শোয়েব উদ্দিন, জৈন্তাপুর

১৯ আগস্ট, ২০১৯ ০০:২১

জৈন্তাপুরে নদী ভাঙ্গনে হুমকিতে ৩ গ্রাম

সিলেটের জৈন্তাপুরে বন্যার পানি নামার পর এবার নদী ভাঙ্গন প্রকট আকার ধারণ করেছে। উপজেলার ২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়নের কেন্দ্রী, লক্ষীপুর, আমবাড়ী সহ কয়েকটি গ্রামে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়। ফলে ঘরবাড়ি ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

জানা যায়, বড়গাং-নয়াগাং নদী, নাপিত খাল ও কলসী নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। উপজেলার ২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়নের কেন্দ্রী, লক্ষীপুর, আমবাড়ী সহ কয়েকটি গ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নাপিত খাল ও কলসী নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বিলীন হওয়ার পথে নদীর তীরবর্তী বসবাসরত প্রায় ৩ শত পরিবারের মানুষের বসতবাড়ী, ৩টি মসজিদ, ১টি স্কুল, ১টি মাদ্রাসা এবং ২টি কবরস্থান সহ গ্রামীন রাস্তাঘাট।

বর্ষা মৌসুমে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বন্যা এবং এই নদী পথ দিয়ে প্রতিদিন ইঞ্জিন নৌকা চলাচলের ফলে প্রতিনিয়ত নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে নদী তীরবর্তী সাধারণ মানুষ। ইতোমধ্যে নদী তীরবর্তী বসবাসরত কৃষকদের বাড়ী, গাছপালা ও কৃষি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।

বড়গাং-নয়াগাং নদী, নাপিত খাল, সারীনদী ও কলসী নদীর তীরবর্তী লক্ষীপুর-ডুলটিরপার গ্রামীন রাস্তার বিভিন্ন অংশে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। অনেক জায়গার নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে কৃষি জমিতে বালু প্রবেশ করে ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। এলাকার সাধারণ মানুষ নদী ভাঙ্গনের কবলে পরিবার পরিজন নিয়ে নদীর উভয় তীরবর্তী বাসিন্দাগণ আত্মংকের মধ্যে রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাগণ অভিযোগ করেছেন, বন্যার পানিতে নদী ভাঙ্গনের পাশাপাশি প্রতিদিন ডুলটিরপার এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার ভারতীয় চোরাইপণ্য বহনকারী বড় বড় অন্তত ৩০/৪০ টি ইঞ্জিন নৌকা চলাচলের ফলে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী উপজেলা চেয়ারম্যান ও নিবার্হী অফিসারের নিকট ইঞ্জিন নৌকা চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বড়গাং-নয়াগাং নদী, নাপিত খাল, সারী নদী ও কলসী নদী দিয়ে প্রতিদিন রাতে এসব ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে চেরাকারবারীরা ভারতীয় অবৈধ গাড়ীর টায়ার, স্প্রীং, পাত, মদ, ইয়াবা ট্যাবলেট, ভারতীয় বিভিন্ন ব্যান্ডের সিগারেট, চা-পাতা, চকলেট, সুপারী, ভারতীয় শাড়ী, মোবাইল সামগ্রী নৌকা বুঝাই করে চলাচল করছে। ছোট নদী পথ দিয়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলাচলের ফলে সৃষ্ট টেউ এর কারনে নদীর দুই তীরের রাস্তা ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলিন হচ্ছে। নদীর তীরবর্তী প্রায় ৩শত পরিবার প্রশাসনের নিকট এসব ইঞ্জিন নৌকা চলাচল বন্ধের দাবী জানান।

এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে জৈন্তাপুর মডেল থানার এস.আই আজিজুর রহমান ১৮ আগস্ট রবিবার সরেজমিন পরিদর্শন করেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নদীর উভয় পারের ভাঙ্গন অংশে ব্লক স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
 
জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এখলাছুর রহমান জানান, জৈন্তাপুর ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা হাওর ও নদী বেষ্টিত হওয়ার পাহাড়ী ঢল ও বন্যার পানিতে নদী ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। নদী ভাঙ্গনের শিকার মানুষের বসত ভিটা ও কৃষি জমি রক্ষা করতে তিনি নদীর ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধঁ স্থাপন কাজে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল আহমদ বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ী ঢল ও বন্যার পানিতে নদী ভাঙ্গনের শিকার হতে হচ্ছে। নদী তীরবর্তী জনগনের বসতভিটা রক্ষায় স্থায়ী ভাবে সমাধান করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধঁ নিমার্ণ কাজে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। জৈন্তাপুর ও নিজপাট ইউনিয়নের লক্ষীপুর, কেন্দ্রী, আমবাড়ী, নলজুরী, রাংপানি,সারী নদী, লালাখার সহ অন্যান্য এলাকায় নদী ভাঙ্গন রোধ করতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।

লক্ষীপুর গ্রামের বাসিন্ধা হুমায়ুন কবির, দিলাল আহমদ, নজির আহমদ জানান, বর্ষার মৌসুমে পরিবার পরিজন নদী ভাঙ্গনের ভয়ে আতংকের মধ্যে বসবাস করতে হয়। ইতোমধ্যে গ্রামের ২টি সামাজিক কবরস্থান, গ্রামীন রাস্তা নদী গর্ভে চলে গেছে। গ্রামের জনসাধারনের সমন্বয়ে বাশেঁর খুটি দিয়ে রাস্তা ও মানুষের বসতভিটা রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইঞ্জিন নৌকা চলাচলের কারনে ভাঙ্গন রোধ করা যাচ্ছে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত