নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ মার্চ, ২০১৯ ০০:৫২

‘মরে গেলেও সিলেট কোনোদিনই আর যাবো না’

সিলেটে বেড়াতে আসা দম্পত্তিকে পুলিশের হেনস্তার অভিযোগ

‘মরে গেলেও সিলেট কোনোদিনই আর যাবো না’- তাসলিমা নামে এক নারী ফেসবুক লিখেছেন এমনটি। স্বামী নিয়ে সিলেট বেড়াতে পুলিশের হেনস্তার শিকার হওয়ার কথাও এই স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন তাসলিমা। তাঁর এমনটি স্ট্যাটাস নিয়ে সিলেটজুড়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

তাসলিমার দাবি, স্বামী নিয়ে সিলেটে এসেছিলেন তিনি। সকালে ফেরার পথে পুলিশ তাদের আটকে হেনস্তা করে। স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দেওয়ার পরও তাদের হয়রানি করে পুলিশ। খারাপ মন্তব্যও করে। এঘটনায় তিনি ও তাঁর স্বামী মুষড়ে পড়েছেন বলে জানান তাসলিমা।

কেবল তাসলিমা নয়, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে আরও। স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকা অথবা নারী-পুরুষ একসাথে দেখলে নগরীর বিভিন্ন স্থানে আটকে পুলিশ হয়রানি করে বলে অভিযোগ ওঠেছে।  

এমন অভিযোগে নড়েচড়ে বসেছেন মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুছা।

তিনি বলেন- ‘এমন অভিযোগের বিষয়টি কমিশনারের কাছে গেছে। তিনি নিজেই উদ্যোগী হয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।’

তাসলিমা নামের ওই নারী ফেসবুকে জানান- তিনি ময়মনসিংহ থেকে স্বামীসহ সিলেটে বেড়াতে আসেন। বুধবার সকালে সিলেট থেকে ফেরার পথে নগরীর চৌহাট্টায় পুলিশের কবলে পড়েন। পুলিশ স্বামী-স্ত্রী দু’জনকে আলাদা আলাদা ভাবে জেরা করে। এরপর টাকা পেয়ে তাদের ছেড়ে দেয়।

স্ট্যাটাসের একজায়গায় তাসলিমা লিখেন- ‘সিএনজিতে ৫ জন পুলিশ। আমার সঙ্গে আমার সাহেব ছিল। সিএনজি দাঁড় করিয়ে আমার সাহেবকে নিয়ে গেলো তাদের সিএনজিতে। বলতাছে আপনি একটু আমাদের সঙ্গে আসেন কথা আছে। ওরে নিয়ে গিয়ে আমাকে প্রশ্ন করা শুরু, আপনার কি হয় ওনি? বিয়ে হলো ক’দিন? ছেলে-মেয়ে ক’জন? কি করেন? এখানে কেন আসছেন? তখন আবার চলে গেলো আমার সাহেবের কাছে। ওরেও গিয়ে একই কথা জিজ্ঞেস করা হলো কিন্তু আমার আড়ালে।’

স্ট্যাটাসে তিনি আরো উল্লেখ করেন- ‘নাস্তা না করেই গাড়িতে উঠলাম। আমার সাহেব আমার সঙ্গে একটা কথাও বলে না। ১২টা বাজে তাও কথা বলে না। আমি বার বার ওরে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি কাজ হয়নি। দুপুরে খাবার বিরতি দিলো। নামলাম খাওয়ার জন্য। ওরে বললাম দেখো আমার সঙ্গে কথা বলছো না কেন? আমর খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার সঙ্গে এমনটা করো না। তখন দেখি ওর চোখ ভিজে গেছে। ও বলতাছে জানো আমাকে কি জিজ্ঞেস করেছে? আমাকে বলতাছে কত টাকায় ভাড়া করে নিয়ে আসছেন? (যখন লিখছি তখনও চোখ দিয়ে সমানে পানি পড়ছে।) আমার সাহেব তখন বললো দেখুন আমার বউটা খুবই ভালো পরিবারের মেয়ে আর আমিও ওরে খুবই যত্ন আর সম্মানে রাখি, আমাকে যা খুশি বলেন আমার বউটাকে নিয়ে কিছু বলবেন না।’

তাসলিমা আরও লিখেন- ‘আমি ঘুরতে পছন্দ করি। আমার ছেলে ইন্টারে পড়ে এখনো আমাকে কাবিননামা নিয়ে ঘুরতে হবে। আমি আর কি কি লিখবো? তবে মরে গেলেও সিলেট কোনোদিনই আর যাবো না।’


ফেসবুকে তাসলিমার এই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়লে সিলেেটে পুলিশের কর্মকান্ড নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন অনেকে। কেউ এই স্ট্যাটাসেই মন্তব্য করেন- সিলেটের বন্দরবাজার, তালতলা, চৌহাট্টা সহ কয়েকটি এলাকায় প্রতিদিনই ঘটে এসব কর্মকাণ্ড। ফাঁড়ি পুলিশের এএসআইরা বেপরোয়া হয়ে এসব কর্মকাণ্ড ঘটায়।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের মুখপাত্র জেদান আল মুসা বলেন, ‘বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও নাড়া দিয়েছে। এমন ঘটনা কখনোই কাম্য নয়। কমিশনার স্যার বিষয়টি দেখছেন।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত