জামালগঞ্জ প্রতিনিধি

০৪ এপ্রিল, ২০১৯ ১২:৪৭

ব্লাস্টে আক্রান্ত বি-২৮ জাতের ধান, ক্ষতির মুখে কৃষকরা

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় চলতি বছর হাওরগুলোতে মোট ২২ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এতে ব্রি-২৮ জাতের ধান ৫ হাজার ৮শ ২৭ হেক্টর, হাইব্রিড জাতের ধান ১১ হাজার ১শ ৬০ হেক্টর, উপশী জাতের ধান ১০ হাজার ৭শ ৯০ হেক্টর ও স্থানীয় দেশীয় জাতের ধান ৬ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়।
 
এর মধ্যে ব্রি-২৮ জাতের ধানে এ বছর দেখা দিয়েছে ব্লাস্টার রোগের প্রকোপ। অনেক আশা নিয়ে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করলেও ব্লাস্টার রোগের আক্রমণে ধান নষ্ট হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা।

জানা যায়, এ জাতের ধান কৃষকরা সাধারণত নিজেদের খাবারের চাহিদা মেটাতেই আবাদ করে থাকেন। তাছাড়া অন্যান্য জাতের ধান বিক্রি করে সারা বছরের ব্যয় নির্বাহ করেন। সারা বছরের খোরাকের এই ধান রোগাক্রান্ত হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের।
   
৩ এপ্রিল বুধবার শাল্লার বিভিন্ন হাওর সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, শুধুমাত্র ব্রি-২৮ জাতের ধানই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকেই এ ক্ষতির কারণে জমির ধান কাটাই বাদ দিয়েছেন।

শাল্লা ইউনিয়নের ভেড়াডহর হাওরের ইয়ারাবাদ গ্রামের কৃষক ফখরুল ইসলাম বলেন, এ বছর সাড়ে ৩ একর জমিতে ব্রি-২৮ ধান আবাদ করেছিলাম। আমার সম্পূর্ণ জমির ধানই নষ্ট হয়েছে। কামলারা এ ধান কাটে না। তাই ছেলেদের নিয়ে শুধু বন কাটতাছি।

একই হাওরের গ্রাম শাল্লার কৃষক হাফিজুর রহমান বলেন, এক একর জমি কেটে মাত্র সাত মণ ধান পেয়েছি। যেখানে ধান পাওয়ার কথা কমপক্ষে ৫০ মণ।

তিনি আরও বলেন, এবার বোরো ফসল করে লোকসান গুনতে হবে। ছায়ার হাওরের মনুয়া গ্রামের কৃষক মমিনুল হক বলেন, জমির দিকে তাকালে খুবই কষ্ট হয়। অনেক আশা নিয়ে আগাম ফসল ঘরে তোলার জন্য ব্রি-২৮ ধানের চাষ করেছিলাম। কিন্তু আমার সব জমির ধানই নষ্ট হয়ে গেছে।
 
এবার ব্রি-২৮ জাতের ধানের এ রুপ ক্ষতির কারণে হিসেবে স্থানীয় কৃষকেরা জানান, আবওহাওয়ার কারণেই ধানের এ ক্ষতি হয়েছে।

এ বিষয়ে শাল্লা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবুল লেইছ চৌধুরী বলেন, আমার গ্রাম শাল্লা এলাকায় কোনোদিন কৃষি অফিস থেকে কোনো ব্লক সুপারভাইজারকে কৃষকের মধ্যে ব্রি-২৮ ধানের এ রোগের প্রতিকারে কোনোরূপ পরামর্শ দিতে দেখিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাদেকুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ব্রি-২৮ জাতের ধানের এরূপ ক্ষতি কারণ হিসেবে আমরা আগাম রোপণ, কোল্ড ইনজুরি, ব্লাস্ট রোগ চিহ্নিত করেছি। এ জাতের ধানটি সাধারণত বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে রোপণ করার কথা। কিন্তু জমিগুলোর ধানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এগুলো জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে রোপণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত কৃষকদের মধ্যে ব্লাস্ট রোগ প্রতিকারে ফিলিয়া, নাটিবো, টুপা, ব্লাসিং ইত্যাদি স্প্রে করা পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং ব্রি-২৮ ধানের পরিবর্তে ব্রি-৮১ ধান চাষেরও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

এ জাতের ধানটি অনেক পুরনো হওয়ায় এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে এবং উৎপাদনও দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে কৃষি কর্মকর্তা জানান।   

আপনার মন্তব্য

আলোচিত