নিজস্ব প্রতিবেদক

০৭ এপ্রিল, ২০১৯ ২২:৩০

আমরা হাসপাতালের বিরুদ্ধে নই, ঐতিহ্যবাহী ভবন ভাঙার বিরুদ্ধে

আবুসিনা ছাত্রাবাস রক্ষার দাবিতে মতবিনিময়সভায় নাগরিক আন্দোলনের নেতারা

নগরীর ঐতিহ্যবাহী আবু সিনা ছাত্রাবাস ভবন রক্ষার দাবিতে আগামী ১১ এপ্রিল ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করবে এই দাবিতে গড়ে ওঠা নাগরিক আন্দোলনের নেতারা।

রোববার বিকেলে সিলেটে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এমনটি জানানো হয়। সিলেটের ঐতিহ্য রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজ-এর পক্ষ থেকে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

নগরীর মুসলিম সাহিত্য সংসদ (কেমুসাস) ভবনের সাহিত্য কক্ষে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী।

এতে বক্তারা বলেন, আমরা একটি শতবর্ষী ভবন রক্ষার নিরীহ নাগরিক আন্দোলনের মাধ্যমে সিলেটের প্রাচীন স্থাপত্যের ঐতিহ্য রক্ষা করতে চাইছি। এই চাওয়ার সাথে রাষ্ট্রের ঐতিহ্য সংরক্ষণের যে সদিচ্ছা রয়েছে তার কোন ভিন্নতা নেই। আমরা মনে করি, একটি ঐতিহ্যবাহী ভবন ভেঙ্গে সেখানে হাসপাতাল নির্মাণ করার তথ্য প্রধানমন্ত্রীর অজানা। তাই ঐতিহ্যবাহী ভবন সংরক্ষণ ও পরিকল্পিত নগরায়নের দাবীতে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।

বক্তারা বলেন, আমরা হাসপাতালের বিরোধী নই। তবে ঐতিহ্যবাহী ভবন রক্ষার পক্ষে। ওই ভবন ভেঙ্গে নয়, বরং অন্য জায়গায় হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানাই আমরা।

বাপার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম "ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী স্থাপত্য 'আবু সিনা ছাত্রাবাস ভবন' সংরক্ষণ ও পরিকল্পিত নগর উন্নয়ন" শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন। আদি-স্থাপত্যের আলোচিত ভবনটির অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্পমূল্য ও স্থাপত্যরীতি নিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের করা গবেষণাপত্রের পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন সহকারী অধ্যাপক কৌশিক সাহা।

কৌশিক সাহা তাঁর প্রেজেন্টেশনে বলেন, ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যরীতির ভবন বিশ্বের দেশে দেশে মানুষ সংরক্ষণ করে। অর্থের বিনিময়ে তা পর্যটকেরা পরিদর্শন করে। আসাম প্যাটার্নের স্থাপত্য রীতির এই ভবন স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের গবেষণা কাজে সহায়তা করেছে। ভবনটি রক্ষায় সিলেটের গণমাধ্যমের সোচ্চার ভূমিকা প্রয়োজন।

মতবিনিময় সভা থেকে বলা হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী টাকা চলে যাওয়ার কথা বলেছেন। টাকা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ বা কোন দাতা গোষ্ঠীর নয়। টাকাটি সরকারের উন্নয়ন বাজেটের। এই অর্থ ফেরত গেলে আর আসে না- এটা একটা ভুল ধারণা। ডিপিপি'তে কোন প্রকল্পে টাকা ছাড় হলে ঐ টাকা ঐ বছরে খরচ না হলে কোন সমস্যা নাই। এই জন্যেই এটা ডিপিপি, এটা রাজস্ব বাজেট নয়। ডিপিপি একনেকে পাশ হয়, এবং এটা তিন-চার বছরের মেয়াদী হয়। পুরো প্রকল্পের টাকা একনেক কর্তৃক অনুমোদন দেয়া হয়। এই অর্থ বছরে খরচ না হলে অন্য অর্থ বছরে টাকা দিতে বাধ্য সরকার। ডিপিপি'র বরাদ্দ কমানোর কোন স্কোপ নাই, শুধুমাত্র একনেক কর্তৃক যদি তা সংশোধনী না আনা হয়। যারা এই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন অর্থ মন্ত্রণালয় বা পরিকল্পনা কমিশনে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।

মতবিনিময় সভা থেকে বলা হয়, আমরা আদি স্থাপত্যের এই ভবন সংরক্ষণ চাই। একইভাবে পরিকল্পিত নগর উন্নয়ন চাই। পরিকল্পিত নগরায়নের স্বার্থে নগরের কেন্দ্রস্থলে ১৫ তালা হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা উচিৎ।

ভাষা সৈনিক মতিন উদ্দিন যাদুঘর-এর প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী বাহার-এর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাসদ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট জাকির আহমদ। সভায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ও গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ কমরেড বেদানন্দ ভট্টাচার্য, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট-এর সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সাম্যবাদী দল সিলেট জেলা শাখা সাধারণ সম্পাদক কমরেড ধীরেন সিংহ, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এমাদুল্লাহ শহিদুল ইসলাম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক স্থপতি শুভজিৎ দাস ও লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক স্থপতি রাজন দাস প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় আয়োজকদের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্টার জামিল আহমেদ চৌধুরী, বাসদ(মার্কসবাদী) সিলেট জেলা সমন্বয়ক উজ্জ্বল রায়, তথ্যচিত্র নির্মাতা নিরঞ্জন দে যাদু, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট-এর সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল বাসিত শেরো, নাগরিক মৈত্রী সিলেটের আহ্বায়ক সমর বিজয় সি শেখর, কেমুসাস সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী, লেখক গবেষক সৈয়দ মবনু, সেইভ দ্য হেরিটেজ এন্ড এনভায়রনমেন্ট সিলেট-এর প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হাই আল হাদী, ভূমিসন্তান বাংলাদেশ-এর সমন্বয়ক আশরাফুল কবির, লিটল ম্যাগাজিন মেঠোসুর সম্পাদক বিমান তালুকদার, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সিলেট এর সংগঠক রুবাইয়াৎ আহমেদ প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত