শাকিলা ববি

০৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:২৭

ঝুঁকিতে সিলেটের বিপণিবিতানগুলো, নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা

সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জিন্দাবাজার এলাকায় ১০ তলা বাণিজ্যিক ভবন ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি। বিপণিবিতানটি তে জরুরী নির্গমনের জন্য আলাদা সিঁড়ি রয়েছে। তবে এই সিঁড়ি দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ রেখে স্টোর রুম হিসেবে ব্যবহার করে মার্কেট কর্তৃপক্ষ।

ব্লু ওয়াটারের পাশেই কাকলী শপিং সেন্টার। এই শপিং সেন্টারের কয়েকটি ফ্লোরে অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার থাকলেও সেগুলোর মেয়াদ পেরিয়েছে অনেক আগেই। নির্মাণ কাজের সময় যে সিলিন্ডারগুলো লাগানো হয়েছিলো, সেগুলোই আছে এখনো, তা আর পরিবর্তন করা হয়নি।

কেবল এই দুটি ভবনই নয়, সিলেট নগরীর প্রায় বেশিরভাগ বিপণি বিতানের এই একই দশা। নেই নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা, নেই জরুরী নির্গমনের সিঁড়ি। ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে এই ভবনগুলো। গত এক মাসে সিলেট নগরীর ৫৮ বিপণি বিতান পরিদর্শনে গিয়ে এই চিত্র দেখতে পান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা।

ব্লু ওয়াটার শপিং সিটির ৯ম তলায় রয়েছে বেসরকারি টিভি চ্যানেল সময় টিভির আঞ্চলিক অফিস। সময় টিভির সিলেট ব্যুরো প্রধান ও সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির বলেন, সিলেটর বেশিরভাগ বহুতল ভবনেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। ব্লু ওয়াটার শপিং সিটির তিনটি সিঁড়ি থাকলেও শুধুমাত্র পেছনের সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা যায়। এছাড়া একটি সিঁড়ি দিয়ে ৫তলা পর্যন্ত উঠানামা করা হয় আর অপর সিঁড়িটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে। তাই আগুন লাগলে পেছনের সিঁড়িই একমাত্র ভরসা।

কাকলী শপিং সেন্টারের সানমুন টেইলার্স এন্ড প্রা. লিমিটেডের ব্যবস্থাপক সামিরুল ইসলাম বলেন, এই ভবনের অবস্থা খুবই খারাপ। ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছি। আমারতো দোকান ভাড়ার পাশাপাশি মেন্টেইনেন্স বিলও দেই। পর্যাপ্ত টাকা দিয়েও ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয় সবাইকে।

তবে ব্লু ওয়াটার শপিং সিটির ব্যবস্থাপক মলয় দত্ত মিঠু বলেন, আমাদের নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা রয়েছে। ভবনের তিন দিকে ফায়ার এক্সিটও আছে। ফায়ার ফাইটিং যন্ত্রগুলো নিয়মিত রুটিন চেকাপ করা হয়। এছাড়ার আমিসহ আমাদের বেশ কয়েকজন স্টাফের ফায়ার ট্রেনিং দেওয়া আছে।

আর কাকলী শপিং সেন্টারের পরিচালক মুর্শেদ আহমেদ বলেন, ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিক করতে আমরা ফায়ার সার্ভিসের সাথে কথা বলেছি। আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। কেবল বহুতল ভবনই নয়, পাঁচতলার নিচের, এমনকি নগরীর পুরনো অনেক একতলা ভবনও রয়েছে ঝুঁকিতে। এসবের মধ্যে নগরীর পুরনো হাসান মার্কেট, সিটি মার্কেট, মহাজনপট্টি, লালদিঘির পার, মিতালী ম্যানশন, রাজা ম্যানশন সবচেয়ে ঝুঁকিতে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

সম্প্রতি রাজধানীতে বড় ধরণের দুটি অগ্নিকাণ্ডের পর সিলেটের ভবনগুলোর অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা পরিদর্শনে নামে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। ৩ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পরিদর্শনে ঝুঁকির এই ভয়াবহ চিত্র দেখতে পান কর্মকর্তারা। এই পরিদর্শন কাজ এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

ফায়ার সার্ভিস অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলোর তালিকা করলেও এমন কোনো তালিকা নেই সিলেট সিটি করপোরেশনের কাছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, সিলেটের ২২ টি বহুতল ভবন ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের কোনো তালিকা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তাদের নিয়ে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সহনশীল নগর বিষয়ক’ সভা করেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

নগর ভবনে আয়োজিত ওই সভায় মেয়র বলেন, অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সিলেট সিটি করপোরেশন একটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স সিলেট কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সিলেটে বড় ধরণের অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পর্যাপ্ত পানির উৎস নেই। সিলেটের পুকুর দিঘীসহ জলাধারগুলো ভরাট করে ফেলায় পানি সঙ্কটের কারণে অগ্নিকাণ্ডের সময় সবচেয়ে সমস্যায় পড়তে হবে। এছাড়া অপ্রশস্ত সড়কের কারণে বিভিন্ন এলাকায় দমকল বাহিনীর গাড়িই প্রবেশ করতে পারবে না।

এ ব্যাপারে সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক দিনমণি শর্মা বলেন, গত এক মাসে নগরীর ৫৮টি বিপণি বিতান আমরা পরিদর্শন করেছি। এগুলোর বেশিরভাগেই প্রাথমিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও নেই।

এছাড়াও সবচেয়ে বড় সঙ্কট পানির। নগরীর জলাশয়গুলো ভরাট করার কারণে বড় অগ্নিকাণ্ডে ঘটনা হলে পনির সংকট তীব্র আকার ধারণ করবে।

তিনি আরও বলেন, বেশিরভাগ বহুতল ভবনেই জরুরী নির্গম পথ, ফায়ার এলার্ম ও হাইডেন্ট ব্যবস্থা নেই। অনেক ভবন এলাকায় সড়ক সরু হওয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের ব্যবস্থাও নেই।

দিনমণি শর্মা বলেন, মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে অবশ্যই নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এই জন্য সকলকে নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত