সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

০৩ এপ্রিল, ২০১৯ ১৯:২৯

এবার হাওরের বাঁধের কাজ অনেক ভালো হয়েছে, পরিদর্শন শেষে প্রতিমন্ত্রী

পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, ‘হাওরের বোরো ফসলরক্ষায় ইচ্ছে করলেই দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব নয়। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে অনেক টাকা দরকার। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে সময় লাগবে। আমরা নেত্রকোনায় একটি হাওরে ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে পর্যবেক্ষণ করে দেখব এবছর যেখানে বাঁধ দেয়া হলো সেটি আগামী বছর টিকছে কি না। যদি বাঁধ টিকে যায় তাহলে পর্যায়ক্রমে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে। তবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে বেশ সময় লাগবে। এটি এক বছর বা একদিনেই হবে না। স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে হাওরের পানি নিষ্কাশনে কজওয়ে নির্মাণ করা হবে। আগের চেয়ে হাওর বাঁধ আমরা অন্যভাবে নির্মাণ করছি। বাঁধে জিও টেক্সটাইলের ব্যাগ ও ব্লক ফেলা হচ্ছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবছর ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ অনেক ভাল হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে আমরা আরও ভালো অবস্থানে পৌছাতে পারবো।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাব প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্ষায় সীমান্তের ওপাড়ে যখন পানির ঢল হয় তখন কোন কিছুতে পানি ঠেকানো যায় না। ঢলের পানি বাঁধের উপর দিয়ে চলে আসে।  হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ৬ দশমিক ৫ ফুট পানি উচ্চতার পানি ঠেকাতে পারবে। অনেক জায়গায় ৭ থেকে ৮ ফুট উচু করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালের মতো ঢল নামলে পানি বাঁধের উপর দিয়ে চলে আসবে। বন্যায় সব ফসল প্লাবিত হয়ে যাবে। আমাদের লক্ষ্য হলো বোরো ফসল তোলার আগ পর্যন্ত ঢলের পানি ঠেকিয়ে রাখা। ফসল মানুষের ঘরে ওঠে গেলে আমাদের বাঁধ নির্মাণ স্বার্থক হয়।’

বুধবার সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত স্পীটবোটে চড়ে সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার হাওরের বোরো ফসলরক্ষা বাঁধ পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার থাল, জয়ধুনা, ধানকুনিয়া ও পাগনার হাওর এবং নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের ডিঙ্গাপুতা হাওরের হাইজদা নির্মাণাধীন স্থায়ী ফসলরক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেন।

এসময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহা পরিচালক মাহফুজুর রহমান, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব মন্টু কুমার বিশ্বাস, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী নাজিমুল হক ভূঁইয়া, সিলেট সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মশিউর রহমান, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর ১ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া, পওর ১ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার, সুনামগঞ্জ জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক মো. এমরান হোসেন, নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখতারুজ্জামান, উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী, জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা পালসহ সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।

উল্লেখ্য, চলতি বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে কাবিটা কর্মসুচির আওতায় সুনামগঞ্জের ৪২ টি হাওরে ৫৭২ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে ৯৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৫০ কিলোমিটার ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায় চলতি বোরো মওসুমে সারা জেলায় ২ লাখ ২৪ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, উফশি ও স্থানীয় জাতের বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এতে ১৪ লাখ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হওয়ার কথা যার বাজার মূল্য হবে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। এসব বাঁধের মধ্যে সুনামগঞ্জ পওর ১ এর অধীনে ১৯৮ কিলোমিটার ও পওর ২ এর অধীনে ২৫২ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত