নিজস্ব প্রতিবেদক

০১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:৪৫

নগরীর সিসি ক্যামেরার ৯০শতাংশই অচল

গত ২০ জানুয়ারি নগরীর তালতালা এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা লিলি রানী দেবী। যে জায়গায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে তার আশপাশে রয়েছে একাধিক ক্লোডজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। তবে ছিনতাইয়ের তদন্তে নেমে পুলিশ দেখতে পায় বিকল হয়ে পড়ে আছে সিসি ক্যামেরাগুলো। ফলে কোনো ফুটেজই সংগ্রহ করতে পারেনি পুলিশ।

একইভাবে গত ১২ ফেব্রায়ারি রাতে নগরীর জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কে হামলার শিকার হন ব্যবসায়ী রাহাদুজ্জামান মুন্না। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে রয়েছে বেশকয়েকটি সিসি ক্যামেরা। তবে ক্যামেরা বিকল থাকায় এই হামলার ফুটেজও সংগ্রহ করতে পারেনি পুলিশ।

কেবল এ দুটি নয়, এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়তই। সিলেট নগরীতে লাগানো সিসি ক্যামেরাগুলোর প্রায় নব্বই শতাংশই বিকল হয়ে পড়ে আছে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির অভাবে কাজে আসছে না নগরীর নিরাপত্তার স্বার্থে লাগানো এসব সিসি কামেরা।

এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশেনের অবহেলাকেই দায়ী করছে পুলিশ। তবে সিসি ক্যামেরা তদারকির দায়িত্বে থাকা নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্যামেরাগুলো নিয়মিতই তদারকি করা হয়। বেশিরভাগই সচল আছে বলেও দাবি নগর কর্তৃপক্ষের।

এ ব্যাপারে সমন্বয়হীনতাকেও দায়ি করেছেন সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা। তাঁরা জানান, সিটি করপোরেশন ক্যামেরাগুলো স্থাপন করলেও তা মনিটর ও ব্যবহার করে কতোয়ালি থানা পুলিশ। এই দুই প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতায় সিসি ক্যামেরাগুলো বিকল হতে পারে।

সিলেট নগরীর অপরাধ নিয়ন্ত্রন ও নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিটি করপোরেশনের আগে বসানো হয় ৯২ টি সিসি ক্যামেরা। ২০১২ সালে প্রথমে ২২ টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছিলো। এরপর পুলিশের অনুরোধে আরও ৭০ টি সিসি ক্যামেরা বসায় সিটি করপোরেশন। এরমধ্যে দক্ষিণ সুরমায় ২২টি, আম্বরখানা-বিমানবন্দর সড়কে ২২টি ও সিলেট জজ কোর্ট এলাকায় ২৬টি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিপনী বিতানগুলোর ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে স্ব স্ব এলাকায় স্থাপন করা হয় আরও শতাধিক ক্যামেরা। এসবের বেশিরভাগই এখন বিকল হয়ে পড়ে আছে।

সিলেটের মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা বলেন, সিসি ক্যামেরাগুলোর বেশিরভাগই দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে পড়ে আছে। ২০/২৫টির মতো ক্যামেরা এখনও সচল আছে।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সংশ্লিস্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বারবার সিটি কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে অবহিত করেছেন। তারপরও এগুলো সচলের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এখন আমরা নিজেরাই এগুলো সচলের চিন্তা করছি।

নগরীর বন্দরবাজার-চৌহাট্টা সড়ক ঘুরে দেখা যায়, এই সড়কে স্থাপন করা হয়েছে অন্তত ১৫টি ক্যামেরা। তবে এসব ক্যামেরার বেশিরভাগই এখন কাজ করছে না। জং ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে।

কোতোয়ালি থানার দায়িত্বে থাকা ক্যামেরাগুলো স্থাপন করা হয়েছিল বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, নাইওরপুল, আম্বরখানা, তালতলা পয়েন্টসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে। কোতোয়ালি থানা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩/৪ মাস ধরে এসব ক্যামেরার প্রায় সবগুলোই অচল হয়ে আছে। অচল হয়ে আছে দক্ষিণ সুরমায় স্থাপন করা ক্যামেরাগুলোও।
তবে আদালত চত্বর এলাকার ক্যামেরাগুলো এখনো সচল আছে বলে জানা গেছে।

সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম মিয়া বলেন, আমার থানার আওতাধীন এলাকার প্রায় সবগুলো ক্যামেরাই অচল অবস্থায় আছে। এতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। খুন, চুরি, ছিনতাইকারী বা অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে আগের মতোই জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। ক্যামেরাগুলো কাজ করলে আমাদের অনেক সহযোগিতা হতো।

তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও সেগুলো সচল করার কোন উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।

তবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, নিয়মিতই ক্যামেরা রক্ষাবেক্ষণ করা হয়। অচল হলে  তা মেরামতও করা হয়। যদিও তিন মাসে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরা রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কারের কোনো হিসেব পাওয়া যায়নি।।

সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. রুহুল আলম বলেন, যদি কোন ক্যামেরায় সমস্যা হয় তবে তা যত দ্রুত সম্ভব পাল্টে নেয়া হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে ক্যামেরার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুতই ব্যবস্থা নেই। তারপরও কিছু ক্যামেরা অচল হয়ে যেতে পারে। আমরা এ ব্যাপারে খোঁজ নেবো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত