মিনহাজ উদ্দিন, গোয়াইনঘাট

০৩ এপ্রিল, ২০১৯ ১৮:২৬

গোয়াইনঘাটে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে নানা উদ্যোগ

সিলেটের গোয়াইনঘাটের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার হারকে গতিশীল করতে নানামুখী প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে নানা ধরনের বাস্তবমুখী উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার মাধ্যমে বর্তমানে গোয়াইনঘাটের শিক্ষা ব্যবস্থাও এগিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায়ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, সিলেট-৪ আসনের বৃহৎ গোয়াইনঘাট উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ১৩৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম এবং পাঠদান প্রক্রিয়া ঢেলে সাজানো হচ্ছে। শিশু ঝরে পড়া, দরিদ্রতা, অটিজম আক্রান্ত বা প্রতিবন্ধী, হাওর এলাকা, দুর্গম যাতায়াত বিড়ম্ভনায় শিকার শিশুদের শতভাগ বিদ্যালয়মুখীকরণ, স্কুল ফিডিং, শিক্ষকদের শতভাগ উপস্থিতি তদারকি, স্লিপসহ বিদ্যালয় অবকাঠামো, সংস্কার কার্যক্রম তদারকি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা, প্রক্সিরোধ, সর্বপোরি শিক্ষকদের অনৈতিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা, শাস্তির আওতায় আনাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়াও ঘন ঘন বিদ্যালয় পরিদর্শন স্বাপেক্ষ বিদ্যালয় সমূহে শিক্ষক উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।

জানা যায়, গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পালের নির্দেশনায় গোয়াইনঘাটে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার মোশাহিদ মিয়ার উদ্যোগে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন এবং কার্যকর করছেন সহকারি শিক্ষা অফিসার মো. আশরাফুল আলম। গোয়াইনঘাটে পিছিয়ে পড়া শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে সরকারের তরফে ইতিপূর্বে ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পিডিবি-৩ আওতায় অগণিত স্কুলে নতুন ভবনসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাস্তবায়িত হয়েছে।

গোয়াইনঘাটের উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার নুরুজ্জামান জানান,  ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে সিলেটের গোয়াইনঘাটে মোট শিক্ষার হার ৩২.৭% সামন্য উপরে। বর্তমানে তা ছাড়িয়ে ৬০% এর উপরে আছে। গোয়াইনঘাটের অবশিষ্ট মানুষজনকে অক্ষরজ্ঞান এবং শিক্ষার আলোর আওতায় নিয়ে আসতে উপজেলা সর্বত্রই সরকারী, বেসরকারী নানা উদ্যোগে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি এনজিও এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও এসব কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে।

গোয়াইনঘাটের পিরিজপুরের বাসিন্দা শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এর মাষ্টার্সের শিক্ষার্থী আব্দুল মনসুর ডালিম বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে সবার আগে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। কারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মূল ভিত তৈরী হয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। তাই গোয়াইনঘাটের শিক্ষার হারকে এগিয়ে নিতে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সবাইকে এক যোগে এগিয়ে আসতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়নসহ সরকারের বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিচ্ছে। শিশু ঝরে পড়া থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষায়ও বর্তমান সরকার গোয়াইনঘাটে প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন।

পূর্ব গুরুকচি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ও হাইডর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আজমল আলী বলেন, গোয়াইনঘাটের প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে সহকারি শিক্ষা অফিসার মোঃ আশরাফুল আলম স্যারের দ্বারা বাস্তবায়িত সরকারী উদ্যোগগুলো প্রশসংসার দাবি রাখে। এক্ষেত্রে শিক্ষকসহ সবাইকে একাগ্রচিত্তে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। সকলের সম্মিলিত উদ্যোগই পারে এক্ষেত্রে সফলতা এনে দিতে। আমাদের গৃহীত উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে উপকৃত হবেন পুরো গোয়াইনঘাটবাসী।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাটের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ গোয়াইনঘাট সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক বলেন, পিছিয়ে পড়া গোয়াইনঘাটে শিক্ষার মান উন্নয়নে বর্তমান সরকারের ইতিবাচক এবং দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। সর্বোপুরি গোয়াইনঘাটকে শিক্ষা ব্যবস্থার রোল মডেলে নিয়ে গেছেন সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ। প্রাথমিক শিক্ষায় অগণিত নতুন নতুন বিদ্যালয় স্থাপন, স্থাপিত বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন, গোয়াইনঘাট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ, গোয়াইনঘাট ডিগ্রী কলেজকে জাতীয়করণসহ শিক্ষা বিপ্লবে অভূতপূর্ব এবং যুৃগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

গোয়াইনঘাটের সহকারি শিক্ষা অফিসার মো. আশরাফুল আলম বলেন, গোয়াইনঘাট সিলেটের অন্যতম জনবহুল একটি উপজেলা। এখানকার মানুষজন এবং আয়তনের তুলনায় বিদ্যাপিঠ এবং শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। এতদ স্বত্বেও গোয়াইনঘাটের শিক্ষা ব্যবস্থার গন্ডিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শতভাগ করণে সরকারের নির্দেশিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলছে। গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে এবং ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মোশাহিদ মিয়ার উদ্যোগে গোয়াইনঘাটের সর্বত্রই বিদ্যাপিঠ সমূহে শিশুদের শতভাগ উপস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ ও মনিটরিং করছি। এছাড়াও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের অন্ধ, প্রতিবন্ধী কিংবা শ্রবণ শক্তিহীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে হুইল চেয়ার, চশমা, কানে শুনার যন্ত্রসহ আনুসাঙ্গিক উপক্রম বরাদ্ধ দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকরা স্কুলের পাশাপাশি একাধিক প্রতিষ্ঠান চাকুরী করছেন, এমন অপরাধে জড়িতদের সনাক্ত করে শাস্তির ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। সর্বোপরি গোয়াইনঘাটের শিক্ষা ব্যবস্থার আজকের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নেয়ার একমাত্র কারণই হলো গোয়াইনঘাটকে শতভাগ অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন উপজেলায় রূপান্তর করার চেষ্টা। গতবছর ৪ আগষ্ট গোয়াইনঘাটে যোগদানের পর থেকে এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থার মানদন্ডকে এগিয়ে নেয়ার নিমিত্তে কাজ করছি। শিক্ষক এবং অভিভাবকরা এক হলে গোয়াইনঘাটের শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রশসংনীয় এই উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখবে।


গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, গোয়াইনঘাটে উপজেলা সদর থেকে শুরু করে ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার মান উন্নয়নে বর্তমান সরকার আন্তরিক। নানামুখী অগণিত শিক্ষা বান্ধব কর্মসূচী গ্রহণ করে তা দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিদ্যালয় সমূহ থেকে শিশুদের ঝরে পড়ারোধ,বিদ্যালয় সমূহে শতভাগ শিক্ষক উপস্থিতি পাঠদানসহ বিদ্যমান সকল সমস্যা সমাধানে সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে কাজ করছি। ইতিপূর্বে গোয়াইনঘাটে বিদ্যালয় বিহীন গ্রামের আওতায় ১৫টি নতুন বিদ্যালয় স্থাপন, পিডিবি-৩ আওতায় অগণিত বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ,স্কুল ফিডিং,উপবৃত্তি,প্রতিবন্ধী,শ্রবণ শক্তিহীন এবং অন্ধ শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করণে সরকারী বিভিন্ন প্রকল্প শুরু হয়েছে। সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও সংস্থাও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা পালনে আন্তরিকতার সহিত এগিয়ে যাচ্ছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতেও খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা শতভাগ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী নির্ভর উপজেলায় রূপান্তরিত হবে। এতে করে গোটা গোয়াইনঘাট তথা অত্র অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত