযাত্রা যান্ত্রিক হয়ে যাওয়ায় এই মনিপুরী নৃত্যগুলো হারিয়ে যাচ্ছে৷ এইরকম অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে মনিপুরী নৃত্যশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে৷

আপনার মন্তব্য

আলোচিত